রাশিয়াকে প্রতিরোধে বাইডেনের নতুন নিষেধাজ্ঞা, কতটা ফলপ্রসূ হবে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
রাশিয়ার জ্বালানি খাতে রাজস্ব আয় কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিলেও এবারের পদক্ষেপটি সবচেয়ে কঠোর বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এবার দুই শতাধিক কোম্পানি ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে ব্যবসায়ী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিমা কোম্পানি এবং শতাধিক তেলবাহী ট্যাংকার অন্তর্ভুক্ত। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম যুক্তরাজ্য সরাসরি রাশিয়ার জ্বালানি কোম্পানি গাজপ্রম এবং অন্যান্য কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তাদের যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতা কমবে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, পুতিনের কাছ থেকে যত বেশি রুবল কেড়ে নেওয়া যাবে, রাশিয়া ততই দুর্বল হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার যে ব্যবস্থাগুলো ঘোষণা করেছে, সেগুলো আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করতে হলে ট্রাম্প প্রশাসনকে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া, রাশিয়ার তেল কারা আইনিভাবে কিনতে পারবে, সে বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, রাশিয়ার গোপন তেলবাহী ট্যাংকারগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে, যেগুলো বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহ করে চলেছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে রাশিয়ার তেল পরিবহন ও আর্থিক খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কঠিন পরিস্থিতিতে রাখার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, রাশিয়া চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর মাধ্যমে তেল বিক্রি করে অর্থনীতি চাঙা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে দেশটিতে গ্যাসের দাম গ্যালনপ্রতি তিন থেকে চার সেন্ট বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, রুশ অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে জ্যানেট ইয়েলেন আশাবাদী। এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে, বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রভাব সীমিত। কারণ, রাশিয়ার তেলের সরবরাহ কমলেও বিশ্ববাজারে এর প্রভাব তেমন পড়েনি। বরং, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যা তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ এখন আগের চেয়ে স্থিতিশীল। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদন ও রপ্তানি রেকর্ড উচ্চতায় রয়েছে, যা বাজারে রাশিয়ার তেলের সরবরাহ কমলেও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকদের ধারণা, ২০ জানুয়ারির পর ট্রাম্প প্রশাসনকে নতুন করে ভাবতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আদৌ রাশিয়ার অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে।