লজিকাল না ক্রিয়েটিভ-দুই-ই যদি হতে চান, মস্তিষ্ককে এমনভাবে ট্রেন করুন!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা প্রায়ই একটি কথা শুনি,"ওর মস্তিষ্কটা খুব লজিক্যাল", বা "ও খুব ক্রিয়েটিভ!" কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কের একপাশকে কাজে লাগিয়ে কেউই সম্পূর্ণ চিন্তাশক্তি অর্জন করতে পারে না। মানব মস্তিষ্ক এমনভাবে গঠিত যে, বাম দিক (Left Hemisphere) এবং ডান দিক (Right Hemisphere) একে অপরের পরিপূরক। এদের সমন্বয়ই আমাদের বিশ্লেষণ, কল্পনা, শেখা ও উদ্ভাবনের ক্ষমতা নির্ধারণ করে।চলুন দেখে নেওয়া যাক এই দুই দিকের পার্থক্য, তাদের কাজ, এবং কিভাবে উভয়কে সক্রিয় করে আমরা চিন্তার পরিধি বিস্তৃত করতে পারি।
মস্তিষ্ক
নিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেন, মস্তিষ্কের বাম দিক মূলত যুক্তি, বিশ্লেষণ, ভাষা ও সংখ্যার কাজে দক্ষ। আমরা যখন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করি, কোনো যুক্তিপূর্ণ যুক্তি তৈরি করি বা বাক্য গঠন করি, তখন বাম দিকই সক্রিয় থাকে। এটি ধাপে ধাপে চিন্তা করে, স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে চায়।
অন্যদিকে ডান দিক কাজ করে কল্পনা, সৃজনশীলতা, আবেগ ও শিল্পবোধের ক্ষেত্রে। আমরা যখন সংগীত শুনে অনুভব করি, রঙের মিশ্রণে কিছু আঁকি বা গল্প কল্পনা করি, তখন ডান দিক প্রধান ভূমিকা রাখে। এটি আবেগ ও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তথ্য গ্রহণ করে, পুরো চিত্রটি একসাথে বোঝার চেষ্টা করে।তবে বাস্তব সত্য হলো, এই দুই দিক একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আমাদের প্রতিটি কাজেই দুই দিকই একসাথে সক্রিয় থাকে, শুধু প্রাধান্যটা ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন স্থপতি যখন ভবনের নকশা আঁকেন, তখন বাম দিক যুক্তির কাঠামো ধরে রাখে, আর ডান দিক নান্দনিকতা ও কল্পনা যোগ করে।
লজিক ও ক্রিয়েটিভিটি একসাথে বাড়ানোর উপায়:
১. "Balanced Brain" অনুশীলন করুন:প্রতিদিন এমন কিছু অভ্যাস করুন যা দুই দিককেই কাজে লাগায়। যেমন: সকালে গণিতের পাজল বা Sudoku সমাধান (বাম দিক সক্রিয়), বিকেলে আঁকা, সংগীত বা লেখালেখি (ডান দিক সক্রিয়)। নিয়মিত এই পরিবর্তন মস্তিষ্কের স্নায়ুবন্ধনগুলো (neural pathways) শক্তিশালী করে।
২. নতুন অভিজ্ঞতা নিন: একঘেয়ে রুটিন মস্তিষ্ককে নিস্তেজ করে। নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, রান্না শেখা বা ভিন্ন সংস্কৃতি জানা-এগুলো নিউরনকে নতুনভাবে সংযুক্ত করে। প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের দুই পাশকে একসাথে কাজ করতে বাধ্য করে।
৩. মনোযোগ ও মেডিটেশন: নিয়মিত মেডিটেশন করলে মস্তিষ্কের কর্পাস ক্যালোসাম (Corpus Callosum), যা দুই দিককে সংযুক্ত করে। এতে লজিক্যাল চিন্তা ও ক্রিয়েটিভ ভাবনার মধ্যে দ্রুত তথ্য আদানপ্রদান ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ধ্যান করেন, তাদের সমস্যা সমাধান ও সৃজনশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা উভয়ই উন্নত।
৪. ডান ও বাম দিকের 'টাস্ক শিফটিং' চর্চা:একই কাজে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ আনুন। যেমন, কোনো প্রবন্ধ লেখার আগে প্রথমে তথ্য বিশ্লেষণ করুন (বাম মস্তিষ্ক), তারপর সেটিকে গল্পের আকারে সাজান (ডান মস্তিষ্ক)।এই শিফটিং অনুশীলন মস্তিষ্ককে নমনীয় করে তোলে, যা আধুনিক যুগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
৫. শরীরচর্চা : শরীরচর্চা রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা নিউরন সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
MRI ও fMRI স্ক্যান থেকে জানা যায়, মস্তিষ্কের দুই দিক আসলে কখনো আলাদা হয়ে কাজ করে না, বরং সবসময় সহযোগিতামূলকভাবে সক্রিয় থাকে।একটি বিখ্যাত গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মানুষ প্রতিদিন লজিক্যাল ও সৃজনশীল কাজ একসাথে করেন, তাদের কর্পাস ক্যালোসাম অংশে নিউরনের সংযোগ (white matter density) বেশি থাকে। এর মানে, তারা দ্রুত চিন্তা করতে, সৃজনশীলভাবে সমস্যার সমাধান দিতে এবং একসাথে একাধিক ধারণা নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হন।
মস্তিষ্ককে সমন্বিতভাবে ব্যবহারের সহজ কৌশল:
☞ কথা বলার আগে এক মুহূর্ত চুপ থেকে ভাবুন এতে যুক্তি ও অনুভূতি ভারসাম্যে থাকে।
☞ নিজের কাজ নিয়ে জার্নাল লিখুন, এতে বিশ্লেষণ ও কল্পনা উভয় জাগ্রত হয়।
☞ মাঝে মাঝে "Mind Mapping" করুন, একটি বিষয়ের কেন্দ্র থেকে চারদিকে ধারণা ছড়িয়ে দিন।
☞ বই পড়ুন, তারপর তা নিয়ে নিজের মত করে গল্প তৈরি করুন, লজিক ও কল্পনা মিলে যাবে।
লজিক ও ক্রিয়েটিভিটি, দুটিই মানুষের বিকাশের মূল চালিকা শক্তি। শুধুমাত্র যুক্তি দিয়ে জীবন চলে না, আবার শুধু কল্পনা দিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।বাম মস্তিষ্ক আমাদের চিন্তাকে কাঠামো দেয়, আর ডান মস্তিষ্ক সেটিতে রঙ ও জীবন যোগ করে। যখন এই দুই দিকের সমন্বয় ঘটে, তখনই জন্ম নেয় উদ্ভাবন, শিল্প, বিজ্ঞান ও নতুন ধারণার বিশ্ব। অতএব, মস্তিষ্ককে একমুখী নয় বরং সমন্বিতভাবে ব্যবহার করুন।লজিককে সঙ্গী করুন, ক্রিয়েটিভিটিকে ডানা দিন। তখনই চিন্তা হবে পূর্ণ, আর মানুষ হবে পরিপূর্ণ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।