আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর, যেদিন বাংলাদেশের প্রায় ২ লক্ষ মানুষ নিহত হয়

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর, যেদিন বাংলাদেশের প্রায় ২ লক্ষ মানুষ নিহত হয়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, যা বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে এক অন্যতম মহাপ্রলয় হিসেবে বিবেচিত। পূর্ব বাংলার লাখ লাখ মানুষ এই দুর্যোগে প্রাণহানি এবং বসতহারা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে প্রায় ২০-৩০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় ৫টি জেলা: বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আঘাত হানে। প্রায় ২ লক্ষ মানুষ নিহত এবং ১ লক্ষাধিক নিখোঁজ হয়। এছাড়া ২৪ লক্ষ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং ২ লক্ষ ৭৭ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা প্রায় ২,৩৩৮ বর্গমাইল, আর প্রাকৃতিক ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অনুমান করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগেই পূর্ব বাংলায় ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বড় ধরনের বন্যা আঘাত হানেছিল। তবে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার এবং আবহাওয়া বিভাগ যথাযথ সতর্কবার্তা প্রদান করেননি। রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সময়মতো কোনো বার্তা না দেওয়ায় উপকূলীয় মানুষদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। সরকারি উদাসীনতা এবং ত্রাণ ব্যবস্থায় ব্যর্থতার কারণে প্রাণহানির পরিমাণ অতীতের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এই উদাসীনতা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করে। ঘূর্ণিঝড়ের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের ফলাফল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত রাখে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্ব বাংলার নারী সমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বেগম সুফিয়া কামাল, বদরুন্নেছা আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী ও রাশেদা খানম প্রমুখ নারীরা ত্রাণ বিতরণ, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে নিরলস কাজ করেন। সমাজের অন্যান্য ছাত্র, যুবক ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে নারীরাও মানবিক দায়িত্ব পালন করে। এ ঘটনা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নারীদের ভূমিকার ধারাবাহিকতা তুলে ধরে।

বিশ্বব্যাপী সংবাদ মাধ্যমে এ দুর্যোগের খবর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দেশ সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। তবু, সরকারি উদাসীনতা এবং তথ্যের সীমিত প্রচারের কারণে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ প্রথম দিকে গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনা পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ ও সংহতির মনোভাবকে আরও দৃঢ় করে।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের এই মহাদুর্যোগ শুধু একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই নয়, এটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক ইতিহাসেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। পূর্ব বাংলার মানুষের সংগ্রাম, নারীর নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা একত্রে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ