শফিক রেহমান, রহমান মুরুব্বী-উন্মোচিত অপ্রকাশিত সত্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকা কালের কণ্ঠ-এর ১৫ বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ফ্যাসিবাদী শাসনের দোসর হিসেবে পরিচিত মিডিয়া গ্রুপটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
এই বিতর্কে জড়িয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা। তবে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী ছিল সবচেয়ে নিপীড়িত ও নির্যাতিত রাজনৈতিক দল। দলটির সিনিয়র নেতাদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, যা অনেকের মতে ছিল একটি প্রহসন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, যা দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। জামায়াতের নেতারা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও আপোষহীন মনোভাব দেখিয়েছিলেন, যা সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসা পেয়েছিল।
তবে বর্তমান জামায়াত নেতৃত্বের আচরণে অনেকেই হতাশ। সমালোচকরা বলছেন, ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের পর থেকেই জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া হাউসগুলো ক্ষুব্ধ জনতার হামলার শিকার হয়েছিল। তখনই জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে দাঁড়ান এবং তাদের সমর্থন জানান।
সম্প্রতি জামায়াতের আমিরের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে তার পেছনে বসুন্ধরা এয়ারওয়েজের লোগো দেখা যায়। অনেকেই দাবি করেন, তিনি বসুন্ধরার হেলিকপ্টারে চড়েছেন। পরে জামায়াত পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় যে, হেলিকপ্টারটি বসুন্ধরার নয়। তবে এই ঘটনায় জামায়াতের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যায়।
কালের কণ্ঠের ১৫ বছর পূর্তিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম শুভেচ্ছা জানান। তাদের শুভেচ্ছা বার্তায় কালের কণ্ঠের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকার প্রশংসা করা হয়।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, "কালের কণ্ঠ ছাত্র-জনতার গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।" ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, "কালের কণ্ঠ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জনগণের কল্যাণে কাজ করে আসছে।" নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, "ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে কালের কণ্ঠের কভারেজ প্রশংসার দাবি রাখে।"
জামায়াতের এই অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন আলোচিত সাংবাদিক নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, "জামায়াতের আগের নেতারা যেমন মীর কাশেম আলী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন আপোষহীন, কিন্তু বর্তমান নেতৃত্ব আপোষকামী হয়ে পড়েছেন।" তিনি আরও যোগ করেন, "কালের কণ্ঠ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেছিল। মুগ্ধ হত্যাকাণ্ডের দায় শিবিরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছিল। এখন সেই পত্রিকার প্রশংসা করা জামায়াতের জন্য লজ্জাজনক।"
ফেসবুকে সাদিক খান নামে একজন লিখেছেন, "জামায়াতের নেতারা বসুন্ধরা গ্রুপের কেক খেয়ে তাদের প্রশংসা করছেন। কিন্তু এই পত্রিকা তো শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে ক্রোড়পত্র বের করেছিল।" আবু সাঈদ-ওয়াসিম নামে আরেকজন লিখেছেন, "যে পত্রিকা জুলাই অভ্যুত্থানে জনতার পক্ষে দাঁড়ায়নি, তার প্রশংসা করা মানে শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা।"
জামায়াতের এই আচরণ অনেককেই হতাশ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক অবস্থান যদি এভাবে দুর্বল হয়, তবে জনগণের আস্থা হারানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের মূল্য যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত।