নিজেকে বিপদে ফেলছেন কি? টয়লেটে ফোন ব্যবহার সম্পর্কে অবশ্যই জানুন !

নিজেকে বিপদে ফেলছেন কি? টয়লেটে ফোন ব্যবহার সম্পর্কে অবশ্যই জানুন !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক অভ্যাস আছে, যেগুলো আমরা মজা করে বা সময় কাটানোর জন্য করি কিন্তু জানি না সেগুলো শরীর, মস্তিষ্ক ও স্বাস্থ্যে কত গভীর প্রভাব ফেলছে। সেখানেই সবচেয়ে সাধারণ এবং সবচেয়ে উপেক্ষিত অভ্যাসটি হলো টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করা।

হয়তো আপনি ভাবছেন-এতে আবার ক্ষতি কী? ফোন তো সময় কাটায়, মনোযোগ সরায়, কাজও হয়।
 

কিন্তু বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাগুলো বলছে, এই একটি অভ্যাসই ধীরে ধীরে এমন ক্ষতি করতে পারে, যার সূত্রপাত বুঝতেই পারবেন না। এমনকি অনেক চিকিৎসক এটিকে "নীরব ঝুঁকি" বলেন। কারণ, টয়লেটে ফোনে স্ক্রল করতে করতে রোগের শুরুটা লক্ষই করা যায় না। 
 

 

➤ বেশি সময় টয়লেটে বসে থাকা পাইলস ও রেকটাল সমস্যার প্রধান কারণ!

মোবাইল হাতে নিয়ে টয়লেটে ঢুকলে সময়ের হিসাব থাকে না। একটি ভিডিও, স্ক্রল, রিল তারপর আরেকটি। এভাবে ৫ মিনিটের জায়গায় ২০–২৫ মিনিট কেটে যায়। এতক্ষণ, একটি জায়গায়, টয়লেট সিটে বসে থাকার কারণে মলদ্বার অঞ্চলে রক্তচাপ বাড়ে, শিরায় চাপ পড়ে, রক্ত চলাচল ধীর হয়ে যায়, মলদ্বারের শিরা ফুলে ওঠে, তৈরি হতে পারে পাইলস/হেমোরয়েড। এটা হঠাৎ হয় না কিন্তু একদিন হঠাৎই ব্যথা, রক্তপাত বা ফোলাভাব টের পাওয়া যায়।

ফোন মুলত আপনার বসার সময় বাড়িয়ে দেয়, আর সেই অতিরিক্ত সময়ই পাইলসের বড় কারণ।
 

➤  দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে!

আপনি যত বেশি সময় টয়লেটে বসবেন, শরীরের চাপ তত বেশি বাড়বে। অনেকেই মনে করেন, সময় নিলে মলত্যাগ ভালো হয়। কিন্তু গবেষণা বলছে—
যত বেশি সময় বসে থাকবেন, তত মলত্যাগের স্বাভাবিক রিদম বিঘ্নিত হবে। চাপ বাড়ে। ফলে পেশি ক্লান্ত হয়।  এতে রেকটাম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলাফল-

◑ মল জমে থাকা

◑ বারবার চাপ দিতে হয়

◑ ধীরে ধীরে অভ্যাসগত কোষ্ঠকাঠিন্য
 

এভাবেই একটি অফিসিয়াল ব্রেক  হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য-ঝুঁকি ।
 

➤ বাথরুম–ফোন, ব্যাকটেরিয়ার সবচেয়ে দ্রুত ছড়ানো সমন্বয়!

টয়লেট সবচেয়ে দূষিত স্থানগুলোর একটি। সেখানকার প্রধান শত্রুরা-

⇨  ই. কোলাই

⇨ সালমোনেলা

⇨ স্ট্যাফ

⇨ ফেকাল ব্যাকটেরিয়া

⇨ ভাইরাস জাতীয় জীবাণু
 

জীবাণুগুলো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বাতাসে ভেসে ফোনে, হাতে এবং বডিতে ছড়িয়ে পড়ে।
 

ফোন হাতে ধরে টয়লেটে ঢুকলে যা হয়-

টয়লেট ফ্লাশের সময় জীবাণু বায়ুতে মিশে ফোনেও বসে। ফোন স্পর্শের মাধ্যমে মুখ–নাক–চোখে যায়। ধীরে ধীরে পাকস্থলী বা শরীরে সংক্রমণ ঘটায়। বস্তুত আপনার ফোনই হয়ে ওঠে 'পকেট সাইজের জীবাণুর বাসা'। আর সেটা আপনি সারা দিন ধরছেন, মুখের কাছে নিয়ে কথা বলছেন, খাওয়ার সময়ও হয়তো টেবিলে রেখেছেন।

 

➤ মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ, ক্রনিক ব্যাক পেইনের গোপন কারণ!

টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করলে স্বাভাবিক ভঙ্গি নষ্ট হয়ে যায়। ফোন সামনে ধরে রাখার কারণে—

⇨ ঘাড় নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে

⇨ কাঁধ সামনের দিকে

⇨ মেরুদণ্ড বাঁকা
 

এই ভঙ্গিটি এক-দুই মিনিট হলে সমস্যা নেই। কিন্তু ১৫–২০ মিনিট ধরে রাখলে ঘাড়ের পেশিতে টান, ব্যথা, মাথাব্যথা, কাঁধে শক্তভাব, পিঠে ক্রমাগত চাপ।  অনেকেই বুঝতেই পারেন না ব্যথার উৎস কোথায়। অথচ  টয়লেট স্ক্রলিংই সেই ব্যথার মূল কারণ হতে পারে।
 

➤ হরমোনাল চাপ বাড়াতে পারে!

টয়লেটে বসার সময় শরীর চায় দ্রুত কাজ শেষ করে বের হতে। কিন্তু ফোনে মনোযোগ থাকলে—শরীরের রিল্যাক্সেশন ঘটতে দেরি হয়। ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন বাড়ে, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। এভাবে, অচেতনভাবেই শরীর বাড়তি চাপ অনুভব করে। যারা নিয়মিত টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করেন, তারা ধীরে ধীরে—

◑ মনোযোগের ঘাটতি

◑ দ্রুত রেগে যাওয়া

◑ মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উত্তেজনা- এগুলো অনুভব করতে পারেন।
 

➤ টয়লেটেই "ফোন অ্যাডিকশন" তৈরি হয়!

ফোন ব্যবহার যখন দিনের সবচেয়ে ব্যক্তিগত জায়গায়ও জায়গা করে নেয়। তখন মস্তিষ্ক সেটিকে সুখ–নির্ভর অভ্যাস বানিয়ে ফেলে। টয়লেট= ফোন ব্যবহার - এই সমীকরণ তৈরি হয়ে যায়। এর ফলে—

⇨ প্রতিবার টয়লেটে ঢুকলেই ফোন খুঁজবেন

⇨ ফোন ছাড়া থাকতে অস্বস্তি

⇨ স্ক্রল না করলে বিরক্তি

⇨ স্বল্পসময়েও ফোন ধরার প্রবণতা
 

এটি অচেতনভাবে ডুম–স্ক্রলিং অ্যাডিকশন তৈরি করে।
 

➤"সময়–চুরি"-প্রতিদিন নষ্ট হয় ৩০–৬০ মিনিট!

টয়লেটে ৫ মিনিট সময় নেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ফোন নিয়ে ঢুকলে সেই সময় হয় ১৫–২৫ মিনিট। দিনে দু'বার করলেই ৩০–৪৫ মিনিট অতিরিক্ত নষ্ট,  মাসে ১৫–২২ ঘণ্টা এবং বছরে ১৮০+ ঘণ্টা! ভাবুন, শুধু টয়লেটে বসে ভিডিও–রিল স্ক্রল করে আপনার জীবনের কত ঘণ্টা হারিয়ে যাচ্ছে!
 

➤ অন্যমনস্কতা বাড়ায়—মস্তিষ্কের "ডিপ ফোকাস" নষ্ট করে!

টয়লেট হলো এমন সময়, যখন মস্তিষ্ক বিশ্রাম নিতে পারে। কিন্তু ফোনে ভিডিও, খবর, সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন মস্তিষ্কে তথ্যের অত্যধিক চাপ দেয়।

ফলে-

⇨ মনোযোগ ভেঙে যায়

⇨ দ্রুত বিরক্তি আসে

⇨ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে

⇨ ধৈর্য কমে যায়

⇨ দিনের বাকি সময়েও মন অস্থির থাকে
 

টয়লেটের সময় যদি আপনি মস্তিষ্ককে বিশ্রাম না দেন, মস্তিষ্ক অন্য সময়েও বিশ্রাম পায় না।
 

➤ ত্বক ও হাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে!

টয়লেটের সারফেসে থাকা জীবাণু যখন ফোনের মাধ্যমে হাতে লাগে।  তারপর সেই হাত যদি সঠিকভাবে না ধোয়া হয়, তাহলে চামড়া, নখ বা আঙুলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, অ্যালার্জি, র‍্যাশ  হতে পারে। যারা বারবার ফোনটি হাতে নিয়ে ধোয়া ছাড়াই অন্য কাজ করেন, তাদের এই ঝুঁকি অনেক বেশি।
 

➤ টয়লেটের ভেতরে ফোন ব্যবহার হঠাৎ মাথা ঘোরানো বা পড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে!

হাঁটু ভাঁজ করে দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে-

◑ রক্ত সরবরাহ কমে

◑ পায়ে অবশভাব তৈরি হয়

◑ দাঁড়ানোর সময় মাথা ঘোরাতে পারে
 

বাথরুমের ভেজা ফ্লোরে এটি বিপজ্জনক।অনেকেই বসে স্ক্রল করতে করতে বুঝতেই পারেন না পা কতক্ষণ জায়গায় আটকে ছিল। ফোনের কারণে মনোযোগ কম থাকায় ওঠার সময় দুর্ঘটনা হতে পারে।
 

➤ মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে! 

টয়লেট–স্ক্রলিং একটি "মাইক্রো–ব্রেক অ্যাডিকশন" সৃষ্টি করে। যার ফল-

⇨ অতিরিক্ত ডোপামিন

⇨ অতিরিক্ত উত্তেজনা

⇨ মস্তিষ্কে তাড়াহুড়োর অনুভূতি

⇨ মানসিক অস্থিরতা

⇨ উদ্বেগ বাড়া
 

বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন- টয়লেটে বসে স্ক্রল করলে তুলনা, ঈর্ষা, ফোমো, অতিরিক্ত তথ্য এসব আরও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।
 

➤ শিশু ও কিশোরদের জন্য বিপজ্জনক অভ্যাসের শুরু!

অভিভাবক যদি টয়লেটে ফোন নিয়ে যান, শিশুরাও সেটা দেখেই অভ্যাস গড়ে ফেলে। দীর্ঘমেয়াদে-

⇨ অল্প বয়সে ফোন অ্যাডিকশন

⇨ অস্বাভাবিক আচরণ

⇨ মেরুদণ্ডের সমস্যা

⇨ মানসিক বিভ্রান্তি
 

- এসব তৈরির ঝুঁকি বাড়ে। এভাবে একটি সাধারণ অভ্যাসই পরবর্তী প্রজন্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
 

➤ ফোনের ক্ষতি, আর্দ্রতা ও তাপেই সার্কিট নষ্ট!

বাথরুমে বাষ্প, আর্দ্রতা, গরম পানি ফোনের ভেতরে ঢুকে সার্কিট ক্ষতিগ্রস্ত, স্ক্রিন সমস্যা ব্যাটারি নষ্ট, স্পিকারে আওয়াজ, ক্যামেরায় কণা জমা- হতে পারে। অনেকেই ভাবেন ফোন নষ্ট হওয়ার কারণ অন্য কিছু। কিন্তু বাস্তবে বাথরুমের আর্দ্রতা প্রধান কারণ হতে পারে।
 

তাহলে কী করা উচিত? 

☞ ফোন টয়লেটের বাইরে রেখে যান। 

☞ টয়লেটে বসে সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের বেশি সময় নেবেন না।

☞ যদি অভ্যাস ছাড়তে সমস্যা হয়, টাইমার ব্যবহার করুন।

☞ টয়লেট থেকে বেরিয়ে হাত ও ফোন দুটোই পরিষ্কার রাখুন।

☞ স্ক্রলিংয়ের ইচ্ছা উঠলে গভীর শ্বাস নিন
 

টয়লেট সময়কে মানসিক বিশ্রাম  সময় হিসেবে ব্যবহার করুন।
 

টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করা আমাদের কাছে নিরীহ, মজার, সুবিধাজনক অভ্যাস হলেও এর ভিতরে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্য–ঝুঁকির এক দীর্ঘ তালিকা। পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য, সংক্রমণ, ব্যথা, অ্যাডিকশন কোনোটাই একদিনে আসে না। কিন্তু প্রতিদিনের ছোট ছোট ভুলই ধীরে ধীরে বড় সমস্যায় পরিণত হয়।আপনার একটি সিদ্ধান্ত ফোনকে টয়লেটের বাইরে রাখা- আপনাকে অসংখ্য ভবিষ্যৎ সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। যত ছোটই মনে হোক, অভ্যাস বদলালে নিশ্চিন্ত জীবন নিশ্চিত হয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ