Indian Khichdi: সহজ খাবার, কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর-আয়ুর্বেদের নিরাময়ের চিরন্তন উপাদান!

Indian Khichdi: সহজ খাবার, কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর-আয়ুর্বেদের নিরাময়ের চিরন্তন উপাদান!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ভারতের গৃহস্থ রান্নাঘরে এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলো আমাদের সংসার, স্মৃতি এবং অসুস্থতার দিনগুলোকে একই সঙ্গে ধারণ করে। খিচুড়ি তারই একটি নরম, স্নিগ্ধ, আরামদায়ক নাম। ঝড়-বৃষ্টির দিন, জ্বর-কাশির সময়, কিংবা বহুদিন না খেয়ে কাজে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরে যেই খাবারকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয় খিচুড়ি তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এই নিরাপত্তা কি শুধু পরিচিত স্বাদে? না। খিচুড়িকে বিশেষ করে তুলেছে তার হজমবান্ধব রূপ, পুষ্টি-সমন্বয়, খাদ্যের বৈজ্ঞানিক গঠন, আর আয়ুর্বেদের 'নিরাময়' দর্শনের সাথে গভীর সংযোগ।

ডাল + শস্য = সম্পূর্ণ প্রোটিন। এটি খিচুড়ির সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক গুণ। চাল, মিলেট বা শস্যে থাকে কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড, ডালে থাকে বাকিগুলো।
দুটো একসঙ্গে রান্না হলে শরীর পায় Complete Protein। অর্থাৎ, এক প্লেট খিচুড়ি দেহকে সেই প্রোটিন দেয়, যেটা সাধারণত নিরামিষভোজীদের পাওয়া কঠিন।

ডাল, চাল দুটোই খুব বেশি সময় সিদ্ধ হয়। ফলে স্টার্চ ভেঙে যায়, ফাইবার নরম হয়ে যায়।এতে করে পেটের উপর চাপ পড়ে না, শরীর দ্রুত শক্তি পায়
এবং  গ্যাস, অ্যাসিডিটি, অম্লতা কম হয়। গরম খিচুড়ির বাষ্প, ঘি-এর গন্ধ, নরম টেক্সচার সব মিলিয়ে এটি শরীরে এক Relaxation Response সৃষ্টি করে। আবার তেলে ভাজা কিছু নেই, অতিরিক্ত লবণ নেই, জটিল প্রক্রিয়া নেই। ফলে শরীর সহজে প্রক্রিয়া করতে পারে। খিচুড়ি রান্না হয় প্রচুর পানিতে। এটি পেট ভরায়, কিন্তু শরীরকে ডিহাইড্রেট হতে দেয় না।

আয়ুর্বেদে খিচুড়িকে বলা হয় সত্ত্বিক, সহজপাচ্য, দোষ-সাম্য বজায় রাখা খাদ্য।খিচুড়ি হজমের শক্তি কমে গেলে সেই আগুনকে পুনরায় শক্তিশালী করে। শরীরে জমে থাকা ভারী খাবারের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। ঘি ও গরম খাবার মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে আরাম আনে বলে ধরা হয়। তাছাড়া ডিটক্স থেরাপির সময় খিচুড়ি দেওয়া হয় কারণ এটি পুনরুদ্ধারের খাবার।
 

রেসিপি-দুটি স্টাইলে

১) আয়ুর্বেদিক Healing Khichdi (নিরাময়-কেন্দ্রিক খিচুড়ি): এই রেসিপিটি হালকা, খুব সহজে হজমযোগ্য এবং ডিটক্স ও অস্বস্তির সময় উপযোগী।

উপকরণ (২ জনের জন্য):

◑ চাল বা মিলেট – ½ কাপ

◑ মুগ ডাল – ½ কাপ

◑ পানি – ৪–৫ কাপ

◑ ঘি – ১ টেবিল চামচ

◑ হলুদ – আধা চা চামচ

◑ লবণ – স্বাদমতো

◑ আদা – ১ চা চামচ (কুচানো)

◑ জিরা – ½ চা চামচ

 

রান্না প্রণালী:

ডাল ভালো করে ধুয়ে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।হাঁড়িতে ঘি গরম করে জিরা ফোড়ন দিন।এরপর আদা দিয়ে অল্প ভাজুন।চাল ও ডাল একসাথে ঢেলে হালকা নেড়ে নিন। পানি, হলুদ, লবণ যোগ করুন।ঢাকনা দিয়ে কম আঁচে ২৫–৩০ মিনিট রান্না করুন।খিচুড়ি যেন নরম, আটালো ও পুষ্টিকর থাকে।

 

 

২) Traditional Indian Comfort Khichdi (সুগন্ধি, ঘন এবং পুষ্টিকর)

উপকরণ:

◑ চাল – ১ কাপ

◑ মুগ ডাল – ¾ কাপ

◑ আলু – ১টি (কুচি করা)

◑ গাজর – ½ কাপ

◑ ঘি – ২ টেবিল চামচ

◑ হলুদ – ১ চা চামচ

◑ লবণ – স্বাদমতো

◑ আদা বাটা – ১ চা চামচ

◑ জিরা – ১ চা চামচ

◑ তেজপাতা – ১টি

◑ পানি – ৪–৫ কাপ

 

রান্না প্রণালী:

ডাল সামান্য ভেজে নরম বাদামী করলে খিচুড়ির গন্ধ দ্বিগুণ বাড়ে। হাঁড়িতে ঘি গরম করে জিরা, তেজপাতা ফোড়ন দিন। আদা বাটা দিয়ে ২০–৩০ সেকেন্ড ভাজুন। এবার সবজি দিয়ে নেড়ে নিন। চাল-ডাল যোগ করে ২ মিনিট ভাজা দিন। পানি, হলুদ, লবণ দিয়ে ঢেকে দিন।মাঝারি আঁচে ২৫–৩০ মিনিট রান্না করুন। শেষে চাইলে একটু ঘি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

খিচুড়ি কোনও চটকদার ফুড নয়, তবে এর ভেতরে লুকানো আছে—পুষ্টিগণিত, মানবশরীরের রসায়ন, এবং প্রকৃতির সত্ত্বিক শক্তি। শরীর অসুস্থ হলে খিচুড়ি আরামের খাবার, মানসিক চাপ বাড়লে এটি শান্তির খাবার, হজম খারাপ হলে এটি পুনরুদ্ধারের খাবার, আর ব্যস্ত জীবনে এটি সামান্য সময় নিয়ে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ