পিসাং গোরেং: ভাজা কলার ক্রিস্পি ম্যাজিক,একবার খেলে লোভ কাটবে না! আপনি কি ট্রাই করেছেন তো ?
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বৃষ্টি পড়ছে, গলির মোড়ে ধোঁয়া উঠছে গরম তেলে, সেখানে ভাজা হচ্ছে সোনালি রঙের কলা। বাইরের অংশটা মচমচে, ভেতরে নরম আর মিষ্টি। এক কামড় দিতেই যেন মুখে লেগে থাকে উষ্ণতার স্বাদ। এই অনন্য স্বাদের নাম "পিসাং গোরেং"। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্রিট স্ন্যাক, যাকে অনেকেই বলেন "ভাজা কলার জাদু"।
"পিসাং" শব্দের অর্থ কলা, আর "গোরেং" মানে ভাজা। ইন্দোনেশিয়ান ও মালয় ভাষার এই দুটি সাধারণ শব্দের সংযোগেই তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত স্বাদের খাবার।ইন্দোনেশিয়ার প্রাচীন দ্বীপাঞ্চলে শত শত বছর আগে থেকেই কলা ছিল দৈনন্দিন খাবারের অংশ। কৃষকরা মাঠের কাজ শেষে বিকেলে চা-এর সঙ্গে গরম কলা ভাজা খেতেন। ধীরে ধীরে এটি ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে, আর হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক ক্লাসিক স্ন্যাকস।
পিসাং গোরেং দেখতে সহজ মনে হলেও, এর নিখুঁত টেক্সচার তৈরি করা এক শিল্প।এর মূল রহস্য লুকিয়ে আছে বাইরের ব্যাটারে, যেখানে থাকে ময়দা, চালের গুঁড়া, বেকিং পাউডার এবং একটুখানি নারকেল দুধ। এই মিশ্রণ কলাকে আবৃত করে এমনভাবে, যাতে তেলে পড়লেই বাইরের অংশটা কড়কড়ে সোনালি হয়, কিন্তু ভেতরে নরম, গলে যাওয়া কলা তার মিষ্টতা ধরে রাখে। তাপমাত্রাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ, খুব বেশি গরম তেলে দিলে বাইরের অংশ পুড়ে যায়, কিন্তু ভেতর কাঁচা থেকে যায়; আবার কম তাপে দিলে তেল শুষে নেয় কলা। তাই রাঁধুনিদের অভিজ্ঞতা বলে দেয় কখন তেল "ঠিক ঠিক" গরম। বিজ্ঞান বলছে, ব্যাটারের ভেতরের জলীয় অংশ যখন তাপে বাষ্পে পরিণত হয়, তখন ভেতরটা ফোলাফোলা হয় এবং বাইরের স্তরটি মচমচে আবরণ তৈরি করে।
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন স্বাদ:
ইন্দোনেশিয়ায় পিসাং গোরেং সাধারণত নারকেল তেলে ভাজা হয়, যা খাবারে বিশেষ ঘ্রাণ আনে।মালয়েশিয়ায় কখনও কখনও এর সঙ্গে পাম সুগার সিরাপ বা মিষ্টি সস পরিবেশন করা হয়। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে দেখা যায় আধুনিক সংস্করণ—ভেতরে চিজ, চকলেট, এমনকি আইসক্রিম ভরা পিসাং গোরেং!
তবে স্থানীয়দের কাছে এখনো সবচেয়ে প্রিয় সেই রাস্তার দোকানের সহজ সংস্করণ-গরম, তাজা, ধোঁয়া উঠছে, আর পাশে এক কাপ কড়া চা।
পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান:
এই খাবারের মূল উপাদান কলা, যা ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। পিসাং গোরেং অবশ্য ভাজা হওয়ায় এতে ক্যালোরি কিছুটা বেশি, কিন্তু যদি ভালো তেলে (যেমন নারকেল বা সূর্যমুখী তেল) ভাজা হয়, তবে তা শরীরের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ। এতে থাকা প্রাকৃতিক গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ দ্রুত শক্তি জোগায়, তাই এটি দুপুরের ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি মুড বুস্টার হিসেবেও কাজ করে।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার রাস্তায় বিকেল মানেই "চা ও পিসাং গোরেং" সময়।কর্মজীবী মানুষ, ছাত্রছাত্রী কিংবা পর্যটক, সবার হাতেই দেখা যায় কাগজের ঠোঙায় গরম ভাজা কলা। স্থানীয়দের মতে, এই খাবার শুধু ক্ষুধা মেটায় না, বরং মেলবন্ধনের প্রতীক। একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতে দিতে কলা ভাজা খাওয়াই যেন তাদের বিকেলের রীতি।
পিসাং গোরেং শুধু একটা স্ট্রিট ফুড নয়, এটি একধরনের সংস্কৃতি, উষ্ণতার প্রতীক এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের স্বাদের ঐতিহ্য। এই এক প্লেট গরম ভাজা কলা যেন বলে, সহজ জিনিসও আনন্দ দিতে পারে, যদি তাতে থাকে আন্তরিকতা আর ইতিহাসের ঘ্রাণ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।