বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈল 'এ২৩এ' দ্বীপের অগভীর পানিতে আটকা পড়েছে

বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈল 'এ২৩এ' দ্বীপের অগভীর পানিতে আটকা পড়েছে
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

যুক্তরাজ্যের প্রত্যন্ত দ্বীপ সাউথ জর্জিয়ার অগভীর পানিতে আটকে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমশৈল 'এ২৩এ'। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, দ্বীপের সঙ্গে হিমশৈলটির সংঘর্ষ হতে পারে, যা এ অঞ্চলে বসবাসকারী লাখ লাখ পেঙ্গুইন, সিল ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গ্রেটার লন্ডনের আকারের দ্বিগুণ বিশাল এই হিমশৈলটি বর্তমানে সাউথ জর্জিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থান করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অগভীর পানিতে আটকে থাকার কারণে হিমশৈলটি ধীরে ধীরে ভেঙে টুকরো হতে শুরু করতে পারে, যা স্থানীয় মৎস্যজীবী ও সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।  

স্থানীয় জেলেরা জানান, হিমশৈলটি ভেঙে গেলে বিশাল বরফখণ্ডগুলো মাছ ধরার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এ ছাড়া, ম্যাকরনি পেঙ্গুইনের মতো প্রাণীদের খাদ্য সংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।  

অ্যান্টার্কটিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমশৈলটির বরফে বিপুল পরিমাণ পুষ্টি উপাদান জমে আছে। এটি গলতে শুরু করলে সমুদ্রে পুষ্টির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের অধ্যাপক নাদিন জনস্টন এ প্রসঙ্গে বলেন, "এটি যেন শূন্য মরুভূমিতে একটি পুষ্টি বোমা ফেলার মতো ঘটনা।"  

পরিবেশবিদ মার্ক বেলচিয়ার সতর্ক করে বলেন, "হিমশৈলটি ভেঙে গেলে বিশাল বরফখণ্ডগুলো স্থানীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে নৌযান চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া, মৎস্য আহরণ এলাকায় প্রবেশও সীমিত হয়ে পড়তে পারে।"  

হিমশৈল 'এ২৩এ' পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো হিমশৈলগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার আইস শেলফ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রতলে আটকে ছিল। গত ডিসেম্বরে এটি সামুদ্রিক ঘূর্ণি থেকে মুক্ত হয়ে দ্রুতগতিতে সাউথ জর্জিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।  

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে হিমশৈলটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। সাউথ জর্জিয়া সরকারের জাহাজ ফারোসের ক্যাপ্টেন সাইমন ওয়ালেস বলেন, "হিমশৈলগুলো স্বভাবতই বিপজ্জনক। এটি যদি দ্বীপের কাছাকাছি না আসত, তাহলে আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারতাম।"  

বর্তমানে হিমশৈলটির আকার প্রায় ৩ হাজার ২৩৪ বর্গকিলোমিটার, যা আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এরই মধ্যে হিমশৈলটির কিনার থেকে বড় বড় বরফখণ্ড ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় এটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যেতে পারে, যা সাউথ জর্জিয়ার চারপাশে দীর্ঘদিন ধরে বরফের নগরী তৈরি করতে পারে।  

২০০৪ সালে এ৩৮ নামের আরেকটি হিমশৈল সাউথ জর্জিয়ার সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল, যার ফলে দ্বীপের পেঙ্গুইন ও সিলের ছানাদের খাদ্য সংস্থান বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এবারও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকা ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে আরও হিমশৈল ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সামুদ্রিক পরিবেশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।


সম্পর্কিত নিউজ