ঘূর্ণিঝড় কালমেগি-র তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ফিলিপাইন

ঘূর্ণিঝড় কালমেগি-র তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ফিলিপাইন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ঘূর্ণিঝড় 'কালমেগি' এর আঘাতে ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। টাইফুনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে বহু এলাকা, এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৮ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বিবেচনায় ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরের দিকে 'কালমেগি' ফিলিপাইনে আঘাত হানতে শুরু করে এবং বুধবারের মধ্যে এর তাণ্ডব আরও বৃদ্ধি পায় বলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে ফিলিপিনের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এএফপি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের মধ্যাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ সেবু দ্বীপের প্রায় সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে গাড়ি, ট্রাক এবং বিশাল আকারের কনটেইনারও।

সেবুর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেজান্দ্রো এএফপিকে টেলিফোনে জানান, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ২১ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, টাইফুনের প্রভাবে সৃষ্ট মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ জনে। বেশিরভাগ মানুষই পানিতে ডুবে মারা গেছেন। কালমেগির আঘাত হানার আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রাদেশিক রাজধানী সেবু সিটির আশপাশের এলাকায় ১৮৩ মিলিমিটার (সাত ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা মাসিক গড় ১৩১ মিলিমিটারের চেয়ে অনেক বেশি।

সেবুর প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই নজিরবিহীন। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু... প্রকৃত ঝুঁকির কারণ হচ্ছে পানি। বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।“

স্থানীয় দুর্যোগ কর্মকর্তা এথেল মিনোজা জানিয়েছেন, সেবু সিটিতে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মীরা এখনও পানিবন্দি মানুষদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
লেইতে প্রদেশে নিজ বাড়িতে পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধ এবং বোহলে এলাকায় গাছচাপা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সেবু সিটির বাসিন্দা ডন ডেল রোসারিও (২৮) ঝড়ের ভয়াবহতা বর্ণনা করে বলেন, “পানি খুব দ্রুত উঠছিল। ভোর ৪টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়; মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না। আমি এখানে ২৮ বছর ধরে আছি। এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু কখনও দেখিনি।“

ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আগাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা আলেজান্দ্রো নিশ্চিত করেন।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকালের দিকে ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করার সময় একটি উড়োজাহাজ উত্তর মিন্দানাও দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে।
দেশটির সামরিক বাহিনীর পূর্ব মিন্দানাও কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রবল ঝড়ের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়ে উপকূলীয় শহর বুতুয়ানের পথে থাকা সুপার হিউই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনায় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলছে এবং বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কেউ জীবিত আছেন কিনা, তা এখনও জানা যায়নি।


স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের বিশেষজ্ঞ চারম্যান ভারিলা জানিয়েছেন, টাইফুন কালমেগি বর্তমানে ফিলিপাইনের পশ্চিমাঞ্চলের ভিসায়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করছে। ওই এলাকায় ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বইছে এবং দমকা হাওয়ার গতি ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। এতে অনেক এলাকায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে।


বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণ মহাসাগরগুলো টাইফুনকে দ্রুত তীব্র করে তুলছে। একইসঙ্গে উষ্ণ বায়ুমণ্ডলের কারণে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারি বৃষ্টিপাতও ঘনঘন দেখা দিচ্ছে।

ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ভারিলা জানান, টাইফুন কালমেগির মধ্য দিয়ে দেশটি ইতোমধ্যে সেই বার্ষিক গড় সংখ্যায় পৌঁছে গেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিন থেকে পাঁচটি ঝড় আসার আশঙ্কা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকেও দেশটি ৬.৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুপার টাইফুন রাগাসার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

সেবুর তথ্য কর্মকর্তা রন রামোস বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যারা তাঁবুতে বাস করছিলেন, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ