Dry Skin? আর নয়! শীতকালে ত্বককে রাখুন নরম, মসৃণ ও সুস্থ

Dry Skin? আর নয়! শীতকালে ত্বককে রাখুন নরম, মসৃণ ও সুস্থ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শীত এলে প্রথম যে অস্বস্তিটা মানুষ টের পায়, তা হলো ত্বকের রুক্ষতা। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মনে হয়, মুখ যেন নিজের স্বাভাবিক নরম ভাবটা হারিয়ে ফেলেছে। হাত-পা টানটান লাগে, গালে হালকা টান ধরে, ঠোঁট ভেঙে যায়, আর গোসলের পর মনে হয় যেন ত্বকের সব আর্দ্রতা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। ত্বকের এই ড্রাইনেস শুধু সৌন্দর্যের সমস্যা নয়; বরং এটি আমাদের ত্বকের জীববিজ্ঞান, আবহাওয়া, পরিবেশ ও দৈনন্দিন অভ্যাসের সম্মিলিত প্রভাব।

ত্বক কেন শুষ্ক হয়-

১. ত্বকের প্রাকৃতিক বাধা (Skin Barrier) দুর্বল হওয়া। ত্বকের একেবারে ওপরের স্তর,হর্নি লেয়ার—একটি অদৃশ্য ঢালের মতো কাজ করে। এর মধ্যে থাকে লিপিড, সিরামাইড, কোলেস্টেরল ও 'ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজিং ফ্যাক্টর' (NMF)।
শীতে আর্দ্রতা কমে গেলে এই লেয়ার পানি ধরে রাখতে পারে না। ফলে পানি দ্রুত ত্বকের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। এটাকে বলা হয় ট্রান্স-এপিডার্মাল ওয়াটার লস। এর ফলেই ত্বক টানটান লাগে।

২. আবহাওয়ার অতিরিক্ত শুষ্কতা। শীতের বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। শুষ্ক পরিবেশ ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে পানি টেনে নিতে থাকে, ঠিক যেমন রোদে রেখে দিলে কাপড় দ্রুত শুকিয়ে যায়।

৩. গরম পানিতে গোসল। উষ্ণ পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলগুলো গলিয়ে ফেলে। নিয়মিত গরম পানিতে গোসল করলে ত্বকের সুরক্ষা স্তর দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৪. ভুল স্কিনকেয়ার ব্যবহার। মুখ ধোয়ার পরপরই যদি ত্বকে কিছু না লাগানো হয়, ত্বক দ্রুত পানি হারাতে শুরু করে। এছাড়া অতিরিক্ত সাবান, হার্ড ক্লিনজার, স্ক্রাবার সবকিছুই ড্রাইনেস বাড়ায়।

৫. বয়স ও হরমোনাল পরিবর্তন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে তেল উৎপাদন কমে যায়। একইভাবে কিছু হরমোনাল পরিবর্তনও ত্বকের আর্দ্রতাকে প্রভাবিত করে।
 

শীতে ত্বক আর্দ্র রাখার কার্যকর উপায়-

১. ত্বক পরিষ্কারের পর ১ মিনিটের মধ্যে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

এই নিয়মকে বলা হয় "ময়েশ্চারাইজার উইন্ডো"।
মুখ বা হাত ধোয়ার পর যতক্ষণ পানি পুরোপুরি বাষ্পীভূত হয়নি, ঠিক সেই সময়ের মধ্যেই ময়েশ্চারাইজার লাগালে পানি ত্বকের ভেতর আটকে যায়। এতে ত্বক ঘণ্টার পর ঘণ্টা নরম থাকে।

 

২. ত্বকের জন্য সঠিক ধরনের ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।

একটি ভালো ময়েশ্চারাইজারে থাকা উচিত তিন ধরনের উপাদান—

(ক) হিউমেকট্যান্ট, যা পানি টেনে আনে। যেমন:

গ্লিসারিন, হায়ালুরনিক অ্যাসিড, ল্যাক্টিক অ্যাসিড, বিটেইন, হিউমেকট্যান্ট ত্বকের উপরের স্তরে পানি ধরে রাখে।

(খ) ইমোলিয়েন্ট, ত্বক মসৃণ করে। যেমন: স্কোয়ালেন, ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রাকৃতিক তেল
 

অ্যালো ভেরা
এগুলো ত্বকের রাফনেস কমায়।

(গ) অক্লুসিভ, পানিকে ভেতর থেকে লক করে। যেমন: শিয়া বাটার, পেট্রোলিয়াম জেলি, ল্যানোলিন, প্রাকৃতিক মোম/বাটার। শীতে এসব উপাদান অসাধারণ কাজ করে।

 

৩. গরম নয় হালকা গরম পানিতে গোসল করুন।

গরম পানি ত্বক থেকে সুরক্ষাকারী তেল ধুয়ে ফেলে।
হালকা গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বকের তেল নষ্ট হয় না এবং অ্যাকোয়াস ব্যারিয়ার অট intact থাকে।

 

৪. সপ্তাহে ২ বার হালকা এক্সফোলিয়েশন! ত্বকের ওপর জমে থাকা মৃত কোষ আর্দ্রতা যেমন আটকে রাখতে দেয় না, তেমনি ক্রিম লাগালেও শোষে না।কিন্তু অতিরিক্ত স্ক্রাব করলে ড্রাইনেস আরও বাড়ে। তাই মৃদু, গ্রানুল-ফ্রি, লো-স্ট্রিপ এক্সফোলিয়েন্টই ব্যবহার করুন।

 

৫. ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করুন। শীতে ঘরের বাতাস খুব দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। একটি সহজ পরিবর্তন— রুমে একটি বাটি ভরা পানি রাখা বা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার ঘরের আর্দ্রতা বাড়িয়ে দেয়। ঘরের আর্দ্রতা বাড়লে ত্বক রাতারাতি নরম হয়ে যায়।

 

৬. ঠোঁটের ড্রাইনেস কমাতে 'বাম সিলিং' টেকনিক!

ঠোঁট অনেক নরম টিস্যু দিয়ে তৈরি, তাই দ্রুত পানিশূন্য হয়।কার্যকর উপায়-

 রাতে সাধারণ পানি বা হালকা লোশন দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিন। তারপর লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে সিল করুন। এই পদ্ধতি পুরো রাত পানি ধরে রাখে।

 

৭. খাবারের মাধ্যমে ত্বকে আর্দ্রতা ফেরান।

ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার, বাদাম, আখরোট, বীজজাতীয় খাবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের ব্যারিয়ার শক্তিশালী করে। 

◑ পানি, কিন্তু পরিমাণের চেয়ে নিয়মিততা গুরুত্বপূর্ণ। একবারে অনেক পানি খেলে ত্বক নরম হয় না; বরং ধীরে ধীরে, সারাদিনে ছোট পরিমাণ গ্রহণ ত্বকের আর্দ্রতা স্থায়ী করে।

◑ হাইড্রেটিং ফলমূল- শসা, কমলা, পেয়ারা, তরমুজ এগুলো শরীরে ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখে।

 

৮. সাবান পরিবর্তন করুন, ব্যবহার করুন মাইল্ড ক্লিনজার।

হার্শ সাবান বা সালফেট-সমৃদ্ধ ফোমিং জেল ত্বককে রুক্ষ করে।
শীতে ব্যবহার করুন কম ফেনাযুক্ত, নন-স্ট্রিপ, হালকা ময়েশ্চারাইজিং
ক্লিনজার।

 

৯. 'লেস ইজ মোর', শীতে স্কিনকেয়ারে কম প্রোডাক্টই বেশি ফল দেয়।

অনেকগুলো কসমেটিক প্রোডাক্ট একসঙ্গে ব্যবহার করলে ত্বকের ব্যারিয়ার বিভ্রান্ত হয়। শীতে সহজ ৩-ধাপ পদ্ধতি সেরা—

⇨হালকা ক্লিনজিং

⇨ আর্দ্রতা টেনে আনা (হিউমেকট্যান্ট)

⇨ পানি সিল করা (বাটার বা ক্রিম)
 

সরল রুটিন সর্বদা স্থায়ী ফল দেয়।

রাতে ত্বক নিজের মেরামত প্রক্রিয়ায় থাকে। তাই রাত্রিকালীন রুটিন কার্যকরী হওয়া জরুরি। রাতের রুটিন উদাহরণ- হালকা ক্লিনজিং, গ্লিসারিন বা হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ টোনার, সেরাম, মোটা ক্রিম বা বাটার, প্রয়োজনে ঠোঁট ও চুলের গোড়ায় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার ।

 

শীতে কোন ভুলগুলো ত্বকের ড্রাইনেস আরও বাড়ায়?

◑ গরম পানিতে দীর্ঘসময় গোসল করা

◑ বারবার স্ক্রাব করা

◑ অ্যালকোহল-সমৃদ্ধ কসমেটিক ব্যবহার

◑ মুখ ধোয়ার পর ত্বক শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা

◑ খালি ত্বকে বাইরে যাওয়া

◑ বাতাসে দীর্ঘসময় থাকা

◑ অপর্যাপ্ত পানি পান

◑ অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
 

এসব অভ্যাস ত্বককে দ্রুত শুষ্ক করে তোলে।
 

ত্বকের শুষ্কতা শুধু সৌন্দর্য নয়, বরং ত্বকের সুরক্ষা স্তর দুর্বল করে, সংবেদনশীলতা বাড়ায়, অ্যাজমা ও অ্যালার্জি আক্রান্তদের স্কিন ফ্লেয়ার-আপ বাড়ায়, মাইক্রোক্র্যাক তৈরি করে, জীবাণুর প্রবেশ সহজ করে। তাই এটিকে গুরুত্বসহকারে দেখা প্রয়োজন।

শীতে ত্বকের ড্রাইনেস এমন একটি সমস্যা, যা সবার কাছেই পরিচিত। ত্বক আসলে আমাদের শরীরের একটি জীবন্ত প্রাচীর, যা ঠান্ডা, বাতাস, ধুলো, ব্যাকটেরিয়া সবকিছুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এই প্রাচীর যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখনই শুরু হয় টান, চুলকানি, রুক্ষতা ও খসখসে অনুভূতি। তবে ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব, এবং তা খুব সহজ কিছু অভ্যাসে। সঠিক প্রোডাক্ট নির্বাচন, গরম পানি এড়িয়ে চলা, হিউমিডিফায়ার ব্যবহার, রাতে ভালো রুটিন- এসব ছোট পরিবর্তন ত্বককে আশ্চর্যভাবে রক্ষা করে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ