অটিজমের ধোঁয়াশা ভেঙে দিল নতুন বৈজ্ঞানিক সত্য!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
অটিজম শব্দটি শোনলেই অনেকের মনে আসে “সামাজিকভাবে ব্যর্থ” বা “ভালো যোগাযোগ করতে পারবে না”-এই ধরনের প্রচলিত ধারণা। কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল এবং বিজ্ঞানসম্মত। অটিজম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল অবস্থা, যা মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যপ্রণালীকে প্রভাবিত করে। এটি রোগ নয়, তবে এর ফলে সমাজের সঙ্গে মিলিয়ে চলার পদ্ধতি অন্যরকম হয়। বছর-পাঁচেক আগে পর্যন্ত সাধারণ জনসাধারণ এবং অনেক শিক্ষাব্যবস্থা অটিজমকে কেবল শারীরিক বা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবে দেখতো। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজমের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের মস্তিষ্কের স্নায়বিক সংযোগ অন্যরকমভাবে গঠিত থাকে, যা তাদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি এবং আবেগ প্রকাশের ধরনকে ভিন্ন করে।
প্রচলিত ধারণা হলো, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা সামাজিকভাবে অনভ্যস্ত। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, তাদের মধ্যে অনেকের জ্ঞান ক্ষমতা স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। তাদের চিন্তাভাবনার ধরণ ভিন্ন। একই বিষয়কে সাধারণ মানুষ যেমন দেখে, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্যাটার্ন, শব্দ বা সংখ্যার প্রতি তাদের মনোযোগ বিশেষত শক্তিশালী হতে পারে।
আবার অনেকেই মনে করে, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বলতে পারে না বা যোগাযোগে সমস্যা হবে। এটি সবসময় সত্য নয়। অনেক অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে, তবে তাদের ভাষার ব্যবহার বা সামাজিক সংকেত বুঝতে পারার ধরণ ভিন্ন। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সূক্ষ্ম ভাষাগত নিপুণতা বা উচ্চতর ভাষাগত স্মৃতিশক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম।
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরিবেশের প্রতি অতিসংবেদনশীল হতে পারে। শব্দ, আলো, গন্ধ বা স্পর্শের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি বা কম হতে পারে। এটি প্রচলিত অসামাজিকতা নয়, বরং একটি নিউরোলজিক বৈশিষ্ট্য, যা তাদের মনোভাব, শেখার ধরণ ও দৈনন্দিন অভ্যাসকে প্রভাবিত করে।
সামাজিক যোগাযোগে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে একাগ্রতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও সৃজনশীলতায় অনন্য। উদাহরণস্বরূপ, গণিত, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, বিজ্ঞান বা শিল্পের ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ সাফল্য দেখাতে পারে। প্রচলিত ধারণা যেমন “অটিজম মানে অক্ষম”-এটি সম্পূর্ণ ভুল।
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা কখনও কখনও সামাজিক সংকেত যেমন চোখের যোগাযোগ, শরীরী ভাষা বা হাসি-আনন্দের প্রকাশে ভিন্নতা দেখাতে পারে। সমাজের প্রথাগত মানদণ্ডের সঙ্গে মিলিয়ে চলা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে তারা অনুভূতি বোঝে না বা সম্পর্ক গড়তে পারে না। বরং তাদের অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশের ধরন ভিন্ন, যা বোঝার জন্য আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় অটিজমকে রোগ বা ব্যাধি হিসেবে না দেখে “নিউরোডাইভার্সিটি” বা “মস্তিষ্কের ভিন্নতা” হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি বোঝায়, অটিজম আক্রান্ত মানুষদের মস্তিষ্ক অন্যভাবে কাজ করে, যা তাদের ক্ষমতা, আগ্রহ এবং শেখার পদ্ধতিকে ভিন্ন করে তোলে।
চিকিৎসা ও সহায়তা:
অটিজমের জন্য কোনও রোগ নিরাময় নেই, কারণ এটি রোগ নয়। তবে সহায়ক শিক্ষণ, থেরাপি, সামাজিক সমর্থন ও পরিবারের মনোযোগ অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনকে সহজ ও স্বতন্ত্র করতে পারে। আংশিক সমস্যার ক্ষেত্রে যেমন সামাজিক যোগাযোগ বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ থেরাপি এবং প্রশিক্ষণ কার্যকর।
অটিজম কোনও ব্যাধি নয়, বরং নিউরোডাইভার্সিটি বা মস্তিষ্কের ভিন্নতা। এটি সমাজে বোঝাপড়া ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, কিন্তু অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও প্রতিভা প্রায়শই বিশেষভাবে অনন্য। সচেতনতা, সহানুভূতি এবং বৈচিত্র্যকে স্বীকার করার মাধ্যমে আমরা অটিজম আক্রান্ত মানুষের জীবনকে সহজ, স্বাবলম্বী ও পূর্ণাঙ্গ করতে পারি। প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে সত্যি বোঝা দরকার। অটিজম মানে অক্ষম নয়, এটি কেবল ভিন্নভাবে চিন্তা করার, শেখার এবং অনুভব করার ক্ষমতা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।