ম্যাস ম্যাডনেস কি? গণউন্মাদের অজানা সব রহস্য উন্মোচিত!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
-
একটি গুজব, একটি উসকানিমূলক ভিডিও, কিংবা একটি ভয়, যেকোনো একটিই মুহূর্তের মধ্যে বদলে দিতে পারে হাজার মানুষের আচরণ। শান্ত মানুষও তখন ছুটতে শুরু করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে না ভেবেই, আর ব্যক্তিগত বিবেচনাও হারিয়ে যায় ভিড়ের চাপে। সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ঘটনাকেই বলা হয় “ম্যাস ম্যাডনেস”। এ অবস্থায় ব্যক্তির যুক্তিবোধ ভেঙে পড়ে এবং ভিড়ের আবেগই হয়ে ওঠে নিয়ন্ত্রক শক্তি।
ম্যাস ম্যাডনেস কোনো নতুন বিষয় নয়। ইতিহাসে মহামারি আতঙ্ক থেকে শুরু করে ধর্মীয় উন্মাদনা, রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া গুজব সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় একই প্যাটার্ন। তবে আধুনিক সময়ে প্রযুক্তির কারণে, দিন দিন এই প্রবণতা আরও দ্রুত, বিস্তৃত এবং আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ২৪ ঘণ্টার খবরের চক্র এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সংস্কৃতি ম্যাস ম্যাডনেসকে আগুনে ঘি ঢালছে। ব্যক্তিগত মনস্তত্ত্বে মানুষ যুক্তিবাদী হতে পারে, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে ঢুকলেই তা আর টিকে থাক্তে পারেনা, এটাই মূলতম্যাস ম্যাডনেসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একে বলা হয় ‘ডিইনডিভিজুয়েশন’, অর্থাৎ ব্যক্তি নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় ভুলে গিয়ে ভিড়ের অংশ হয়ে যায়। তখন সে আর নিজের কাজের সম্পূর্ণ দায় নেয় না। দায় ছড়িয়ে পড়ে অদৃশ্য এক সমষ্টির ওপর। এই মানসিক অবস্থা মানুষকে এমন কাজও করাতে পারে, যা সে একা থাকলে কখনোই করত না।
ম্যাস ম্যাডনেসের সূচনা প্রায়ই হয় অনিশ্চয়তা থেকে। যখন মানুষ নিশ্চিত তথ্যের অভাবে পড়ে, তখনই ভয় ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। ভয় মানুষের মস্তিষ্কের যুক্তিবোধের অংশকে দুর্বল করে দেয় এবং আবেগনির্ভর সিদ্ধান্তকে বেশি প্রাধান্য দেয়। নিউরোসায়েন্সের ভাষায়, তখন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যকারিতা কমে যায় এবং অ্যামিগডালা অর্থাৎ ভয়ের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ফলে মানুষ সত্যতা যাচাই না করেই বিশ্বাস করতে শুরু করে এবং প্রতিক্রিয়া জানায়, এমনকি কখনো কখনো সহিংসও হয়ে ওঠে। ভিড়ের আচরণে অনুকরণ একটি বড় ভূমিকা রাখে। ভিড়ের মধ্যে একজন দৌড়াতে শুরু করলে, আশপাশের মানুষও দৌড়াতে শুরু করে দেয়। কারণ তারা ধরেই নেয়, অন্যরা নিশ্চয়ই কোনো বিপদ দেখেছে। এটিকে বলা হয় ‘সোশ্যাল প্রুফ’। ম্যাস ম্যাডনেসের সময় এই সামাজিক প্রমাণ যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না, বরং গতি আর সংখ্যাই বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। ফলে ভুল সিদ্ধান্ত মুহূর্তেই হাজারগুণ বেড়ে যায়।
ইতিহাসে ম্যাস ম্যাডনেসের বহু উদাহরণ রয়েছে। কোনো কোনো সময়ে এটি ধর্মীয় উন্মাদনার রূপ নিয়েছে, কখনো রাজনৈতিক হিংসা, কখনো আবার সামাজিক আতঙ্ক। একই কাঠামো বারবার দেখা যায়। একটি ট্রিগার, দ্রুত আবেগ সংক্রমণ, এবং শেষে যুক্তির সম্পূর্ণ ভাঙন ঘটে। আধুনিক সমাজে এই প্রক্রিয়াটি আরও জটিল হয়েছে, কারণ তথ্য এখন আর ধীরে ছড়ায় না, স্ক্রিন থেকে স্ক্রিনে ছড়িয়ে পড়ে কয়েক মি.লি. সেকেন্ডের মধ্যেই। ম্যাস ম্যাডনেসের যত উদাহরণ-
সত্যি বলতে গেলে ম্যাস ম্যাডনেসের দৃষ্টান্ত দিতে গেলে শেষ হবে না। কারণ, আদিকাল থেকেই সারা বিশ্বে এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে।তারপরেও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা উল্লেখ করা যেতেই পারে।
ফ্রান্সে মিউ মিউ: এটি মধ্যযুগের এক ঘটনা। ফ্রান্সের নান বা মঠবাসিনীদের অনেকেই তাদের পরিবারের চাপের মুখে, সন্ন্যাসিনী হতে বাধ্য হতো। ফলে তারা অনেক বেশি মানসিক অশান্তিতে ভুগতেন। তো তাদের মধ্যেই একজন হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করা শুরু করলেন। তার দেখাদেখি অন্যান্য নানেরাও একইভাবে মিউ মিউ করতে থাকলেন।একটা পর্যায়ে যেয়ে পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়ে যে সকলকে অবাক করে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে সকল নান একত্রে মিউ মিউ করা শুরু করলেন। সকলেই প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে উঠেছিল তাদের এই মিউ মিউ শুনতে শুনতে। পরবর্তীতে তাদের এই মিউ মিউ বন্ধ হয়েছিলো পুলিশের চাবুক মারার হুমকির পর!
জার্মানিতে সঙ্গিনীকে কামড়ানো: পঞ্চদশ শতাব্দীর কথা। জার্মানিতে এক সন্ন্যাসিনী নান তার সঙ্গিনীকে কামড়ানো শুরু করলেন। এই আচরণ রাতারাতি সম্পূর্ণ জার্মান, হল্যান্ড, এমনকি ইতালিতের অনেক নানদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে! সকলেই খুবই মারাত্মকভাবে জখমের শিকার হয়ে পড়ে এবং গুরুতর ইনফেকশনে জর্জরিত হয়ে পড়েন। ক্লান্তিতে তাদের এই কামড়ানো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।
পেনিস প্যানিক: একবার ভাবুন তো কতটা অদ্ভুত ভাবনা হলে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশের ছেলেরা, হঠাৎ করেই বিশ্বাস করা শুরু করলো তাদের পুরুষাঙ্গ দিনে দিনে ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং পুরোপুরি ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে! এই ভাবনা থেকে তাদের ভিতরে ভয়ের সৃষ্টি হয় এবং তারা নানাভাবে এই ভ্যানিশ হওয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকেন। ১৯৬৭ সালে সিঙ্গাপুরে এই ম্যাস হিস্টেরিয়া খুবই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।
রোমান সাম্রাজ্যে সংক্রামক নাচ: ১৫১৮ সালে একবার স্ট্রেসবার্গে নৃত্য উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছিলো, যা ইতিহাসের পাতায় ‘ড্যান্সিং প্লেগ’ নামে আখ্যায়িত হয়েছিল। ফ্রাউ ট্রফেয়া নামক এক মহিলা জুলাই মাসের দুপুরের কড়া রোদ উপেক্ষা করে হঠাৎ স্ট্রেসবার্গের রাস্তায় নীরবে নাচতে শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তার নাচ এক মুহূর্তের জন্যেও থামে না। ঠিক এই সময় অন্যান্য মানুষজনও তার সাথে নাচা শুরু করে দিল। অসংখ্য মানুষ খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম সব বাদ দিয়ে নাচতে শুরু করে। প্রায় এক মাস তাদের এই নৃত্যলীলা চলেছিল। এর ভয়াবহতাও মর্মান্তিক। নৃত্যরত অনেকেই হার্ট অ্যাটাকে, স্ট্রোকে বা অত্যন্ত ক্লান্তিতে মারা গিয়েছিল।
তানজানিয়ায় হাসির মহামারী: ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারিতে, তানজানিয়ার কাশাশা নামক একটি স্থানে, একটি মিশনারি বোর্ডিং স্কুলের মেয়েদের ভেতর হাসির মহামারী দেখা দেয়। এই হাসির শুরুটা হয়েছিলো তিনজন মেয়ে থেকে এবং রাতারাতি পুরো স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে। স্কুলের ১৫৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৫ জন আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স ছিল ১২ থেকে ১৮ এর মধ্যে। এই উপসর্গ আক্রান্তদের মাঝে কয়েক ঘন্টা থেকে ১৬ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে পড়েছিলো যে মার্চের ১৮ তারিখে স্কুলই বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে জানা যায়, কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকা এতে আক্রান্ত হন নি। স্কুল বন্ধ হয়ে যাবার পর শিক্ষার্থীরা বাড়িতে চলে গেলেও ঘটনার শেষ এখানেই হয়নি। এই মহামারী এরপর ছড়িয়ে পড়ে শাম্বা নামক এক গ্রামে, যেখানে আক্রান্ত মেয়েদের বেশিরভাগের বাসা ছিল। এপ্রিল এবং মে এই দুই মাসে ঐ গ্রামের প্রায় ২১৭ জন এই হাসির অ্যাটাকের শিকার হয়েছিল। ২১ মে কাশাশা স্কুল খোলা হয়, কিন্তু আবার জুন মাসেই বন্ধ হয়ে যায়। জুন মাসে এই মহামারী আরো বিস্তার লাভ করে রামাশেনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ জন ছাত্রীর মধ্যে দেখা দেয়। এই মহামারী শুরুর পর থেকে প্রায় ১৮ মাস স্থায়ী ছিল।
ডিজিটাল যুগে ম্যাস ম্যাডনেসের নতুন নাম হতে পারে “ভাইরাল প্যানিক”। একটি অসম্পূর্ণ ভিডিও, একটি শিরোনাম, কিংবা একটি বিকৃত তথ্য মুহূর্তে মানুষের আবেগ উসকে দিতে পারে। অ্যালগরিদমভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো আবেগঘন কনটেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়, কারণ তাতে প্রতিক্রিয়া বেশি আসে। ফলে ভয়, রাগ বা ঘৃণার মতো আবেগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ম্যাস ম্যাডনেসের পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ম্যাস ম্যাডনেস আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বিভাজনমূলক বক্তব্য, ‘আমরা বনাম তারা’ ধরনের ভাষা, কিংবা অতিরঞ্জিত হুমকির বর্ণনা ভিড়কে সহজেই উসকে দেয়। সমাজবিজ্ঞানের বিশ্লেষণে দেখা যায়, যখন মানুষ নিজেদের পরিচয়কে একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত করে ফেলে, তখন সেই গোষ্ঠীর আবেগই ব্যক্তির আবেগ হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় যুক্তি দিয়ে বোঝানো কঠিন, কারণ প্রশ্ন করাকেই তখন বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হয়।
ম্যাস ম্যাডনেসের আরেকটি দিক হলো দায়িত্বহীনতা। ভিড়ের মধ্যে মানুষ নিজের কাজের পরিণতি কম অনুভব করে। আইন বা নৈতিকতার ভয় তখন দুর্বল হয়ে যায়। তখন ‘সবাই-ই তো করছে’এই যুক্তিই যথেষ্ট মনে হয়। আচরণবিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘ডিফিউশন অব রেসপনসিবিলিটি’। এই মানসিকতা সহিংসতা, ভাঙচুর বা অমানবিক আচরণকে সহজ করে তোলে।
তবে ম্যাস ম্যাডনেস সব সময় নেতিবাচক রূপেই আসেনা। ইতিহাসে এমন উদাহরণও আছে, যেখানে ভিড়ের আবেগ ইতিবাচক পরিবর্তনের শক্তি হয়েছে। সামাজিক আন্দোলন, মানবিক সহায়তায় গণজাগরণ, কিংবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ এসব ক্ষেত্রেও দেখা যায় আবেগের সংক্রমণ। পার্থক্যটি তৈরি হয় তথ্যের স্বচ্ছতা, নেতৃত্বের দায়িত্ববোধ এবং লক্ষ্য নির্ধারণে। যেখানে যুক্তি ও নৈতিকতা পথ নির্দেশনা দেয়, সেখানে ভিড় শক্তিতে পরিণত হয়। আর যেখানে সেগুলো অনুপস্থিত থাকে, সেখানে ভিড়ই হয়ে ওঠে এক ভয়ংকর হুমকি।
ম্যাস ম্যাডনেস বোঝার ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমালোচনামূলক চিন্তা শেখানো না হলে মানুষ সহজেই আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেয়। তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাস, ভিন্নমত সহ্য করার মানসিকতা এবং ধৈর্য এগুলো গুণ, ম্যাস ম্যাডনেসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ। কিন্তু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার অভ্যাস এবং দ্রুত ফলাফল লাভের সংস্কৃতি এই গুণগুলোকে দুর্বল করে দিচ্ছে। মিডিয়ার দায়িত্বও এখানে প্রশ্নের সম্মুখে। শিরোনাম নির্বাচন, শব্দচয়ন এবং উপস্থাপনার ভঙ্গি জনতার আবেগকে প্রভাবিত করে। অতিরঞ্জন, আতঙ্কসৃষ্টিকারী ভাষা কিংবা অসম্পূর্ণ তথ্য ম্যাস ম্যাডনেসকে উসকে দিতে পারে। সংবাদ যদি প্রেক্ষাপট ও যাচাই ছাড়াই পরিবেশন করা হয়, তবে তা তথ্যের বদলে আতঙ্ক ছড়ায়। ফলে মিডিয়া কেবল তথ্যদাতা নয়, জনমানস গঠনের শক্তিশালী উপাদানই বলা যায়।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে ম্যাস ম্যাডনেস থেকে বাঁচার পথ শুরু হয় আত্মসচেতনতা দিয়ে। কোনো খবর বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত -আমি কি যাচাই করেছি, নাকি শুধু আবেগে সাড়া দিচ্ছি? এই ছোট প্রশ্নটিই কিন্তু গড়ে দিতে পারে বড় পার্থক্য। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আবেগের প্রথম ঢেউ পার হতে দিলে যুক্তি ফেরার সুযোগ পায়। তাই থামা, ভাবা এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস ম্যাস ম্যাডনেসের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সমাজের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো, কীভাবে ভিড়ের শক্তিকে ইতিবাচক পথে পরিচালিত করা যায়। নেতৃত্বের ভূমিকা এখানে নির্ণায়ক। দায়িত্বশীল নেতৃত্ব আবেগকে স্বীকার করে, কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে তথ্য ও নৈতিকতার মাধ্যমে। বিপরীতে দায়িত্বহীন উসকানি ম্যাস ম্যাডনেসকে বিস্ফোরণের দিকে ঠেলে দেয়। ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, নেতৃত্বের একটি বাক্যও ভিড়ের গতিপথ বদলে দিতে পারে যেকোনো সময়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
এই ম্যাস ম্যাডনেস বা ম্যাস হিস্টেরিয়া বা কালেক্টিভ হিস্টেরিয়া বা গণমনস্তাত্তিক অসুস্থতা যা-ই বলুন না কেন, সচেতনতাই এর প্রথম এবং প্রধান প্রতিরোধের উপায়। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে যেহেতু এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়, সেহেতু সচেতনতার শিক্ষাও স্কুল-কলেজেই দেওয়াটা খুবই প্রয়োজনীয়। নিজেদের জীবনের দুঃখ, ঝঞ্ঝাটগুলোকে জমিয়ে না রেখে মুক্তমনের অনুশীলন করাটা খুব প্রয়োজন। দরকার হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। দৈনিক কিছুটা সময় মেডিটেশনও করা যেতে পারে। অতিরঞ্জিত করে খবর প্রকাশ না করে সচেতনতামূলক তথ্য প্রকাশ করাই হোক আমাদের মিডিয়াগুলোর মূল লক্ষ্য।
ম্যাস ম্যাডনেস মানুষের স্বাভাবিক মনস্তত্ত্বেরই এক চরম রূপ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষ একা যতটা যুক্তিবাদী হতে পারে, ভিড়ের মধ্যে সে ততটাই বিপরীত আচরণ করতে পারে। আধুনিক বিশ্বের গতি, প্রযুক্তি ও তথ্যের স্রোত এই প্রবণতাকে আরও তীব্র করেছে। তাই ম্যাস ম্যাডনেস চেনা মানে শুধু ভিড়কে ভয় পাওয়া নয়; বরং ভিড়ের ভেতরে নিজের যুক্তি ও মানবিকতা টিকিয়ে রাখার কৌশল শেখা। এই সচেতনতাই পারে ভিড়কে উন্মাদনা থেকে দায়িত্বশীল শক্তিতে রূপান্তরিত করতে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।