ইফতারে ছোলা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ইফতারে ছোলা শুধু একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারই নয়, এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি সুপারফুড। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস হিসেবে ছোলা মাছ, মাংস বা ডিমের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারিতে ছোলা খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় প্রায় ১৭ গ্রাম প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫ গ্রাম ফ্যাট এবং নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য উপকারী।
হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
রোজায় হজমের সমস্যা এড়াতে ছোলা খাওয়া জরুরি। ছোলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
রোজায় অস্বাস্থ্যকর তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যা কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ বাড়াতে পারে। ছোলায় থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ছোলার ফাইবার ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ছোলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) মাত্র ২৮, যা রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছোলা একটি আদর্শ খাবার। এ ছাড়া ছোলার আঁশ অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা
ছোলায় প্রচুর আয়রন থাকায় এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠন ও ক্ষয়রোধে ভূমিকা রাখে। ছোলায় থাকা ভিটামিন বি চুল, ত্বক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
ছোলা খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
ছোলার পুষ্টিগুণ পেতে হলে সঠিকভাবে রান্না ও পরিবেশন করা জরুরি। অতিরিক্ত তেল-মশলা দিয়ে রান্না করা ছোলা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বরং ছোলা কাঁচা বা সেদ্ধ করে খাওয়া উত্তম। ছোলা খাওয়ার আগে অন্তত ৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে, যাতে এর ক্ষতিকর রাসায়নিক ও জীবাণু দূর হয়।
ছোলা সেদ্ধ করে টমেটো, শসা, চাটমশলা ও অল্প অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া টক দই বা সালাদের সঙ্গেও ছোলা খাওয়া যায়। তবে কোনো খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ছোলা খেতে পারেন।
সতর্কতা
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ছোলা খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এটি প্রোটিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পেটে ব্যথা থাকলেও ছোলা খাওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া টিন বা কৌটাজাত ছোলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ এগুলো থেকে বটুলিজম নামক বিষক্রিয়া হতে পারে।
ইফতারে ছোলা খাওয়া শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এটি শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তবে সঠিক পদ্ধতিতে ও পরিমিত পরিমাণে ছোলা খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।