ইলেকট্রিক এভিয়েশন: আকাশপথ বদলে দিচ্ছে বিদ্যুৎনির্ভর পরিবহন-কার্বন কমানোর নতুন যুগ শুরু!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ইলেকট্রিক এভিয়েশন কেবল প্রযুক্তির অগ্রগতি নয়; এটি আকাশযাত্রার ভবিষ্যৎকে সম্পূর্ণ বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বহন করছে। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ, কার্বন নিঃসরণ, জ্বালানি-নির্ভরতা সবকিছুর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজ শিল্পের সামনে এক বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, আকাশপথ কতটা পরিবেশবান্ধব হতে পারে? এমন এক সময়েই সামনে এসেছে বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজ প্রযুক্তি, যা শক্তি সাশ্রয়ী, কম শব্দযুক্ত এবং দূষণ কমাতে সক্ষম।
ইলেকট্রিক উড়োজাহাজ কীভাবে কাজ করে?
ইলেকট্রিক বিমানে সাধারণ টারবাইন বা ফসিল ফুয়েল-চালিত ইঞ্জিনের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় বৈদ্যুতিক মোটর ও ব্যাটারি। মোটর ঘোরানোর শক্তি আসে ব্যাটারিতে জমা থাকা বৈদ্যুতিক চার্জ থেকে। উড়োজাহাজে ব্যবহৃত ব্যাটারি সাধারণত উচ্চ ঘনত্বের লিথিয়াম-ভিত্তিক, যা দ্রুত চার্জ নিতে পারে এবং ওজনের তুলনায় বেশি শক্তি ধারণ করতে পারে। এছাড়া কিছু মডেলে হাইব্রিড ইলেকট্রিক সিস্টেম ব্যবহার হয়, যেখানে ব্যাটারির সঙ্গে ছোট জ্বালানিচালিত জেনারেটর যুক্ত থাকে, যাতে দীর্ঘ দূরত্বেও স্থিরভাবে উড়তে পারে।
বায়ুদূষণ কমানোর শক্তিশালী সমাধান!
বৈদ্যুতিক উড়োজাহাজের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, এটি আকাশপথের কার্বন নিঃসরণ কমাতে সক্ষম। আজকের দিনে বৈশ্বিক বিমান পরিবহন শিল্প বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য দায়ী। ইলেকট্রিক উড়োজাহাজ এই নির্ভরতা কমিয়ে আনে। কারণ- জ্বালানি পোড়ে না, ফলে সরাসরি CO₂ বা নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন হয় না।
ব্যাটারিতে চার্জ নেওয়া বিদ্যুৎ যদি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে, তাহলে পুরো ফ্লাইটকে পরিবেশবান্ধব বলা যায়। আকাশপথের ওপর থাকা দূষণচাপ ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে।
ঘন বসতি এলাকার জন্য আদর্শ বৈদ্যুতিক মোটর সাধারণ ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক বেশি নীরব। এ কারণে-
☞ শহরের ভেতরে ছোট বিমানবন্দর পরিচালনা সহজ হয়
☞ রাতের ফ্লাইটে শব্দজনিত সমস্যা কমে
☞ জরুরি বিমানের ওঠানামা কাছাকাছি এলাকায় করা যায়
☞ পর্যটন কেন্দ্রের উপর দিয়ে উড়তে গিয়ে শব্দ দূষণ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না
এটি ভবিষ্যতের Urban Air Mobility বা শহুরে আকাশ পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা।
ইলেকট্রিক বিমানের শক্তি ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। কারণ-
◑ জটিল জ্বালানি ইঞ্জিন নেই
◑ অংশগুলোর ক্ষয় কম
◑ চার্জিং খরচ জ্বালানির চেয়ে অনেক কম
◑ মেরামত ও তাপ ব্যবস্থাপনা সহজ
◑ দীর্ঘমেয়াদে বিমান পরিচালনাকারীরা সাশ্রয়ী খরচে ফ্লাইট দিতে পারবে, যার প্রভাব ভাড়া কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ-
দূরপাল্লার জন্য ব্যাটারি এখনও সীমিত। যদিও প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে, তবুও কিছু বড় চ্যালেঞ্জ এখনো আছে। যেমন-
◑ বিদ্যমান ব্যাটারি প্রযুক্তি দীর্ঘ দূরত্বের (যেমন ১০০০+ কিমি) ফ্লাইট চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়।
◑ ব্যাটারির ওজন বেশি। উড়োজাহাজ যত হালকা হবে, শক্তি দক্ষতা তত বাড়বে।
◑ চার্জিং অবকাঠামো বিশ্বব্যাপী এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি
◑ চরম ঠান্ডা বা গরম পরিবেশে ব্যাটারির কার্যকারিতা কমে যায়
এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিভিন্ন গবেষণাগার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্যাটারি শক্তির ঘনত্ব বাড়াতে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩০–৪০০ কিমি দূরত্বে ইলেকট্রিক এভিয়েশন সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর হতে পারে। এই পরিসরে—
ব্যাটারি সহজেই প্রয়োজনীয় শক্তি দিতে পারে এবং ছোট আঞ্চলিক বিমানবন্দরগুলো যুক্ত হয়।
পর্যটন, জরুরি চিকিৎসা, শিক্ষামূলক ফ্লাইট, কার্গো- সব ক্ষেত্রেই সুবিধা দেখা যায়। আসলে আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে ইলেকট্রিক ফ্লাইট বড় ভূমিকা রাখবে, যেসব এলাকায় এখন ছোট দূরত্বেও বিমান সুবিধা পাওয়া যায় না।
ভবিষ্যতের আকাশ কি পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব?
ইলেকট্রিক এভিয়েশনের লক্ষ্যকে অনেকেই "আকাশের নবায়নযোগ্য বিপ্লব" বলে থাকেন।
কারণ এটি ধীরে ধীরে যে দিকগুলো বদলে দিচ্ছে-
⇨ কম কার্বন নির্গমন
⇨ নীরব ফ্লাইট
⇨ সাশ্রয়ী অপারেশন
⇨ টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন
⇨ শহুরে আকাশ পরিবহনের পথ তৈরি
এক কথায়, আকাশপথকে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব, কার্যকর এবং অর্থনৈতিকভাবে টেকসই করার জন্য এ প্রযুক্তি এক নতুন যুগের সূচনা।
ইলেকট্রিক এভিয়েশন এখনো পুরোপুরি পরিপক্ক নয়, কিন্তু এর সম্ভাবনা যে আকাশযাত্রার ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে, তা স্পষ্ট। যেভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিশ্বের পরিবহন খাতকে বদলে দিয়েছে, একইভাবে বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজও আকাশপথে পরিবেশবান্ধব বিপ্লবের পথ খুলে দিচ্ছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।