চাঁদাবাজির প্রভাবে বাড়ছে পণ্যমূল্য, বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার

চাঁদাবাজির প্রভাবে বাড়ছে পণ্যমূল্য, বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর ভূমিকার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁদের দাবি, চাঁদাবাজির অস্বাভাবিক দৌরাত্ম্য এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে (সাপ্লাই চেইন) ব্যাঘাত ঘটায় পণ্যের দাম লাগামছাড়া হচ্ছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।

এফবিসিসিআই-এর নবনিযুক্ত প্রশাসক আবদুর রহিম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ী নেতারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। শ্যামবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন অভিযোগ করেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চাঁদাবাজদের ‘দহরম-মহরম’ রয়েছে এবং ট্রাক থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর সময় নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়।
তিনি বলেন, এই চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারলে রোজার আগে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা সম্ভব।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, "চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারলে এক সপ্তাহের মধ্যে পণ্যের দাম কমে যাবে।" এছাড়াও, ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হলেও সরকার কেবল পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে।

বিভিন্ন পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে নেতারা সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেন। কাওরান বাজার কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সরকার সময়মতো পেঁয়াজের সংকট বুঝতে না পারায় ভোক্তার পকেট থেকে ১০০-২০০ কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। তিনি ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আরও বড় সংকটের আশঙ্কা করে অবিলম্বে আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান।

বাজারের ওমর ফারুক জানান, মিলগুলো তেলের দাম প্রতি লিটারে ৯ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে, যা রোজার আগে জনগণের ওপর বড় আঘাত হানবে।
চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, চিনির বাজার পুরোটা আমদানিকারকদের ওপর নির্ভরশীল; মিলগুলো বাজারে সরবরাহ না দিলে দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

ফ্রেশ ফ্রুটস আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কাস্টমস শুল্কায়ন বাড়িয়ে দেওয়ায় ১০০ টাকা কেজির খেজুরে ২০০ টাকা শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্কায়নকে কাজে লাগিয়ে বহু লোক আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার করেছে, যা প্রকারান্তরে কাস্টমসই উৎসাহিত করেছে। এসময় তিনি টিসিবি'র খেজুর আমদানির টেন্ডার মূল্যের (৮২৫ ডলার) সঙ্গে সাধারণ আমদানিকারকদের শুল্কায়ন মূল্যের (২,৬০০ ডলার) বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

অন্যান্য সমস্যার মধ্যে করপোরেট ব্যবসায়ীদের শোষণ এবং ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যের কারণে পণ্যের মূল্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানান নেতারা।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী নেতারা কয়েকটি প্রস্তাব দেন। সেগুলো হলো-

সাপ্লাই চেইনে অভিযানঃ মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব গোলাম মাওলা বলেন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর অভিযান না চালিয়ে সাপ্লাই চেইনের যেখানে সমস্যা, সেখানে অভিযান চালানো উচিত।

বাজার মনিটরিংঃ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জাকির হোসেন এফবিসিসিআই, বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বছরজুড়ে বাজার মনিটরিংয়ের আহ্বান জানান।

শুল্ক ছাড়ের সময়ঃ রুটি-বিস্কুট প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন শুল্ক ছাড় এমন সময়ে দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে এর সুফল মুনাফাখোর নয়, বরং সাধারণ রোজাদাররা পান।

এই সভায় সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক আবদুর রহিম খান বলেন, সরকারের একার পক্ষে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত এবং গণমাধ্যমকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি সরকারি সংস্থাগুলোকে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সুরক্ষা দিতে এবং কাউকে অযথা হয়রানি না করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদেরও আইনকানুন মেনে ব্যবসা পরিচালনার আহ্বান জানান তিনি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ