চবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় উস্কানিদাতার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার, শিবির বলছে আইওয়াশ
- Author, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে উস্কানির অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শনিবার (২৮ নভেম্বর) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক আদেশপত্রে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এ ব্যাপারে উদয় কুসুম বড়ুয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "ঘটনার সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা ছিল না তেমন নয়। কিন্তু বক্তব্যটি অন্যভাবে প্রচার করা হয়েছে। আমরা কাউকে হামলা করতে যাইনি বরং কিছু শিক্ষার্থী গ্রামবাসীর প্রতি হামলা করলে আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি। তখন সেন্টিমেন্ট এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে পরিস্থিতির কারণে আমার বহিষ্কার অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। সে পরিস্থিতির খাতিরে বহিষ্কারাদেশ যথাযথ ছিল। পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে এলাকাবাসীর দোষ নেই কিছু উশৃংখল শিক্ষার্থী এলাকাবাসীর উপর হামলা করেছে এলাকাবাসী তার প্রতিরোধ করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমিও ছাত্র রাজনীতি করে বিএনপির রাজনীতিতে এসেছি। কিন্তু বর্তমান শিক্ষার্থীদের মত রাজনীতি আমরা করিনি। আমরা ছাত্র রাজনীতি করেছি ছাত্রদের মধ্যে থেকে লেখাপড়া করে। কিন্তু বর্তমানে ছাত্ররা যে রাজনীতি করছে সেটি ছাত্র রাজনীতি নয়। আমরা বড় দলগুলো ছাত্রদেরকে ওই রাজনৈতিক শিক্ষা দেয় না । এখন তো দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক নেই ওকে ধর ওকে মার এরকম একটা পরিস্থিতি।"
তথ্যমতে, গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসসহ জোবরা এলাকা জুড়ে। এ ঘটনায় সময় এলাকাবাসীকে দেওয়া বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়ার একটি বক্তব্যের ভিডিয়ো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তিনি এলাকাবাসীকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করার উস্কানি দিয়েছেন বলো অভিযোগ ওঠে। ভিডিয়োটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি উদয় কুসুম বড়ুয়ার বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের জড়িত থাকার দায়ে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানায়।
দফায় দফায় সংগঠিত এ সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন এবং দুইজন শিক্ষার্থী আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে একজনের মাথা ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়ায় মাথার খুলি খুলে রেখে একমাস পর মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করা হয়।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় যুবলীগ নেতা হানিফকে গ্রেফতার করা হলেও অদৃশ্য কারনে উদয় কুসুম বড়ুয়ার নামে মামলা করা না হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিএনপি'র পক্ষ থেকে উদয় কুসুম বড়ুয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার ফের ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ সংঘর্ষে ঢাকার একটি হাসপাতালে আইসিইউতে ভতি ছিলেন চবি শিক্ষার্থী ইসলাম। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এ শিক্ষার্থী বলেন, "বিএনপির মত একটি দায়িত্বশীল দলের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আমরা প্রত্যাশা করিনা । এখন তাদেরকে যে সাহস দেওয়া হলো ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের হত্যা করতেও তারা পিছপা হবে না। কারণ দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার তো কোন ভয় নাই। আর বিএনপি নিজেদের বড় দল পরিচয় দিয়ে যে ধরনের কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে তা সত্যি হতাশাজন।"
এ বিষয়ে চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোঃ পারভেজ বলেন, "বিএনপির মত একটি দলের কাছে এই ধরনের আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি না । আমরা দেখেছি গত ৩০ এবং ৩১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর যে নারকীয় হামলা চালানো হয়েছে তার একটি প্রধান ফ্যাক্টর ছিল উদয় কুসুম বড়ুয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উস্কানিমূলক একটি বক্তব্য। এ বক্তব্যের জেরে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় উস্কানিদাতা হিসেবে বিএনপি তাকে বহিষ্কার করে। মূলত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সে শিক্ষার্থীদের উপর আরও প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠবে যা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের হুমকির মুখে ফেলবে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির এ আচরণ প্রমাণ করে যে অন্যায় কাজ করলে পরিস্থিতির মুখে বহিষ্কার করা হয় এবং দলের প্রয়োজনে অন্যায়কারীকে আবার দলে সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত এটি একটি আইওয়াশ।
তবে এ ঘটনায় উদয় কুসুম বড়ুয়া হয়তো তেমন সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে জানায় চবি শাখা ছাত্রদল। শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন "উদয় কুসুম বড়ুয়ার মতো একজন সিনিয়র নেতা যিনি বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাকেও যেহেতু বহিষ্কার করা হয়েছিল এতে বিএনপি প্রমাণ করেছে বিএনপি কোন অপরাধীকে ছাড় দেয় না। এতদিন পর বিএনপি তদন্তের মাধ্যমে হয়তো খুঁজে পেয়েছে তার তেমন কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তাই তার শাস্তি শেষ হওয়ার পরে তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। বিএনপি'র ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের জন্যও এ সিদ্ধাম্ত একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যেন ভবিষ্যতে তারা কোন অন্যায় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়।"
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চবি সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, "এটা বিএনপির সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। হামলার বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে। উদয় কুসুম বড়ুয়াকে বিচারের আওতায় আনতে সহযোগিতা না করে বিএনপি ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমরা তা মনে রাখবো।"
এ সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন ও তৎকালীন প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফও আহত হন। ওই সময় স্থানীয়দের পক্ষ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়ার ভাইরাল হওয়া বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘কুলাঙ্গার’ বলে সম্বোধন করে বলেন, "চট্টগ্রামের ভিসি সাহেব এসে দেখে গেছেন, তদন্ত করে গেছেন। আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত, সড়ক অবরোধ থাকবে। কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয় না। আমরা ভিসির সঙ্গে আলোচনা করলে, ভিসির বাপেও এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এ উশৃঙ্খল কুলাঙ্গার ছেলেগুলো ভিসিকেও মানে না। আমরা বলতে চাই গতকাল সারারাত ধরে এই কুলাঙ্গার ছেলেরা আমাদের গ্রামের মা-ভাইবোনের ওপর নিরস্ত্র হামলা করেছে, এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।"
ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, "মনে রাখবেন আমাদের মধ্যে ষড়যন্ত্র হতে পারে। কেউ কেউ দলের প্রশ্ন আনতে পারে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, আমরা জোবরার সন্তান, এখানে কোনো দল নেই। আমরা সবাই এলাকার নাগরিক, আমাদের এলাকার নিরাপত্তার জন্য আমরা সবাই এক ও অভিন্ন। আমরা কোনো ধরনের ফ্যাসিস্ট শক্তির কাছে মাথা নত করব না। অনতিবিলম্বে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে, আমরা জুবরার জনগণ বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করব। এর জন্য জীবন গেলে জীবন দেব। আমার মা-বোনের ইজ্জতের চেয়ে জীবন বড় নই, আমার এলাকার সন্তানের চেয়ে আমার জীবন বড় নই, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার জন্য আমরা ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছি। এখন আমি ভিসির সঙ্গে কথা বলব। সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘন্টা সময় দিচ্ছি, না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব এবং রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করব। সোজা আঙুলে ঘি উঠে না। কোনো আন্দোলন বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, কোনো আলোচনা-আপোষের মাধ্যমে সমাধান পাবেন না। এ আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত থাকার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।"
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।