সাফল্য বারবার ফসকে যায় কেন? প্রোক্রাস্টিনেশনের সেই একটি গোপন ট্রিগারই কি দায়ী সব কিছুর জন্য!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রতিদিন আমরা নতুন পরিকল্পনা করি, নতুন কাজ শুরু করা, প্রজেক্ট শেষ করা, বা নিজের জন্য সময় রাখা। কিন্তু অনেক সময় আমাদের মুখে আসে "কাল করবো।" এই 'কাল' কখনও আসে না। প্রোক্রাস্টিনেশন, বা কাজ স্থগিত রাখার অভ্যাস, শুধু ক্ষণস্থায়ী সমস্যা নয়, এটি মানসিক চাপ, সৃজনশীলতা হ্রাস, সম্পর্কের দূরত্ব এবং জীবনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি ঘটায়। তবে ভালো খবর হলো, প্রোক্রাস্টিনেশনকে আমরা ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তর করতে পারি। সঠিক কৌশল, নিয়মিত অভ্যাস এবং প্রেরণা দিয়ে আমরা দেরি কাটিয়ে জীবনে উদ্দীপনা এবং প্রোডাক্টিভিটি আনতে পারি।
মানব মস্তিষ্কে দুইটি প্রধান সিস্টেম কাজ করে-
☞ রেশনাল সিস্টেম এবং
☞ এমোশনাল সিস্টেম।
কাজ বা সিদ্ধান্তের চাপ অনুভূত হলে এমোশনাল সিস্টেম প্রাধান্য পায় এবং আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধের পথে ঝুঁকে দেরি করি।
➤ মানসিক প্রভাব:
⇨ উদ্বেগ ও হতাশা বৃদ্ধি।
⇨ আত্মসম্মান হ্রাস এবং নিজেকে অপর্যাপ্ত মনে করা।
⇨ সময় ব্যবস্থাপনার অক্ষমতা, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ার ও শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলে।
➤ শারীরিক প্রভাব:
⇨ স্ট্রেস হরমোন কার্টিসল বৃদ্ধি পায়।
⇨ ঘুমের সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ও হজমজনিত অসুবিধা হতে পারে।
⇨ দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি।
কেন আমরা দেরি করি?
◑ ভয় ও অনিশ্চয়তা: নতুন বা জটিল কাজকে সামনে পেলে অনেকে পিছিয়ে যায়।
◑ প্রেরণার অভাব: কাজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট না হলে আগ্রহ কমে যায়।
◑ সময় ও অগ্রাধিকার বিভ্রান্তি: কোন কাজ আগে, কোনটি পরে, সঠিক অগ্রাধিকার না থাকলে দেরি স্বাভাবিক।
◑ আত্ম-নির্ণয় ও আত্মসমালোচনা: "আমি পারব না" বা "ফল ঠিক আসবে না"—এই চিন্তাই প্রোক্রাস্টিনেশনকে বাড়ায়।
প্রোক্রাস্টিনেশন কাটানোর কার্যকরী উপায়-
⇨ বড় কাজকে ছোট ধাপে ভাগ করুন। প্রতিটি ধাপ পূরণ হলে উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়।
⇨ প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। যেমন, সকাল ৯–১১টা শুধুমাত্র পড়াশোনা।
⇨ কাজের সময় সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল এবং অন্যান্য ব্যাঘাত এড়ান।
⇨ কাজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট রাখুন-কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ তা মনে রাখুন।
⇨ কাজ শুরু করতে কেবল ৫ মিনিট দিন। একবার শুরু করলে পরবর্তী ধাপ সহজ হয়।
⇨ ছোট লক্ষ্য পূরণে নিজেকে স্বীকৃতি দিন- চা, হাঁটা, প্রিয় হবি।
⇨ টাস্ক ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ বা জার্নাল ব্যবহার করে অগ্রগতি ট্র্যাক করুন।
সম্পর্ক ও জীবনেও প্রভাব-
◑ ব্যক্তিগত সম্পর্ক: দেরি কমালে পরিবারের সঙ্গে বোঝাপড়া বৃদ্ধি পায়।
◑ কর্মক্ষেত্র: সহকর্মীদের মধ্যে সহযোগিতা ও প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি।
◑ মানসিক শান্তি: নিয়মিত কাজ সম্পন্ন করা আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক সন্তুষ্টি বাড়ায়।
প্রোক্রাস্টিনেশন কোনো অপ্রতিরোধ্য শত্রু নয়। এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যা আমরা জয় করতে পারি। ছোট ছোট পদক্ষেপ, সঠিক পরিকল্পনা এবং সচেতন প্রয়াস জীবনে প্রোডাক্টিভিটি ও উদ্দীপনা আনে। "কাল করবো" থেকে "এখন করবো"-তে যাওয়াই হলো পরিবর্তন, যা শুধু কাজেই নয়, জীবনের সব সম্পর্ক ও মানসিক শান্তিতেও প্রভাব ফেলে। প্রতিদিনের ছোট প্রচেষ্টা বড় পরিবর্তন আনতে পারে- সময়, স্বপ্ন এবং জীবনের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার প্রথম ধাপ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।