ভূমিকম্প আসে হঠাৎ-কিন্তু প্রস্তুতি আসে আগেই: বিশেষজ্ঞদের জরুরি সতর্কবার্তা

ভূমিকম্প আসে হঠাৎ-কিন্তু প্রস্তুতি আসে আগেই: বিশেষজ্ঞদের জরুরি সতর্কবার্তা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মিনিট নয়—সেকেন্ডের মধ্যে বদলে যেতে পারে একটি শহরের চেহারা। মাটির নিচের টেকটোনিক প্লেট সামান্য নড়ে উঠলেই ভবন কেঁপে ওঠে, সেতু দুলে ওঠে, কাঁচ ভেঙে ছিটকে পড়ে চারদিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের প্রকৃত বিপদ হলো হঠাৎত্ব। কেউ সময় পায় না চিন্তা করার, তাই একমাত্র ভরসা- আগে থেকেই জানা, আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা। দুর্যোগ ও ভূমিকম্প গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী, ভূমিকম্পের আগের প্রতিরোধই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র-

➤ ঘরের কাঠামো শক্ত ও স্থিতিশীল করা:

ভূমিকম্পে মৃত্যু ও আহতের বেশিরভাগ কারণ হলো ঘরের ভেতরের জিনিস পড়ে যাওয়া বা ধসে পড়া অংশের আঘাত। তাই—

⇨ বড় আলমারি, টেবিল, শেলফ, টিভি ইউনিট-সবই দেওয়ালে শক্ত ব্র্যাকেটে আটকান।
 

⇨ ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন বা ভারী যন্ত্রপাতি নিচ থেকে সাপোর্ট দিন, যাতে নড়ে না যায়।
 

⇨ কাচের শো–পিস, বোতল, জার- উচ্চ তাকের বদলে নিচের দিকে রাখুন।
 

বেডরুম ও লিভিং রুমে এমনভাবে জিনিস রাখুন যাতে কম্পনের সময় আপনার ওপর পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি না থাকে।

 

➤ জরুরি ব্যাগ (Earthquake Go-Bag) প্রস্তুত করা:

এই ব্যাগ এমন হবে যাতে ঘর ছাড়তে হলে ১–২ দিন টিকে থাকা যায়। এর মধ্যে থাকা উচিত-

⇨ খাওয়ার পানি (কমপক্ষে প্রতিজনের জন্য ১ লিটার)

⇨ শুকনো খাবার (টফি, খেজুর, বিস্কুট, এনার্জি বার)

⇨ টর্চ, অতিরিক্ত ব্যাটারি

⇨ পাওয়ার ব্যাংক

⇨ সাধারণ ওষুধ এবং প্রেসক্রিপশনের ওষুধ

⇨ ছোট ফার্স্ট–এইড কিট

⇨ মাস্ক, ব্যান্ডেজ, স্যানিটারি আইটেম

⇨ পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজের ফটোকপি

⇨ হুইসেল বা ছোট অ্যালার্ম

⇨ কিছু নগদ টাকা
 

দুর্যোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি ব্যাগ সবসময় দরজার কাছে রাখা উচিত।

 

➤ পরিবারের জরুরি পরিকল্পনা:

ভূমিকম্প হলে ঘরে কোন নিরাপদ স্থান আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন। বাইরে বের হলে আশ্রয়ের জায়গা কোথায় তা পরিবারের সকল সদস্যকে জানানো জরুরি। শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ—তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আগে থেকে ঠিক করে রাখুন। মাসে অন্তত একবার "ড্রিল" করে অভ্যাস গড়ে তুলুন।
 

ভূমিকম্পের সময় সেকেন্ডেই ঠিক করুন, কী করবেন!

➤ ঘরের ভেতরে—Drop, Cover, Hold: আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি:

◑ Drop (নিচে বসুন): হঠাৎ ধাক্কায় পড়ে গিয়ে আঘাত লাগা সবচেয়ে সাধারণ দুর্ঘটনা। নিচু হয়ে বসলে ভারসাম্য রক্ষা সহজ হয়।
 

◑ Cover (শরীর ও মাথা ঢেকে রাখুন): শক্ত টেবিল বা ডেস্ক থাকলে নিচে আশ্রয় নিন। কিছু না থাকলে ব্যাগ, বালিশ বা হাত দিয়ে মাথা ঢেকে নিন। মাথা, ঘাড়, মেরুদণ্ড—সবচেয়ে বেশি রক্ষার প্রয়োজন।
 

◑ Hold (ধরে থাকুন): টেবিল নড়তে পারে, তাই এক হাতে ধরে রাখুন। কম্পন থামার আগে দৌড়াবেন না বা সিঁড়িতে নামবেন না, এটা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
 

➤ দরজার ফ্রেমে দাঁড়ানোর ভুল ধারণা ভেঙে দিন:

মানুষ ভাবত দরজার ফ্রেম শক্ত। কিন্তু আধুনিক ভবনে এটি দুর্বল অংশ। সেখানে দাঁড়ালে কাঁচ, টাইলস বা আসবাব পড়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

➤ জানালার কাছ থেকে দূরে থাকুন:

কাঁচ ভেঙে ছিটকে পড়লে মারাত্মক আঘাত লাগতে পারে।

 

➤ বাইরে থাকলে কী করবেন?

◑ খোলা মাঠ বা খোলা জায়গায় দাঁড়ান।
 

◑ ভবন, সাইনবোর্ড, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি—এগুলো থেকে দূরে যান।
 

◑ ভিড় এড়ান; অন্যদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি বিপজ্জনক হতে পারে।
 

➤  গাড়িতে থাকলে:

◑ গাড়ি থামিয়ে ব্রেক চেপে রাখুন।
 

◑ ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, উঁচু ভবন বা ফ্লাইওভারের নিচে থামবেন না।

 

ভূমিকম্পের পরে সবচেয়ে বেশি ভুল হয় এই সময়েই

➤ গ্যাস–লাইন, বিদ্যুৎ, পানির লাইন পরীক্ষা করুন: 

গ্যাসের গন্ধ পেলেই কিছু চালু করবেন না। সকল সুইচ–বোতাম বন্ধ করুন এবং দ্রুত বাইরে যান। সন্দেহ থাকলে পেশাদারদের ডাকুন, নিজে কিছু ঠিক করতে যাবেন না।

 

➤ আফটারশক—এগুলোই দ্বিতীয় বিপদ:

বড় কম্পনের পরে ছোট ছোট কম্পন আসে, যেগুলোতে আবার ধস নামতে পারে। প্রতিবার "Drop, Cover, Hold" অবস্থানে যান। কোন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৎক্ষণাৎ তা এড়িয়ে চলুন।

 

➤ আটকে গেলে কী করবেন?

দুর্বল হয়ে চিৎকার না করে:

◑ হুইসেল বা ধাতব কিছু দিয়ে শব্দ দিন। এটি বেশি কার্যকর।
 

◑ ধুলো কমাতে নাক–মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
 

◑ অযথা নড়াচড়া করবেন না, অক্সিজেন নষ্ট হবে।
 

➤ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যস্ত হলে,

কল না করে SMS পাঠান। এতে নেটের চাপ কম পড়ে, যোগাযোগও দ্রুত হয়।


ভূমিকম্প পৃথিবীর অন্যতম অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়। কিন্তু এর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে মানুষের প্রস্তুতির ওপর। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ঘরের আসবাবের অবস্থান থেকে জরুরি ব্যাগ, সবকিছুই ঠিক করে রাখা জরুরি। কারণ কম্পন মাত্র ২০–৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হলেও, সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয় বছরের পর বছর অনুশীলন ও সচেতনতার মাধ্যমে।প্রস্তুতি নিন, পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন—আজকের শেখা সিদ্ধান্তই আগামী দিনের জীবনরক্ষার হাতিয়ার!

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ