ক্যাম্পাসের নিরাপদ পরিবেশ ও নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে রাকসুর নারীনেত্রীদের অঙ্গীকার

ক্যাম্পাসের নিরাপদ পরিবেশ ও নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে রাকসুর নারীনেত্রীদের অঙ্গীকার
  • Author, রাবি প্রতিনিধি
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসু) নবনির্বাচিত নারী নেত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আরও নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে তুলতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা ও কল্যাণের দিকগুলো বাস্তবায়ন করাই হবে তাদের প্রধান দায়িত্ব। নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে বলেও তারা জানান।

গতকাল জাগরণ নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়ে নব নির্বাচিত পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাসুমা ইসরাত মুমু বলেন, “আমাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট থেকেই তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেসব সমস্যা ও চাহিদা আছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই আমরা কাজ করছি।” 

তিনি জানান, ২৬ অক্টোবর শপথ গ্রহণের পর থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।অধিবেশন হওয়ার আগেই খালেদা জিয়া হলে পানির ফিল্টার বসানো হয়। আমরা চাই এক বছরের মধ্যেই নয়, তার আগেই সব কাজ বাস্তবায়ন করতে।

মুমু বলেন, “আমি যেহেতু পরিবেশ ও সমাজকল্যাণের দায়িত্বে আছি, তাই ক্যাম্পাসে থাকা খাবারের দোকানগুলো তদারকিতে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে কাজ করছি। খাবারের মান ঠিক না থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

রাকসুর অতীত ইতিহাসে কার্যকর বাস্তবায়নের ঘাটতি ছিল দীর্ঘদিনের অভিযোগ। মুমুর বক্তব্যে সেই পুরোনো ধারণা ভাঙার চেষ্টা স্পষ্ট। তিনি শুধু প্রতিশ্রুতি নয় বরং কাজের অগ্রগতি দেখিয়ে নেতৃত্বের নতুন ধারা তুলে ধরেছেন। 

নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই ক্যাম্পাসে এমন ব্যবস্থা থাকুক যাতে ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময় বিপদে পড়লে ছাত্র বা ছাত্রী প্রক্টরিয়াল বডির কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সহায়তা পেতে পারে। এছাড়াও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা মেডিকেল কর্নার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ জরুরি উপকরণ সহজে পাওয়া যাবে।” 

হিজাব বা নিকাব পরা নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর বিরূপ মনোভাবের বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুমু। তিনি বলেন, “আমরা সম্প্রতি দেখেছি, একজন শিক্ষক হিজাব নিয়ে মন্তব্য করে নারী শিক্ষার্থীদের অপমান করেছেন। আমরা চাই, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।” এছাড়া মাতৃত্বকালীন সময়ে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা শিথিলের দাবিও জানান তিনি।


একই সাথে রাকসুর ক্রীড়া ও খেলাধুলা বিষয়ক সম্পাদক নার্গিস আক্তার বলেন, “আমি যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমার ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারি, সেই পরিকল্পনাতেই এগোচ্ছি।” তিনি জানান, মেয়েদের জিমনেশিয়াম সংস্কার ও চালু করা, হবিবুর মাঠ সংস্কার, ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ ও বিভিন্ন দলীয় খেলা আয়োজন তাঁর কাজের অগ্রাধিকারে রয়েছে। 

নার্গিস বলেন, “রাবিতে মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ এখনো খুব সীমিত। জায়গা আছে, কিন্তু পরিবেশ নেই। আমরা মেয়েদের জন্য সেই পরিবেশ তৈরি করতে চাই। আমাদের প্রথম অধিবেশনে প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, পরবর্তী অধিবেশনে বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হবে।”

রাবিতে দীর্ঘদিন ধরে নারী শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা কার্যক্রম উপেক্ষিত ছিল। নার্গিসের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি এই অবস্থা বদলাতে চান। খেলাধুলার মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও অংশগ্রহণ বাড়ানো হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সংস্কৃতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

সাইবার বুলিং ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়েও তিনি সরব। নারীরা অনেক সময় সাইবার বুলিং ও কটুক্তির কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পায়। তবে যদি আমরা এই মানসিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারি, তাহলে সামনে নারী নেতৃত্ব আরও বাড়বে।

নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেও রাকসু পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান রাকসুর মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাইয়িদা হাফছা। তিনি বলেন, “রাবি মেডিকেলে সবসময় নারী ডাক্তার ও নার্সের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। গাইনী চিকিৎসক নিয়োগ ও ছাত্রী হল এলাকায় ফার্মেসি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে।”

মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সময় হেলথ ক্যাম্প ও সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করা হবে। “নারীদের জন্য নিরাপদ ও ভীতিহীন ক্যাম্পাস গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান কাজ।”

 রাকসুর নারী বিষয়ক সম্পাদক আরও জানান, মাতৃত্বকালীন উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শিথিল, পোশাক নিয়ে কটুক্তিকারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নিকাব পরিহিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। “রাবি মেডিকেলে নারী ডাক্তার ও গাইনী বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বাড়ানো হবে, যেন মেয়েরা নির্ভয়ে চিকিৎসা নিতে পারে।”

তিন নেত্রীর বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট যে তারা নারী ইস্যুকে আলাদা করে নয় বরং সামগ্রিক শিক্ষার্থী কল্যাণের সঙ্গে যুক্ত করে দেখছেন। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, খেলাধুলা ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা ইতিবাচক পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

রাকসুর ইতিহাসে এমন সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি আগে খুব একটা দেখা যায়নি। এটি শুধু নারী নেতৃত্বের পরিপক্বতা নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও সংস্কৃতি পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত। রাকসুর এই নতুন নেতৃত্বের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা শুধু নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের এক নতুন অধ্যায় দেখতে পাবে। শিক্ষা ও নেতৃত্বের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন তখন আর প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না হয়ে উঠবে বাস্তবতার অংশ।
 

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ