গোলাপ ফুলের কাটিং পানিতে রুট করানো, যত্ন ও গোলাপ গাছের বিস্তারিত পরিচর্যা

গোলাপ ফুলের কাটিং পানিতে রুট করানো, যত্ন ও গোলাপ গাছের বিস্তারিত পরিচর্যা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গোলাপ হলো এমন এক ফুল যার সৌন্দর্যের সঙ্গে ধৈর্য, পরিচর্যা ও সঠিক কৌশল মিলেই তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ। অনেকেই মনে করেন গোলাপের চারা তৈরি করা কঠিন; কিন্তু সঠিক নিয়মে চললে পানিতেই গোলাপের কাটিং থেকে শিকড় গজিয়ে নতুন গাছ তৈরি করা যায় খুব সহজে।

কোন ধরনের কাটিং নিলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?

গোলাপের কাটিং সফলভাবে রুট করাতে হলে কাটিংটি হতে হবে-

⇨ সেমি–হার্ডউড, অর্থাৎ পুরোপুরি নরমও নয়, আবার শক্ত কাঠের মতোও নয়।

⇨ ডাঁটার রঙ সাধারণত হালকা সবুজ বা হালকা বাদামি।

⇨ ডায়ামিটার প্রায় পেন্সিলের মতো মোটা
⇨ কমপক্ষে ৪–৬ ইঞ্চি লম্বা। 

⇨ ২–৩ টি নোড থাকা জরুরি।

⇨ কোনো রোগ বা পোকা যেন না থাকে।

এই ধরনের ডাঁটা পানিতে রাখা হলে কোষ বিভাজন সহজে হয় এবং রুটিং দ্রুত শুরু হয়।
 

কীভাবে কাটিং প্রস্তুত করবেন?

১. কাটিং নেওয়ার নিচের অংশটি ৪৫ ডিগ্রি কোণে কেটে নিন। এতে পানির শোষণ বাড়ে।

২. নিচের পাতাগুলো তুলে ফেলুন। উপরে ১–২টি পাতা রাখলে ভালো।

৩. কাঁটা থাকলে সরিয়ে দিন।

৪. কাটার পর কাটিংকে ৩০ মিনিট বাতাসে রেখে হালকা শুকিয়ে নিতে পারেন, এতে কোষগুলো স্থিতিশীল হয়।

 

কাটিংকে পানিতে রেখে রুট করানোর উপায়-

যা লাগবে:

◑ কাঁচের স্বচ্ছ বোতল/গ্লাস।

◑ পরিষ্কার পানি।

◑ ছায়া–আলোযুক্ত ঠাণ্ডা জায়গা।

 

পদ্ধতি:

⇨ সাধারণ কলের পানি হলে তা ৫–৬ ঘণ্টা রেখে ক্লোরিন কমিয়ে নিন।

⇨ কাটিংয়ের নিচের ২–৩ নোড পানি ডুবে থাকবে—এভাবে গ্লাসে রাখুন।

⇨ গ্লাসটি এমন জায়গায় রাখুন যেখানে পরোক্ষ আলো আসে কিন্তু সরাসরি রোদ পড়ে না।

⇨ ২–৩ দিনে একবার পানি পরিবর্তন করুন। পানির পরিচ্ছন্নতাই রুটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

⇨ সাধারণত ১০–২০ দিনের মধ্যে কাটিংয়ের নোড থেকে সাদা ছোট শিকড় বের হতে শুরু করে।

⇨ শিকড় ১–২ ইঞ্চি হলে কাটিংটি মাটিতে রোপণের জন্য প্রস্তুত।

 

রুটিং টাইম-কতদিনে শিকড় বের হয়?

গোলাপের জাত, গাছের বয়স ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। সাধারণত ১৫–৩০ দিন লাগে। শীতকাল বা বর্ষায় সময় বেশি লাগে।গরমে (২৫–৩০°C) রুটিং দ্রুত হয়।

 

রুট বের হবার পর কাটিং কীভাবে মাটিতে লাগাবেন?

উপযুক্ত মাটি মিশ্রণ:

◑ গার্ডেন মাটি — ৪০%

◑ ঝুরি/কোকো পিট — ৩০%

◑ বালি — ২০%

◑ গোবর/কম্পোস্ট — ১০%

 

এই মিশ্রণ গোলাপের কাটিংয়ের জন্য আদর্শ কারণ এটি-

⇨ ঝুরঝুরে থাকে

⇨ পানি বেরিয়ে যায়

⇨ শিকড় সহজে ছড়িয়ে পড়ে

 

রোপণ পদ্ধতি:

⇨ শিকড় যেন না ভেঙে যায় এই সতর্কতা নিয়ে কাটিং তুলুন।

⇨ মাটিতে ৩–৪ ইঞ্চি গর্ত করে কাটিং বসান।

⇨ মাটি হালকা চেপে দিন যাতে বাতাস জমে না থাকে।

⇨ প্রথম ৭ দিন সরাসরি রোদ দেওয়া যাবে না।

⇨ দিনে একবার হালকা পানি দিন।

 

গোলাপ গাছের পরিচর্যা-জল, সার, আলো সব কিছু বিস্তারিত:

পানি:

⇨ গরমে প্রতিদিন, শীতে ২ দিনে একবার।

⇨ সকালে পানি দেওয়া সবচেয়ে ভালো।

⇨ টব জমে থাকা পানি একেবারেই নয়, শিকড় পচে যাবে।
 

রোদ:

গোলাপ গাছ চায় কমপক্ষে ৪–৬ ঘণ্টা সরাসরি। 
 

সূর্যালোক:

আলো কম হলে ফুল ছোট হয় ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
 

সার দেওয়া:

গোলাপ গাছের তিন প্রধান প্রয়োজন-

১) নাইট্রোজেন পাতা ও নতুন ডাঁটা বাড়ায়।

২) ফসফরাস ফুল বৃদ্ধি।

৩) পটাশ রোগ প্রতিরোধ ও ডাঁটার শক্তি।
 

সার দেওয়ার নিয়ম:

⇨ মাসে ২ বার তরল সার বা কম্পোস্ট চা।

⇨ মাসে ১ বার হাড়ের গুঁড়ো/ফসফেট।

⇨ ছত্রাক দমনে মাঝে মাঝে নিমপাতার পানি।
 

গোলাপ গাছের সাধারণ সমস্যা ও সমাধান:

পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া:

◑ অতিরিক্ত পানি

◑ সূর্যের আলো কম

◑ পটাশের ঘাটতি

সমাধান: পানি কমানো, আলো বাড়ানো, তরল পটাশ দেওয়া।

 

পাতা কুঁকড়ে যাওয়া

◑ ব্ল্যাক স্পট

◑ এফিড/মাকড়

সমাধান: নিমপাতা পানি/জৈব কীটনাশক ৩ দিনে একবার স্প্রে।
 

কুঁড়ি ঝরে যাওয়া:

◑ অতিরিক্ত গরম

◑ পুষ্টির ঘাটতি

◑ পানি কম বা বেশি

সমাধান: সুষম সার, নিয়মিত পানি, ছায়া–আলো ব্যালান্স।

 

গোলাপের ফুল বেশি পাওয়ার কৌশল-

১. ডেডহেডিং, মলিন ফুল কেটে দিলে নতুন কুঁড়ি আসে।

২ . মাসে দুইবার লাইট সার।

৩. রোদে রাখার সময় নিশ্চিত করা।

৪. টবের ড্রেনেজ ঠিক রাখা।

৫. পুরনো ডাঁটায় হালকা প্রুনিং।
 

পানিতে কাটিং রুটিং:

সুবিধা:

⇨ চোখে দেখা যায় শিকড় কখন বের হচ্ছে।

⇨ পচে গেলে দ্রুত বোঝা যায়।

⇨ নতুনদের জন্য সহজ।

 

অসুবিধা:

⇨ পানির শিকড় মাটির তুলনায় নরম হয়।

⇨ টবে স্থানান্তর করলে কিছু স্ট্রেস হতে পারে।

⇨ নিয়মিত পানি না বদলালে পচন।

তবুও সঠিক নিয়ম মানলে পানির কাটিং সফলতার হার খুবই ভালো।
 

কেন গোলাপের কাটিং পানিতে রুট হয়? 

গোলাপের ডাঁটার নোডে থাকে মেরিস্টেম কোষ,যেগুলো খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে শিকড় তৈরি করতে পারে।
যখন ডাঁটার নীচের অংশ পানি পায়-

◑ কোষগুলো সক্রিয় হয়।

◑ ‘অক্সিন’ নামে উদ্ভিদ হরমোন শিকড় গজানো ত্বরান্বিত করে।

◑ নোডের টিস্যু ফেটে নতুন রুট বের হয়।এটাই হলো রুটিংয়ের মূল ভিত্তি।

 

গোলাপের কাটিং দিয়ে নতুন গাছ তৈরি। এটি শুধু একটি উদ্ভিদবিষয়ক কৌশল নয়, বরং ধৈর্য আর যত্নের চর্চা। পানিতে কাটিং রুট করানো খুবই সহজ, যদি সঠিক কাটিং নেওয়া হয়, পরিষ্কার পানি নিয়মিত বদলানো হয়, ছায়া–আলো ঠিকমতো দেওয়া হয় এবং রুট বের হলে উপযুক্ত মাটিতে রোপণ করা হয়। একবার শিকড় সফল হলে সেই কাটিং থেকে বছরের পর বছর চমৎকার ফুল পাওয়া যায়। সঠিক যত্ন নিলে গোলাপ হবে আরো ঘন, শক্ত, এবং ফুলে ভরা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ