স্ট্রেস কমানো ও সুখী জীবনযাপন চাই? জাপানিদের কৌশলগুলো শিখুন আজই!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ব্যস্ত, চাপপূর্ণ জীবনে আমরা প্রায়ই নিজের মধ্যে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক ভারসাম্যের অভাব অনুভব করি। ঘরে বসে, কাজের মাঝে বা সামাজিক জীবনের চাপের কারণে মানসিক চাপ ক্রমেই বেড়ে যায়। কিন্তু বিশ্বে এমন একটি দেশ, জাপান যেখানে মানসিক শান্তি এবং দৈনন্দিন জীবনের চাপ নিয়ন্ত্রণে এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছে। জাপানি সংস্কৃতি যে শুধু প্রযুক্তি ও শিল্পের জন্যই পরিচিত তা নয়, বরং তারা চিন্তামুক্ত জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে জীবনযাপন করে। জাপানি দর্শন, প্রাকৃতিক জীবনধারা এবং সহজাত অভ্যাসই তাদের মানসিক চাপ কমাতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। আজ আমরা আলোচনা করব জাপানি ৫টি কৌশল, যেগুলো অনুশীলন করলে আপনার মন শান্ত, মনোযোগী এবং চিন্তামুক্ত থাকবে।
১. ইকিগাই, জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজা:
ইকিগাই (Ikigai) হলো জাপানি শব্দ। এর অর্থ জীবনের প্রেরণা বা জীবনের উদ্দেশ্য। প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি উদ্দেশ্য থাকা উচিত যা তাদের প্রতিদিন উঠে দাঁড়াতে উৎসাহ দেয়। ইকিগাই শুধু পেশাগত সাফল্য নয়, বরং ব্যক্তিগত আগ্রহ, পারিবারিক দায়িত্ব ও সামাজিক সম্পর্কের সংমিশ্রণ।
ইকিগাই নির্ধারণ করলে আপনার মানসিক চাপ কমে এবং মনোযোগ স্থির থাকে। যখন জীবনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট থাকে, তখন ছোটখাটো সমস্যা বা উদ্বেগ সহজেই অগ্রাহ্য করা যায়।
অনুশীলন পদ্ধতি :
প্রতিদিন ১০ মিনিট নোটবুকের সঙ্গে বসে ভাবুন আপনি কোন কাজগুলো করতে পছন্দ করেন এবং কোন কাজগুলো আপনাকে আনন্দ দেয়।ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করুন এবং ধীরে ধীরে তা অর্জনের চেষ্টা করুন।
২. শিনরিন-ইয়োকু, বনসুন্দর পরিবেশে মন স্থির করা। শিনরিন-ইয়োকু (Shinrin-yoku) অর্থাৎ ফরেস্ট বাথিং বা বনের সান্নিধ্যে থাকার প্রক্রিয়া।জাপানে এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটালে মানসিক চাপ হ্রাস পায়, মন শান্ত হয় এবং দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি ধীর ও সচেতনভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকলে দেহে সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা আনন্দ এবং স্থিতিশীলতার অনুভূতি দেয়।
অনুশীলন পদ্ধতি :
সপ্তাহে অন্তত একবার পার্ক বা প্রাকৃতিক জায়গায় যান। মোবাইল বা অন্যান্য ডিভাইস বন্ধ রাখুন।
গাছ, বাতাস, পাখির শব্দ এবং সূর্যের আলোকে পুরোপুরি অনুভব করুন।
৩. মিনিমালিজম, অতিরিক্ত জিনিস থেকে মুক্তি।
জাপানি জীবনশৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মিনিমালিজম। বাড়ি, অফিস বা দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র যতটা সম্ভব কম রাখার প্রক্রিয়া।অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের মস্তিষ্কে অগণিত উদ্ভ্রান্তি এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করে।কম জিনিস মানে কম মনস্তাত্ত্বিক চাপ। যখন পরিবেশ গোছালো থাকে, তখন মনও শান্ত থাকে।
অনুশীলন পদ্ধতি:
প্রতি মাসে একবার বাড়ির অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলুন। কাজের জায়গা, ডেস্ক ও ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখুন। অপ্রয়োজনীয় ইমেল, সোশ্যাল মিডিয়া ফলো ও নোটিফিকেশনও সীমিত করুন।
৪. মেডিটেশন ও কনসাইস ব্রিদিং: জাপানি সংস্কৃতিতে ধ্যান ও নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি কৌশল। প্রতিদিন ৫–১০ মিনিট মেডিটেশন বা ধ্যান করলে দুশ্চিন্তা কমে। কনসাইস ব্রিদিং (conscious breathing) বা সচেতনভাবে শ্বাস নেওয়া মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়ন্ত্রিত শ্বাস নেওয়া দেহে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়, কার্ডিয়াক রিদম স্থির রাখে এবং উদ্বেগের হরমোন করটিসল হ্রাস করে।
অনুশীলন পদ্ধতি:
শুয়ে বা বসে চোখ বন্ধ করুন। নাকে শ্বাস নিন, মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। ৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন, ৪ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৪ সেকেন্ড ধীরে ছাড়ুন। দিনে দুইবার অনুশীলন করলে কার্যকারিতা বাড়ে।
৫. ওসিবি ও সুস্থ দৈনন্দিন অভ্যাস:
ওসিবি (Oshibori, Clean habits), জাপানি জীবনের ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। দৈনন্দিন অভ্যাস যেমন নিয়মিত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, হালকা ব্যায়াম ও পরিষ্কার পরিপাটি জীবন। প্রতিদিন সকালে হালকা ব্যায়াম এবং সুষম খাবার মানসিক চাপ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত ও সুস্থ জীবনধারা শরীরের এন্ডোরফিন এবং সেরোটোনিন হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে, যা চিন্তামুক্ত থাকার মূল চাবিকাঠি।
অনুশীলন পদ্ধতি:
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়া ও উঠা।খাবারে প্রচুর ফল, শাকসবজি এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা।হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটাচলা অন্তত ৩০ মিনিট।
কেন জাপানি কৌশলগুলো কার্যকর?
জাপানি জীবনধারা দুশ্চিন্তা কমাতে এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে প্রাকৃতিক উপাদান, সচেতনতা ও নিয়মিত অভ্যাসকে গুরুত্ব দেয়। তারা জীবনকে সহজ ও সরল রাখে। মানসিক চাপের ছোট ছোট উদ্রেক কমাতে দৈনন্দিন অভ্যাসে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে। প্রতিদিনের ছোট অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে।
চিন্তামুক্ত জীবন সম্ভব, যদি আমরা দৈনন্দিন জীবনে সহজ কিন্তু কার্যকর কৌশল গ্রহণ করি। জাপানির ৫টি কৌশল ইকিগাই, শিনরিন-ইয়োকু, মিনিমালিজম, মেডিটেশন ও কনসাইস ব্রিদিং, এবং ওসিবি-এটি নিশ্চিত করে। প্রতিদিন কয়েক মিনিট সচেতনভাবে এই অভ্যাসগুলো অনুশীলন করলে আপনি শুধু মানসিক চাপ কমাবেন না, বরং আপনার জীবন হবে আরও শান্তিপূর্ণ, সৃজনশীল ও পরিপূর্ণ। চিন্তামুক্ত জীবন মানে কেবল উদ্বেগহীন থাকা নয়, বরং নিজের জীবন, পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্ম হওয়া। জাপানি কৌশলগুলো সেই পথপ্রদর্শক।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।