ক্লাসরুমে বিপ্লব: Smart Board থেকে Smart Brain, শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন!

ক্লাসরুমে বিপ্লব: Smart Board থেকে Smart Brain, শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শিক্ষার প্রথাগত পদ্ধতি ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। কালো বোর্ড আর চক-এর যুগ আজ অতীত। স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে এখন যেটা দেখতে পাওয়া যায়, সেটা হলো স্মার্ট বোর্ড, এক ধরনের ইন্টার‍্যাক্টিভ প্ল্যাটফর্ম যা শুধু শেখায় না, শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শুধু প্রযুক্তি বসানোই কি যথেষ্ট? না, আসল পরিবর্তন ঘটছে যখন শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ক 'Smart Brain' হয়ে ওঠে, যেখানে শেখা মানে শুধু তথ্য গ্রহণ নয়, বিশ্লেষণ, যুক্তি, সমাধান এবং সৃজনশীল চিন্তা।

স্মার্ট বোর্ডের এক বড় সুবিধা হলো এটি কেবল পড়ানোর যন্ত্র নয়-এটি শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।ক্লাসে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তারা শুধু হাত উঁচু করে নয়, সরাসরি বোর্ডে লিখে বা টাচ স্ক্রিনে চিহ্ন দিয়ে যুক্ত হয়।

গণিত বা বিজ্ঞান ল্যাবে ভার্চুয়াল সিমুলেশন দিয়ে জটিল ধারণা সহজে বোঝানো যায়। ইতিহাস বা ভূগোলের ক্লাসে আর্টিফিশিয়াল রিয়েলিটি বা 3D মানচিত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীকে শেখানো হয় সময় ও স্থান সম্পর্কিত ধারণা। এই সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কেবল মুখস্থ করে না, বুঝতে শেখে। তাই প্রযুক্তি শুধুই মাধ্যম, বাস্তব শিক্ষা আসে মস্তিষ্কের সক্রিয়তায়।
 

ইন্টার‍্যাক্টিভ লার্নিং-এর মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ককে সচল রাখা। গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থী যখন শারীরিকভাবে অংশগ্রহণ করে, টাচ, ড্র্যাগ বা ক্লিকের মাধ্যমে উত্তর দেয়, তখন-

⇨ মস্তিষ্কের নিউরন সংযোগ শক্তিশালী হয়,

⇨ দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি গঠন হয়,

⇨ সমস্যা সমাধান ক্ষমতা বাড়ে এবং 

⇨ সৃজনশীল চিন্তা বিকশিত হয়।
 

স্মার্ট বোর্ড তাই হয়ে উঠছে কেবল যন্ত্র নয়, বরং একটি শিক্ষার ট্রিগার।

স্মার্ট বোর্ড এবং ইন্টার‍্যাক্টিভ লার্নিং শিক্ষককে পরামর্শদাতা বা গাইডে পরিণত করেছে। শিক্ষক আর শিক্ষার্থী একসাথে ক্লাসে অংশ নেয়, প্রশ্ন আসে, উত্তর আসে, আর সমস্যার সমাধান হয়, সবই লাইভ। এটি শুধু শেখার গতিকে ত্বরান্বিত করে না, শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়।এক সময় শিক্ষককে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ মনে হতো, এখন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করতে উৎসাহী হয়। আর এই প্রশ্ন করাই হচ্ছে শেখার আসল চাবিকাঠি।

মস্তিষ্ক গবেষকরা বলছেন, শেখার সময় অ্যাক্টিভ ইনভলভমেন্ট (active involvement) থাকলে স্নায়ুবিকাসিক (neural plasticity) বাড়ে। টাচ, ভিজ্যুয়াল, অডিও এবং রিয়েল-টাইম ফিডব্যাক-এই সব উপাদান একত্রে নতুন নিউরাল কনেকশন তৈরি করে, যা স্মৃতি ও সমস্যার সমাধান ক্ষমতা দুইই শক্তিশালী করে। ফলে, Smart Board কেবল প্রযুক্তি নয়, এটি একটি মস্তিষ্ক-বিকাশকারী যন্ত্র, যা শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতার প্রবাহকে ধারায় রাখে।

বিশ্বের অনেক উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা-ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান- ইন্টার‍্যাক্টিভ লার্নিংকে কেন্দ্র করে শিক্ষাকৌশল তৈরি করছে। শুধু তথ্য প্রদান নয়, শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ককে সক্রিয় করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।এখন ক্লাসরুম মানে শুধু পাঠ্য পড়া নয়, এটি চিন্তাভাবনার এক সক্রিয় ল্যাব, যেখানে শিক্ষার্থী শেখে নিজে প্রশ্ন করতে, নিজে সমাধান করতে এবং নিজে আবিষ্কার করতে।

Smart Board-এর আগমন শুধু প্রযুক্তি নয়; এটি শিক্ষার এক দূরদর্শী রূপান্তর।
ক্লাসরুমে বসে শিক্ষার্থী শুধু পড়বে না, সে অংশগ্রহণ করবে, বিশ্লেষণ করবে, প্রশ্ন করবে। ফলে "Smart Brain" তৈরি হয়, যা কেবল তথ্য নয়, চিন্তা, আবিষ্কার, সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বিকশিত করে। এক কথায়, Smart Board থেকে Smart Brain-এটাই ২১ শতকের শিক্ষার নতুন সংজ্ঞা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ