জাবিতে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে গান বন্ধ করতে বলায় প্রক্টরকে গালি

জাবিতে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে গান বন্ধ করতে বলায় প্রক্টরকে গালি
  • Author, জাবি প্রতিনিধি
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক বিচার-গানের আসরে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে শব্দ কমানো ও দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানালে—বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের প্রতি অসৌজন্যমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, হুমকি দেওয়া এবং জাকসু নেতাকে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রবিবার (৩০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত্বর এলাকায় বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত "বাউলের দ্রোহ" নামে এক বিচার গানের আসর বসানো হয়।

জানা যায়, বাউল সাধক আবুল সরকার বয়াতিকে গ্রেফতার ও দেশব্যাপী বাউল সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রাতভর এই বাউল গানের আসর  বসানো হয়। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল থেকেই পরিবহন চত্ত্বরে উচ্চ শব্দে গান বাজানো শুরু হয়। সময় বাড়ার সাথে সাথেই গানের শব্দ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আশেপাশে কয়েকটি আবাসিক হল থাকায় এবং অনেকের বিভাগে চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীরা অতিষ্ট হয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ জানান।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড কামরুল আহসানের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম রাশিদুল আলমসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, জাকসু নেতৃবৃন্দ ও কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে যান।

এদিকে রাত দেড়টা নাগাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রক্টর শিক্ষার্থীর ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আয়োজকদের গানের শব্দ কমিয়ে আনতে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান বন্ধের অনুরোধ জানালে আয়োজকরা প্রক্টরের সাথে ঔদ্ধত্য আচরণ করেন এবং উচ্চবাচ্য করেন। সেইসাথে জাকসুর কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতিকে অশালীন ভাষায় গালি দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শিক্ষার্থীদের অধিকার খর্ব করে রাতভর গান বাজানোর কোন এখতিয়ার আয়োজকদের নেই বললে আয়োজক কমিটির সদস্য সজিব আহমেদ জেনিচ অশালীন গালি দিয়ে প্রক্টরকে হুমকি দেয় এবং অনুষ্ঠান সারারাত পর্যন্ত চালানোর ঘোষণা দেয়। 

সেইসাথে তিনি হুমকি দেন সারারাত অনুষ্ঠান চালাবেন এবং কে তা বন্ধ করবে তাদের দেখে নেওয়ারও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং ধর্মীয় দাঙা লাগানোর পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছেন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার কেউ স্ব শরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে সামনে গিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ৫২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তুহিন আহমেদ বলেন, "আমরা অবাক হয়ে গেছি এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রক্টরের সাথে এ কি ধরনের আচরণ করতছে। শুধু গায়ে হাত তোলা বাকি আছে। অনেকেই প্রক্টরের কাছে তেড়ে যাচ্ছে।"

তিনি আরও বলেন, "প্রক্টরকে হুমকি দিয়ে এরা বলতেছে উচ্চশব্দে সারারাত গান চলবে, পারলে ঠেকান।"

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোতে মধ্যরাত পর্যন্ত গান বাজানোর সমালোচনা করে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানান। তারা  গানের শব্দের মাত্রা সহনীয় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বন্ধের অনুরোধ জানান।

এছাড়া জাকসুর ভিপি জিএস সাংস্কৃতিক  সম্পাদকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে গান বাজানোর সমালোচনা করে শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তা বন্ধের অনুরোধ জানান।

এদিকে ইসলামকে অবমাননাকারী বাউল আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে করা গতকালের প্রোগ্রামটি উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং উস্কানিমূলক ছিল বলে অভিযোগ করেন জাকসুর কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতি। 

চিশতি বলেন, "আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য অনুষ্ঠান হলেও গতকালের অনুষ্ঠিতটি ছিল ভিন্ন রকমের। ইসলামকে অবমাননাকারী বাউল আবুল সরকারের মুক্তির জন্য তারা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ইচ্ছা করেই গতকালের অনুষ্ঠান করেছিল।"

তিনি আরও বলেন, "শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রক্টর স্যারসহ আমরা তাদের কাছে গিয়ে শব্দ কমিয়ে এবং দ্রুত প্রোগ্রাম শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দেখে তারা আরও শব্দ বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমাদের দিকে তেড়ে এসেছিল। একপর্যায়ে আমাকে অশালীন গালিগালাজ করেছিল।"

তিনি বলেন, "আমরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং তাদের বলেছি পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীদেরই রোষানলে পড়তে হবে।"

অন্যদিকে, গতকালের শান্তিপূর্ণ গানের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সজিব আহমেদ জেনিচ। 

জেনিচ বলেন, "গতকাল আসলে তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে গতকাল জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন ছিল। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রক্টর গান বন্ধ করতে পারে নাই, কিন্তু রাশেদুল আলম আসছিল গান বন্ধ করতে। তাই আমরা শুধু প্রতিবাদ জানিয়েছি।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের জানানোর পরে আমরা শব্দ সহনীয় পর্যায়েই রেখেছিলাম। তবুও আমাদের ব্লেইম দেওয়া হয়েছে। এর আগে অনেকেই রাত ২ টা পর্যন্ত প্রোগ্রাম চালিয়েছে সেখানে কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যা শুধু আমাদের ক্ষেত্রেই। আমরা মনে করি এসব কিছুই উদ্দেশ্যমূলক।"

এদিকে অশালীন কথাবার্তা বলে এবং শিক্ষকের সাথে নীতি বিবর্জিত কর্মকাণ্ড করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও সম্মান নষ্ট করার অধিকার কারো নেই বলে মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম রাশিদুল আলম সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা ও বিধিনিষেধ মেনে চলার আহবান জানান।

সার্বিক বিষয়ে অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হলো দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসেই থাকেন। তাই তাদের নিরাপত্তা, সুবিধা অসুবিধার বিষয়টি আমাদের ভাবতে হয়। আমরা গতকাল 'বাউলের দ্রহ' অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের কাছে অনুরোধ করেছি প্রোগ্রামটি দ্রুত শেষ করার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা রাখেননি। এটা মোটেও ভালো কিছু নয়।"

তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সম্মান আছে। সেই সম্মান নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। আমাদের একজন শিক্ষার্থী গতকাল অশালীন মন্তব্য করেছে। এটা অগ্রহণযোগ্য। আমরা চাই না এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর ঘটুক।"

তিনি বলেন, "আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্দেশনা জারি করবো যেন শব্দের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে না যায়। আর সময়সীমা ১০ টা থেকে বাড়িয়ে রাত ১১ টা করার পরিকল্পনা করছি।"

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ