চুলের ডগা ফাটা নিয়ে যত ভুল ধারণা-বিশেষজ্ঞরা জানালেন আসল কারণ ও সমাধান!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চুল আমাদের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। কিন্তু এই সৌন্দর্যের বড় শত্রু হলো স্প্লিট এন্ড বা চুলের ডগা ফাটা। এটি শুধু চুলকে নিস্তেজ করে না, বরং ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়, ফলে চুলের দৈর্ঘ্যও কমে যায়। প্রতিদিনের ধুলো, রোদ, রাসায়নিক শ্যাম্পু, হিট টুলস আর পর্যাপ্ত যত্নের অভাবে চুলের কিউটিকল স্তর ভেঙে যায়, তখনই শুরু হয় এই ডগা ফাটার প্রক্রিয়া। আজকাল বাজারে নানা ব্র্যান্ডের তেল ও সিরাম স্প্লিট এন্ড রিপেয়ার বা ড্যামেজ কন্ট্রোল নামে জনপ্রিয়। কিন্তু এই প্রোডাক্টগুলো আসলে কীভাবে কাজ করে? এগুলোর পেছনের বিজ্ঞানটা বোঝা খুবই জরুরি।
প্রাচীনকাল থেকেই নারীরা তেলকে চুলের সুরক্ষার প্রধান উপায় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। আধুনিক গবেষণাও দেখায়, তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন চুলের কেরাটিন স্তরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে শক্তিশালী প্রতিরোধ দেয়।
◑ নারকেল তেল এর মধ্যে থাকা লরিক অ্যাসিড (Lauric Acid) চুলের প্রোটিনের সাথে গভীর বন্ধন তৈরি করে। এর অণু আকার ছোট হওয়ায় এটি সহজেই চুলের ভেতরে ঢুকে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং কিউটিকল স্তর ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
◑ আরগান তেল, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি রুক্ষতা কমায় ও চুলের নমনীয়তা বাড়ায়।
◑ জোজোবা তেল, চুলের প্রাকৃতিক তেলের সঙ্গে গঠনে মিল থাকায় এটি মাথার ত্বক আর্দ্র রাখে ও ফাটল কমায়।
তেল শুধু পুষ্টিই দেয় না, এটি চুলের ওপর একধরনের প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা ঘর্ষণ কমিয়ে দেয়। নিয়মিত তেল ব্যবহার করলে ব্রাশ বা চিরুনির ঘর্ষণে চুলের ডগা ফাটার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
সিরাম: চুলের সিরাম আসলে একধরনের স্মার্ট সায়েন্স, যেখানে ব্যবহৃত হয় সিলিকন, প্রোটিন কমপ্লেক্স, এবং হালকা পলিমার যৌগ। এর কাজ হলো চুলের পৃষ্ঠে একটি মসৃণ কোটিং তৈরি করা। সিলিকন যৌগ-যেমন, ডাইমেথিকন বা অ্যামোডাইমেথিকন চুলের কিউটিকল স্তরকে একত্রে বেঁধে রাখে। ফলে ফাটা অংশ সাময়িকভাবে 'সিল' হয়ে যায় এবং চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখায়। এই প্রলেপটি আলোর প্রতিফলনও বাড়ায়, যার ফলে চুল দেখতে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল লাগে। অনেক সিরামে এখন কেরাটিন পেপটাইড ও বায়োটিন এক্সট্র্যাক্ট যোগ করা হয়, যা চুলের অভ্যন্তরে গিয়ে কিছুটা কাঠামোগত শক্তি দেয়। যদিও এটি স্থায়ী সমাধান নয়, তবে নিয়মিত ব্যবহার চুলের ভঙ্গুরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে, চুল একবার ফেটে গেলে সেটিকে সত্যিকারের জোড়া লাগানো সম্ভব নয়। কারণ চুলের ডগা মৃত কোষ দিয়ে তৈরি। এটি নতুন করে নিজেকে মেরামত করতে পারে না। তাই স্প্লিট এন্ড রিপেয়ার বলতে বোঝায় রক্ষণ ও প্রতিরোধ, নিরাময় নয়।
তেল বা সিরাম ব্যবহার করলে চুলের পৃষ্ঠে এমন একটি স্তর তৈরি হয় যা আর্দ্রতা ধরে রাখে, ঘর্ষণ ও তাপজনিত ক্ষতি কমায়, ফলে নতুন করে স্প্লিট এন্ড তৈরি হয় না। অর্থাৎ এটি একটি প্রতিরোধমূলক বিজ্ঞান।
খাদ্য ও অভ্যন্তরীণ যত্নের ভূমিকা-
বাহ্যিক যত্ন যেমন জরুরি, তেমনি অভ্যন্তরীণ পুষ্টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। চুলের প্রোটিন গঠনের মূল উপাদান হলো অ্যামিনো অ্যাসিড, যা পাওয়া যায় ডিম, ডাল, মাছ, দুধ ও বাদামে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, জিঙ্ক ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ভঙ্গুরতা কমায়। যদি শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকে, তাহলে যত দামি সিরাম বা তেলই ব্যবহার করা হোক না কেন, ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যত্নের সমন্বয়ই হলো চুলের প্রকৃত যত্নের মূল রহস্য।
যত্নের বাস্তব পদ্ধতি:
১. সপ্তাহে অন্তত ২–৩ দিন হালকা গরম তেল দিয়ে মাথায় মালিশ করুন।
২. হেয়ার ড্রায়ার, কার্লার বা স্ট্রেইটনার কম ব্যবহার করুন।
৩. সালফেট ও অ্যালকোহলযুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুন।
৪. প্রতিবার ধোয়ার পর হালকা সিরাম ব্যবহার করুন, বিশেষ করে ডগায়।
৫. প্রতি ৬–৮ সপ্তাহ অন্তর ডগা ছেঁটে দিন, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ না বাড়ে।
চুলের ডগা ফাটা রোধের লড়াই শুধু বাহ্যিক প্রলেপের নয়, এটি একধরনের ভারসাম্যের শিল্প। তেলের প্রাকৃতিক পুষ্টি ও সিরামের প্রযুক্তিগত সুরক্ষা একত্রে কাজ করলে চুল ফিরে পেতে পারে তার প্রাকৃতিক দীপ্তি, শক্তি ও প্রাণ। তেল হলো যত্নের ঐতিহ্য, সিরাম হলো আধুনিকতার বিজ্ঞান।
এই দুইয়ের সংমিশ্রণেই লুকিয়ে আছে চুলের ডগা ফাটা রোধের বাস্তব, বৈজ্ঞানিক উত্তর।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।