বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন? দোষটা আপনার নয়, জানুন 'Learned Helplessness'-এর আসল কারণ!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই যেখানে বারবার চেষ্টা করেও ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী আসে না। চাকরির ইন্টারভিউ, পরীক্ষা, ব্যবসায়িক উদ্যোগ বা সম্পর্ক, পরাজয় বারবার আমাদের আত্মবিশ্বাসকে ক্ষুণ্ণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই মনে করতে শুরু করে, "চেষ্টা করলেও লাভ নেই, আমার চেষ্টা কোনো প্রভাব ফেলবে না।" মনোবিজ্ঞানীরা এটিকে চিহ্নিত করেছেন "Learned Helplessness" বা শেখা আত্মসমর্পণ ভাব" নামে। শেখা আত্মসমর্পণ ভাব কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, এটি আমাদের সামাজিক, পেশাগত এবং দৈনন্দিন জীবনের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে।
Learned Helplessness কী?
১৯৬০-এর দশকে সাইকোলজিস্ট মার্টিন সেলিগম্যান একটি পরীক্ষা চালান। কুকুরকে এমন পরিস্থিতিতে রাখা হয়, যেখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই এবং বারবার ব্যর্থতা ঘটে। ফলে কুকুরগুলো এক পর্যায়ে চেষ্টা বন্ধ করে দেয়। মস্তিষ্কে "চেষ্টা করলেও কোনো প্রভাব নেই" এমন একটি ধারণা তৈরি হয়।
মানুষের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ব্যর্থতার পর অনেকেই মনে করতে শুরু করে, "আমি চেষ্টা করলেও কোনও পরিবর্তন হবে না"। এটি একটি মানসিক চক্র তৈরি করে যা নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে বাধা দেয়।
কেন এটি ঘটে?
⇨ নিয়ন্ত্রণের অভাবের অনুভূতি: যখন মানুষ কোন কাজ বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন মনে হয়, চেষ্টা করলেও ফলাফল একই রকম হবে।
⇨ বারবার ব্যর্থতার প্রভাব:প্রতি ব্যর্থতা মস্তিষ্কে 'চেষ্টার ব্যর্থতার স্মৃতি' তৈরি করে। নতুন পরিস্থিতিতে এটি নেতিবাচক চিন্তা এবং আতঙ্ককে শক্তিশালী করে।
⇨ আত্মসমালোচনা ও নেতিবাচক চিন্তাভাবনা: ব্যর্থতার সঙ্গে যুক্ত নেতিবাচক অভিজ্ঞতা ব্যক্তি নিজের উপর বিশ্বাস হারাতে সাহায্য করে।
⇨ পরিবেশগত ও সামাজিক চাপ: পরিবারের প্রত্যাশা, কঠোর সমালোচনা, অথবা সহায়তার অভাব শেখা আত্মসমর্পণ ভাবকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
লক্ষণসমূহ:
➤ মানসিক লক্ষণ:
⇨ নতুন কাজ শুরু করতে দ্বিধা বা ভয়
⇨ নিজের ক্ষমতার ওপর আস্থা হারানো
⇨ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করা
⇨ দীর্ঘস্থায়ী হতাশা বা অনিশ্চয়তার অনুভূতি
➤ শারীরিক লক্ষণ:
⇨ নিয়মিত ক্লান্তি
⇨ ঘুমের সমস্যা
⇨ মাথাব্যথা, হজমজনিত সমস্যা
➤ সামাজিক ও পেশাগত লক্ষণ:
⇨ নতুন সুযোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখা
⇨ সম্পর্ক ও কর্মক্ষেত্রে কম উদ্যোগ নেওয়া
মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস ও অ্যামিগডালা অংশগুলো স্মৃতি, আবেগ ও চাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। বারবার ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা নেতিবাচক স্মৃতি ও আতঙ্ককে শক্তিশালী করে।
দীর্ঘমেয়াদী চাপ ও ব্যর্থতার ফলে মস্তিষ্কের স্ট্রেস হরমোন (কোর্টিসল) বৃদ্ধি পায়, যা উদ্দীপনা কমায় এবং নতুন উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়।আবার ডোপামিন স্বীকৃতি ও সাফল্যের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যর্থতার ফলে ডোপামিন রিলিজ কমে যায়, ফলে নতুন চেষ্টা নেওয়ার আগ্রহ কমে।
প্রভাব
◑ Learned Helplessness কেবল মানসিক নয়, সামাজিক ও পেশাগত জীবনের উপরও প্রভাব ফেলে।
◑ চাকরির ইন্টারভিউ বা পরীক্ষায় কম উদ্যোগ নেওয়া
◑ নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণে দ্বিধা
◑ সম্পর্ক ও বন্ধুত্বে দূরত্ব
◑ দীর্ঘমেয়াদে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ ও আত্মসম্মান হ্রাস
◑ কিছু ক্ষেত্রে, হতাশা থেকে মানুষ মাদক বা অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন, যা সমস্যা আরও বাড়ায়।
প্রতিকার ও নিরাময়:
⇨ সচেতনতা তৈরি করুন: নিজেকে বোঝান যে শেখা আত্মসমর্পণ ভাবের শিকার, এবং এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।
⇨ ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ গ্রহণ: প্রতিদিন ছোট সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ফেরান।
⇨ নেতিবাচক চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করুন:নিজেকে বলুন,"চেষ্টা করব, ব্যর্থ হলেও শিখব।" ব্যর্থতাকে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখুন।
⇨ সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করুন: পরিবার, বন্ধু বা থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা মানসিক চাপ কমায়।
⇨ সাইকোথেরাপি ও কগনিটিভ আচরণগত পদ্ধতি (CBT): CBT ব্যবহার করে নেতিবাচক চিন্তার চক্র ভাঙা যায় এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
⇨ সুষম জীবনধারা: পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
Learned Helplessness শেখা মানসিক অভ্যাস, যা চর্চা ও সচেতনতার মাধ্যমে ভাঙা যায়।ব্যর্থতা শেষ নয়; এটি কেবল নতুন শেখার সুযোগ। ছোট অর্জন, ইতিবাচক চিন্তা, সহায়ক মানুষ ও পেশাদার সহায়তা এই চারটি হাতিয়ার আপনাকে চেষ্টার পথে ফিরে আসতে সাহায্য করবে।মনে রাখবেন,
ব্যর্থতা শেষ নয়,এটি নতুন শেখার সূচনা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।