এক ফল, অসীম উপকার! হালা নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য যা আপনি জানেন না
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণ ও উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মানো হালা ফল (Pandanus tectorius) একেবারে অনন্য। লালচে, কমলা বা হলদেটে রঙের এই ফল দেখতে যেন সুতো বা রশির মতো স্তরবিন্যাসে ভাগ হয়ে গেছে। হাওয়াই, ফিলিপাইন, মিক্রোনেশিয়া ও প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জে হালা ফলের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে খাদ্য, চিকিৎসা এবং সাংস্কৃতিক রীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। হালা ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো - tectorius এবং পরিবার হলো পান্দানাচেয়াএ। এর প্রজাতি -Tropic & subtropic coastal regions. ফলের আকৃতি স্তরবিন্যাসে বিভক্ত প্রতিটি অংশ খাওয়ার যোগ্য।
মূল বৈশিষ্ট্য:
⇨ ফল ও পাপড়ি: লালচে বা কমলা, সুতো সদৃশ অংশে বিভক্ত
⇨ অভ্যন্তরীণ গঠন: প্রতিটি অংশে ছোট বীজ এবং খাদ্যতত্ত্ব উপাদান সংরক্ষিত।
⇨ উপাদান: ফাইবার, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
⇨ ফল জৈবিকভাবে ভাঙা সহজ এবং হজমে সহায়ক, যা প্রাচীন থেকে আধুনিক খাদ্যতালিকায় এটিকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে।
হালা ফলের খাদ্য ও ব্যবহার
১. সরাসরি খাওয়া যায়। লাল অংশ কেটে মিষ্টি ও হালকা টক স্বাদে খাওয়া হয়। গরম জল বা ছানার সঙ্গে মিশিয়ে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
২. রস ও জুস হিসেবে খাওয়া যায়। শুকনো বা তাজা হালা ফলের রস তৈরি করে তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ হাইড্রেশন ড্রিঙ্ক হিসেবে পান করে অনেকেই । এর স্বাদ হালকা মিষ্টি-টক। এটি ডিটক্সিফিকেশন ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. রান্না করে ও মিষ্টি খাবার পরিবেশনে কাজে লাগে। দক্ষিণ-প্যাসিফিক অঞ্চলে হালা ফল পুডিং বা কেকের মধ্যে শুকনো বা ভাজা অংশ যোগ করা হয়।এছাড়া চা বা পানীয়ের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। আবার ফাইবার সমৃদ্ধ হালকা স্ন্যাকসও তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৪. ফাইবার উৎস হিসেবে গ্রহণযোগ্য। ফলের সুতো সদৃশ অংশে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
স্বাস্থ্যগুণ-
⇨ ফাইবার: হজম শক্তি ও অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে
⇨ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে কোষ সুরক্ষা
⇨ ভিটামিন সি: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
⇨ ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম: হাড় ও পেশী সুস্থ রাখে
⇨ ফেনোলিক যৌগ: প্রদাহ হ্রাস ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
⇨ গবেষণায় দেখা গেছে, হালা ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা হার্ট-হেলথ ও ডায়াবেটিস প্রিভেনশনে ভূমিকা রাখে।
পরিবেশ ও প্রজনন-
হালা ফল প্রধানত উষ্ণ, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মায়।এ গাছের বৈশিষ্ট্য হলো - উঁচু মূল, দীর্ঘ পাতার ক্রাউন, সৈকতের ক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে।
এর প্রজনন হয়, বীজ ও অংশিক কাটা থেকে নতুন গাছ জন্মানোর মাধ্যমে। ফলের ফাইবারযুক্ত গঠন স্থানীয় পরিবেশের প্রাণীদের খাদ্য সরবরাহ করে, ফলে এটি বাস্তুসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক গবেষণায় হালা ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকারিতা দেখা গেছে। খাদ্য ও হারবাল চিকিৎসায় সম্ভাবনা: হজম, ডায়াবেটিস, হার্ট-হেলথ ও রোগপ্রতিরোধ। খাদ্য প্রস্তুতিতে ফাইবার বৃদ্ধি এবং পুষ্টি ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে হালা ফলের ব্যবহার।আন্তর্জাতিক গবেষণা: হালা ফলের রস ও নির্যাস থেকে নতুন সুস্থ খাদ্য, পানীয় ও হেলথ ফুড প্রোডাক্ট তৈরির সম্ভাবনা
আন্তর্জাতিক বাজার ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা-
হালা ফল বর্তমানে দক্ষিণ-প্যাসিফিক এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় বাজারে জনপ্রিয়। রেস্তোরাঁ ও হেলথ ফুড বাজারে চাহিদা বাড়ছে- প্রসেসড পণ্য, যেমন- জুস, পুডিং, ডেজার্ট ও ফাইবার স্ন্যাক্স এর। সম্ভাব্য রপ্তানি বাজার - ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা, যেখানে exotic fruits এর চাহিদা বাড়ছে।
সতর্কতা-
◑ অতিরিক্ত সেবনে হজমে কিছু সমস্যা হতে পারে
◑ গর্ভবতী বা কোমর্বিড রোগীর ক্ষেত্রে সেবনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন
এ ফলটি কেবল দৃষ্টিনন্দন নয়, এটি সুতো সদৃশ গঠন, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ। দক্ষিণ-প্যাসিফিকের আঞ্চলিক খাদ্যসংস্কৃতি থেকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পর্যন্ত হালা ফলের গুরুত্ব বহুমাত্রিক। এটি প্রমাণ করে যে, প্রকৃতির এক সাধারণ ফলও হতে পারে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিতে অমূল্য সম্পদ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।