মালয়েশিয়ার স্ট্রিট ফুডের স্বাদ এখন আপনার রান্নাঘরে! চার কুয়েই টিও রেসিপি

মালয়েশিয়ার স্ট্রিট ফুডের স্বাদ এখন আপনার রান্নাঘরে! চার কুয়েই টিও রেসিপি
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

রাত নামলেই পেনাংয়ের রাস্তায় শুরু হয় এক অদ্ভুত সিম্ফনি। লোহার কড়াইয়ের গরম তেলে রসুন ফেলার মুহূর্তে যে তীব্র ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে, তা কয়েক গলি দূর থেকেও অনুভব করা যায়। চিংড়ির ঝলসানো গন্ধ, ডিমের সাথে নাচতে থাকা চালের নুডলস, আর রাঁধুনির তালে তালে কড়াই নাড়ার শব্দ সব মিলিয়ে যেন আগুনের মঞ্চে এক রন্ধন-নাটক। আর এই নাটকের নায়ক হলো চার কুয়েই টিও (Char Kway Teow)।

মালয়েশিয়ার পেনাং শহরের স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতিতে এটি শুধু খাবার নয়, একরকম ঐতিহ্য। যে খাবারের ধোঁয়াটে গন্ধে জেগে ওঠে রাতের বাজার, আর যার এক কামড়েই বোঝা যায়, কীভাবে সাধারণ উপকরণেও সৃষ্টি করা যায় অসাধারণ স্বাদ।
 

চার কুয়েই টিও কী?

'চার কুয়েই টিও' শব্দের আক্ষরিক অর্থ 'ভাজা চালের নুডলস'। "Char" মানে ভাজা, আর "Kway Teow" হলো চালের তৈরি পাতলা, ফ্ল্যাট নুডলস। চীনা-মালয় উৎসের এই পদ আজ মালয়েশিয়ার জাতীয় গর্বের একটি অংশ, বিশেষ করে পেনাংয়ের গলি থেকে উঠে এসেছে এই খাবারের বিশ্বজয়।

নুডলস, চিংড়ি, ডিম, রসুন, সয়া সস আর প্রচণ্ড তাপে তৈরি হয় এমন এক ধোঁয়াটে সুবাস, যা স্থানীয়রা বলেন- "Wok Hei", অর্থাৎ "ওয়াকের আত্মা"। এই ওয়াক হেই-ই চার কুয়েই টিওকে অন্য সব নুডলস থেকে আলাদা করে তোলে।

চার কুয়েই টিওর সূচনা ১৯শ শতকের শেষভাগে, মালয়েশিয়ায় চীনা অভিবাসীদের হাত ধরে। তখনকার দিনগুলোতে বন্দরনগরীর শ্রমিকরা দিনে কঠোর পরিশ্রম করতেন, তাই তাদের প্রয়োজন ছিল এমন এক খাবার যা সস্তা, পুষ্টিকর ও দ্রুত রান্না করা যায়। তারা চালের নুডলস, ডিম, সামান্য চিংড়ি, সয়া সস আর তেল মিশিয়ে তৈরি করলেন এক ঝটপট খাবার, যা মুহূর্তে ভরাবে পেট, দেবে এনার্জি, আর গন্ধে জাগাবে ক্ষুধা। ক্রমে এই শ্রমজীবী খাবার। হকার স্টল থেকে রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সারা মালয়েশিয়ায় । আজ এটি পেনাংয়ের পরিচয়ের অংশ।

চার কুয়েই টিওর স্বাদ কোনো একক উপাদানে নয়, এটি রান্নার কৌশলে। উচ্চ তাপে যখন রসুন, সয়া সস, চিংড়ি ও নুডলস একসঙ্গে মেশে, তখন ঘটে Maillard Reaction, যেখানে প্রোটিন ও শর্করার রাসায়নিক সংমিশ্রণে তৈরি হয় গভীর বাদামি রঙ ও ধোঁয়াটে ঘ্রাণ। রাঁধুনির হাতের দ্রুত নাড়াচাড়া ও কড়াইয়ের আগুনে সেই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাস্তা জুড়ে। এটিই "Wok Hei", যার মানে হলো খাবারের আত্মা ধরে ফেলা।
 

উপকরণ: 

◑ ফ্ল্যাট চালের নুডলস

◑ ডিম

◑ রসুন ও পেঁয়াজ

◑ চিংড়ি বা মুরগির টুকরা

◑ বীণ স্প্রাউট

◑ লাইট ও ডার্ক সয়া সস

◑ চিলি পেস্ট

◑ পাম তেল বা গ্রাউন্ডনাট অয়েল
 

এই সরল উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশে তৈরি করে এক অনন্য টেক্সচার কখনো নরম, কখনো ক্রিস্পি, আর সর্বদা ধোঁয়াটে ও মশলাদার।
 

রেসিপি: 

১️/  নুডলস হালকা ভিজিয়ে ঝরিয়ে নিন।

২️/ কড়াইতে তেল গরম করে রসুন ও পেঁয়াজ দিন।

৩️/ চিংড়ি যোগ করে কয়েক সেকেন্ড ভেজে নিন।

৪️/ নুডলস দিন, সঙ্গে সয়া সস, মরিচ পেস্ট ও ডিম মিশিয়ে দ্রুত নাড়ুন।

৫️/ শেষে বীণ স্প্রাউট দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নেড়ে নামিয়ে ফেলুন। উচ্চ তাপের ধোঁয়া আর দ্রুত হাতের গতি- এই দুই-ই আসল কৌশল।
 

আজ এই রাস্তার খাবার পেরিয়ে গেছে মালয়েশিয়ার সীমা। টোকিওর আধুনিক রেস্টুরেন্ট, নিউ ইয়র্কের ফুড মার্কেট বা সিঙ্গাপুরের হকার স্টল—সব জায়গায়ই চার কুয়েই টিওর ধোঁয়াটে সুবাস পাওয়া যায়। তবু পেনাংয়ের সরু গলিতে, কড়াইয়ের আগুনে ঘামে ভেজা রাঁধুনির মুখের পাশে যে ঘ্রাণ ভেসে আসে, সেই স্বাদই আসল।

চার কুয়েই টিও প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, বিশেষ করে যখন এতে চিংড়ি, ডিম ও সবজি যোগ হয়। তবে এটি ভাজা খাবার, তাই অতিরিক্ত তেল বা সয়া সস ব্যবহার না করাই ভালো। ঘরে তৈরি করলে তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এটি আরও স্বাস্থ্যসম্মত রাখা যায়।

চার কুয়েই টিও শুধু এক প্লেট নুডলস নয় এটি এক সাংস্কৃতিক আবেগ, এক রন্ধনশৈলীর কাহিনি। যে খাবার একসময় পরিশ্রমী শ্রমিকদের রাতের সঙ্গী ছিল, সেটিই আজ বিশ্বজুড়ে ফুড লাভারদের প্রিয় পদ। এর ধোঁয়াটে ঘ্রাণে মিশে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, আর আগুনে ভাজা এক অনন্য শিল্প, যা শেখায় রান্না মানে শুধু খাবার নয়, এটি এক শিল্প।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ