শরীরের অতিরিক্ত শীত? জানুন কোন ভিটামিনের ঘাটতি হতে পারে মূল কারণ!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শীত অনুভব করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যখন তাপমাত্রা কমে, আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই গরম রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক সময় লক্ষ্য করা যায়, অন্যদের তুলনায় কিছু মানুষ বেশি শীত অনুভব করে, এমনকি ঘরের তাপমাত্রা ঠিক থাকলেও। এই পরিস্থিতি সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা নয় বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা, যা অনেক সময় পুষ্টি ও ভিটামিন ঘাটতির সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে ভিটামিন B12, D, B1, B3 এবং আয়রনের অভাব শরীরের থার্মোরেগুলেশন বা তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখা শুধু তাপ উৎপাদন নয়, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যেখানে রক্ত সঞ্চালন, নার্ভ সিগন্যাল, পেশি সক্রিয়তা এবং হরমোনের ভারসাম্য একসাথে কাজ করে। যখন ভিটামিনের ঘাটতি থাকে, এই প্রক্রিয়াগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না। ফলস্বরূপ হাত-পা ঠাণ্ডা, গোড়া বা কান শীত অনুভব করা, কম শক্তি ও ক্লান্তি-এসব লক্ষণ দেখা দেয়।
কোন ভিটামিনের অভাবে বেশি শীত অনুভূত হয়?
১. ভিটামিন B12 (কোবালামিন): ভিটামিন B12 রক্তের লাল কণিকা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্ত যখন যথেষ্ট অক্সিজেন বহন করতে পারে না, তখন শরীরের কোষ ঠিকমতো শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না। এর ফলশ্রুতিতে আমরা অতিরিক্ত শীত অনুভব করি। B12-এর অভাবে দেখা যায়:
◑ হাত-পা সবসময় ঠাণ্ডা থাকা
◑ অবসাদ ও দুর্বলতা
◑ ত্বক ফ্যাকাশে বা ফোলা ভাব
◑ মেমোরি বা মনোযোগের সমস্যা
B12 প্রধানত পশু-উৎপাদিত খাবারে থাকে।যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, চিজ। শাকাহারীরা প্রায়ই ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকে, তাই তাদের জন্য B12 সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
২. ভিটামিন D: ভিটামিন D হরমোনের ভারসাম্য ও ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। ভিটামিন D-এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়, নার্ভ ও পেশির কার্যকারিতা কমে, এবং শরীরের তাপ উৎপাদন প্রভাবিত হয়। সারা দিন সূর্যালোক না পেলে বা শীতকালীন সময়ে D-এর ঘাটতি সাধারণ। লক্ষণগুলো:
◑ হাড় বা পেশিতে ব্যথা
◑ কম শক্তি বা ক্লান্তি
◑ শীত বেশি লাগা
ভিটামিন D-এর উৎস: সূর্যালোক, ডিমের কুসুম, মাছ, ফোর্টিফাইড দুধ বা খাদ্য।
৩. ভিটামিন B1 (থায়ামিন):
থায়ামিন দেহের কোষকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। ঘাটতির ফলে:
◑ হাত-পা ঠাণ্ডা ও দুর্বল
◑ অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা
◑ হালকা অবসাদ
◑ অনিয়মিত হার্টবিট
থায়ামিন সচরাচর লিন্টিল, বাদাম, শস্য, মাংস ও ডিমে থাকে ।
৪. ভিটামিন B3 (নায়াসিন): নায়াসিন রক্তনালিতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। ঘাটতি হলে:
◑ রক্তনালির সংকোচনে হাত-পা শীতল থাকে
◑ ত্বকে ফ্যাকাশে বা লালচে দাগ দেখা দেয়
◑ ক্লান্তি ও ঘুমের সমস্যা
নায়াসিন পাওয়া যায় চিংড়ি, মাংস, বাদাম, ডিম, শস্যে।
৫. আয়রন (লোহা): আয়রন লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। ঘাটতি হলে অ্যানিমিয়া হয়, রক্তে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। ফলে কোষ পর্যাপ্ত শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না। লক্ষণ:
◑ অতিরিক্ত শীত অনুভব
◑ ক্লান্তি ও দুর্বলতা
◑ ত্বক ফ্যাকাশে
◑ হালকা মাথা ঘোরা
◑ লোহা পাওয়া যায় লাল মাংস, পালং শাক, ডাল, ডিমের কুসুমে।
লক্ষণ:
ভিটামিন বা পুষ্টির ঘাটতির কারণে অতিরিক্ত শীত অনুভূত হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
⇨ ঘরের তাপমাত্রা ঠিক থাকলেও হাত-পা, কান, নাক বা গোড়া ঠাণ্ডা লাগা
⇨ শরীর ক্লান্ত, শক্তি কমে যাওয়া
⇨ ত্বক ফ্যাকাশে বা শুষ্ক হয়ে যাওয়া
⇨ মাথা ঘোরা বা মেদহীন ভাব
⇨ মনোযোগ বা স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
যদি এই লক্ষণগুলো দীর্ঘসময় থাকে, তবে রক্ত পরীক্ষা এবং পুষ্টি নিরীক্ষা করা জরুরি।
কেন ভিটামিনের অভাব শরীরে অতিরিক্ত শীত তৈরি করে?
শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ একটি জটিল প্রক্রিয়া:
⇨ রক্ত সঞ্চালন: রক্তকে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দিতে হয়। লোহিত রক্তকণিকা কম থাকলে শরীর ঠাণ্ডা অনুভব করে।
⇨ নার্ভ ফাংশন: ভিটামিন B1, B3 ও D-এর অভাবে নার্ভ সংকেত ঠিকভাবে পাঠাতে পারে না। তাই শরীরের "তাপ বজায় রাখার" সিস্টেম ব্যাহত হয়।
⇨ পেশি ও কোষ শক্তি: ভিটামিন B12, B1 পেশি শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ। ঘাটতি হলে পেশি শক্তি কমে যায়, ফলে শরীরের ঘাম বা শীত অনুভব প্রভাবিত হয়।
শরীরের এই তিনটি সিস্টেম একত্রে কাজ না করলে মানুষের শরীর শীতকে সাধারণের চেয়ে বেশি অনুভব করে।
প্রতিরোধ ও সমাধান
➤ খাদ্যাভ্যাস:
☞ B12: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, চিজ
☞ D: সূর্যালোক, ডিমের কুসুম, ফোর্টিফাইড দুধ, মাছ
☞ B1: বাদাম, শস্য, লিন্টিল, মাংস
☞ B3: চিংড়ি, মাংস, ডিম, বাদাম, শস্য
আয়রন: লাল মাংস, পালং শাক, ডাল, ডিমের কুসুম
➤ জীবনধারা:
☞ দৈনিক ১৫–২০ মিনিট সূর্যালোক
☞ হালকা ব্যায়াম ও শরীরচর্চা
☞ পর্যাপ্ত ঘুম
☞ মানসিক চাপ কমানো
➤ সাপ্লিমেন্টেশন:
ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী B12, D বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
শরীরের অতিরিক্ত শীত অনুভব শুধুই বাইরের তাপমাত্রির কারণে নয়। ভিটামিন ও পুষ্টির ঘাটতি সরাসরি শরীরের তাপ উৎপাদন, রক্তচলাচল ও নার্ভ সংকেতকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে ভিটামিন B12, D, B1, B3 এবং আয়রনের অভাব হলে হাত-পা, গোড়া, কান শীত অনুভব করা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা এসব লক্ষণ বেড়ে যায়। শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ ঠিক রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সূর্যালোক গ্রহণ, হালকা ব্যায়াম এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্লিমেন্টেশন অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে শরীরকে উষ্ণ রাখার দায়িত্ব শুধু বাইরের পোশাক বা কাপে নয়, বরং অভ্যন্তরীণ পুষ্টি ও ভিটামিনেও।
শীত অনুভব করছেন বেশি? প্রথমে নিজের খাদ্যাভ্যাস পরীক্ষা করুন, প্রয়োজন হলে পুষ্টি ঘাটতি নির্ণয় করুন এবং জীবনধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন। শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ এটাই সুস্থ জীবনধারার মূল চাবিকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।