বরফশীতল দেশে উষ্ণতার রহস্য, আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের ঐতিহ্যবাহী স্টু পাজা রেসিপি!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পাজা, যা আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানে "Khash" নামে পরিচিত, শুধু একটি খাবার নয় এটি প্রাচীনকাল থেকে চলা এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশেষ করে শীতকালে, যখন তুষার ঝরে বাগান ও পথগুলো সাদা হয়ে যায়, তখন পরিবার ও বন্ধুরা একত্র হয়ে পাজা রান্না ও খায়। খাবারের প্রতিটি উপাদান-পশুর জিভ, খুর ও পেট শরীরকে উষ্ণ রাখে, উচ্চ প্রোটিন ও কোলাজেন সরবরাহ করে এবং দীর্ঘকাল ধরে শক্তিশালী থাকে।
এই খাবার শুধু পুষ্টিকর নয়, বরং এতে স্থানীয় জীবনধারার ছোঁয়া ও প্রাচীন রান্নাশৈলীর অনন্য স্বাদ লুকিয়ে আছে। প্রায়শই সকালে কড়া ঠান্ডায় গরম গরম Khash খাওয়া একটি সামাজিক রীতি, যেখানে গল্প, গান এবং বন্ধুত্বের আদান-প্রদান ঘটে।
উপকরণ (৪–৫ জনের জন্য):
১. পশুর জিভ: ১–২টি
২. পশুর খুর (পা): ২–৩টি
৩. পশুর পেট (ট্রাইপ): ১–২ কাপ
৪. পানি: ৬–৮ লিটার
৫. লবণ: স্বাদ অনুযায়ী
৬. রসুন: ৬–৮ কোয়া
৭. লেবুর রস (ঐচ্ছিক): ২–৩ টেবিল চামচ
৮. গোলমরিচ গুঁড়া: ১ চা চামচ
৯. ভাজা রুটি/পিত্তা: পরিবেশনের জন্য
প্রস্তুতি ও রান্নার ধাপ-
⇨ পরিষ্কার করা:
জিভ, খুর ও পেট ভালোভাবে ধুয়ে নিন। পেটের ক্ষেত্রে লেবুর রস বা ভিনেগার ব্যবহার করলে গন্ধ কমে যায়। লোম ও অতিরিক্ত চর্বি ছেঁটে নিন।
⇨ প্রাথমিক সিদ্ধ: খুর ও পেট ১–২ ঘন্টা ঠাণ্ডা জলে ভিজিয়ে রাখুন। জিভও হালকা লবণযুক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
⇨ দীর্ঘ সময় ধরে রান্না:
বড় পাত্রে সব মাংস রাখুন এবং পর্যাপ্ত পানি ঢালুন। হালকা আঁচে ৪–৫ ঘণ্টা সিদ্ধ করুন। মাঝে মাঝে ফেনা তুলে ফেলুন।
⇨ পেট ও জিভ যোগ: পেট ও জিভ ঢেলে আরও ২–৩ ঘণ্টা হালকা আঁচে রান্না করুন। এতে স্টু ক্রিমি ও স্বাদে সমৃদ্ধ হয়।
⇨ মশলা ও ফিনিশিং: শেষ পর্যায়ে রসুন, লবণ ও গোলমরিচ যোগ করুন। চাইলে লেবুর রস ছিটিয়ে স্বাদ তাজা করুন।
পরিবেশন ও উপভোগ:
গরম গরম পরিবেশন করুন, ভাজা রুটি বা পিত্তার সঙ্গে। Khash খাওয়া শুধু পুষ্টিকর নয়, সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় করে। প্রায়শই লোকেরা সকালের দিকে খায়, ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরকে উষ্ণ রাখে।
পাজা/Khash–এর প্রতি অংশে উচ্চ কোলাজেন থাকে, যা হাড় ও ত্বকের জন্য উপকারী। আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান–যেখানে পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়। খাবারের প্রক্রিয়া প্রায় ৬–৮ ঘন্টা সময় নেয়, তাই এটি ধৈর্য, পরিচর্যা ও প্রথার মিলনের প্রতীক। কিছু সংস্করণে, স্থানীয় উদ্ভিজ্জ বা লেবু দিয়ে স্বাদ আরও তাজা করা হয়।
পাজা (Pacha/Khash) শুধু এক স্টু নয়; এটি ঐতিহ্য, পুষ্টি এবং সামাজিক বন্ধনের এক অমোঘ সংমিশ্রণ। যদিও এটি রান্না করা সময়সাপেক্ষ, স্বাদ, স্বাস্থ্য ও ঐতিহ্যবাহী উপস্থাপনা একসাথে পাওয়া যায়। শীতকালে গরম গরম পাজা খাওয়া কেবল শরীরকে উষ্ণ রাখে না, বরং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে মুহূর্তগুলো আরও স্মরণীয় করে তোলে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।