টক এক কামড়েই চমক ! হগ প্লামের অজানা যত পুষ্টিগুণ
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
-
হগ প্লাম বা আমড়া, বাংলার গ্রামের আঙিনার এবং শহরের বাজারের বেশ পরিচিত এক ফল। ছোট, টকস্বাদের এই ফলটি শুধুমাত্র রুচির জন্যই না বরং পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমরা সাধারণত এটি আচার, চাটনি বা কাঁচা খাই। হগ প্লাম বা আমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Spondias dulcis। এটি উষ্ণমণ্ডলীয় একটি ফলদ বৃক্ষ। শত শত বছর ধরে আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে হগ প্লাম চাষ হয়ে আসছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই ফলকে খাবার ও ওষুধ দু’ভাবেই ব্যবহার করত। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলেও এই গাছ প্রচুর দেখা যায়। গাছটি মাঝারি উচ্চতার এবং এর পাতা, ফুল ও ফল সবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকা আমড়ার খোসা হালকা হলুদ থেকে লালচে, আর ভেতরের আঁশ ও শক্ত আঁটি ফলকে অন্য ফলের থেকে আলাদা করে। কাঁচা আমড়া শক্ত ও টক স্বাদের হয়। তবে পাকলে তুলনামূলকভাবে মিষ্টি লাগে। বিভিন্ন অঞ্চলে এ ফলের বিভিন্ন প্রজাতি এবং আকার পাওয়া যায়, তবে পুষ্টিগুণে প্রায় সমান।
পুষ্টিগুণ:
আমড়া বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
☞ ভিটামিন সি-এর উৎস। কাঁচা আমড়া অত্যন্ত উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি ধারণ করে। ভিটামিন সি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক এবং আয়রন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
☞ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমড়ায় থাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি কমিয়ে কোষের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। ফলে বার্ধক্যজনিত ক্ষয়ক্ষতি, ত্বকের নিক্ষিপ্ততা এবং কোষজনিত সমস্যা অনেকটাই কমে।
☞ ফাইবার ও হজম সহায়ক। আঁশযুক্ত ফল হওয়ায় আমড়া হজমশক্তি উন্নত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্ত্রের অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে। খাবারের পরামর্শমতো কাঁচা বা হালকা ভাজা অবস্থায় খেলে হজম প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ করে।
☞ খনিজ ও অন্যান্য ভিটামিন- পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রন প্রায়শই আমড়ায় থাকে।এই খনিজগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বিক শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
ব্যবহার:
আমড়া বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রামাঞ্চলে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়:
⇨ কাঁচা আমড়া: লবণ, চাটনি বা মরিচের সঙ্গে খাওয়া হয়।
⇨ পাকা আমড়া: হালকা মিষ্টি, সরাসরি খাওয়া যায়।
⇨ আচার ও ভর্তা: দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ ও খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য।
⇨ জুস বা শরবত: গরমে সতেজতা ও পুষ্টি নিশ্চিত করে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, এই প্রস্তুতি পদ্ধতিগুলোতে কিছু ভিটামিন কমতে পারে, তাই যতটা সম্ভব কাঁচা বা হালকা প্রক্রিয়াজাতভাবে খাওয়া উপকারী।
স্বাস্থ্যে প্রভাব:
☞ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন সি-র প্রভাবে শরীর বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
বিশেষ করে ঠান্ডা, ভাইরাস বা ফ্লুর সময় এটি সহায়ক।
☞ ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, ত্বককে স্থিতিস্থাপক রাখে। চুলের গোড়া শক্ত করে এবং ক্ষয় প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
☞ হজম ও অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফাইবার ও টক স্বাদ হজম বাড়ায়। অন্ত্রের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
☞ খনিজ উপাদান শরীরের জ্বালানি ও শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সারাদিনের ক্লান্তি হ্রাসে সহায়ক।
সতর্কতা ও পরিমাণ:
যদিও আমড়া স্বাস্থ্যসম্মত, তারপরও কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার:
☞ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা অ্যাসিডিটি: বেশি টক খেলে সমস্যা হতে পারে।
☞ রক্তচাপ: অতিরিক্ত লবণ মিশিয়ে খেলে রক্তচাপে প্রভাব পড়তে পারে।
☞ অ্যালার্জি: খুব কম ক্ষেত্রে কিছু মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অতএব পরিমিত এবং সুষম খাওয়াই উত্তম।
হগ প্লাম গাছ সুপারফ্রুটের জগতে বেশ তুচ্ছ বিবেচিত এক রত্ন। এর সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণ, দীর্ঘ ঐতিহ্য এবং পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য একে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান করে তোলে। এই গাছের সংরক্ষণ ও বিস্তারে বিভিন্ন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা আমাদের গ্রহের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সহায়ক। ছোট, স্থানীয় এবং পরিচিত এই ফলটিই আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাস্থ্যসম্মত ও সতেজ রাখতে সক্ষম। এটি মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, চুল-ত্বক স্বাস্থ্য এবং অন্ত্রের কার্যকারিতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটি আপনার খাদ্যতালিকায় জায়গা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।