কেমন ছিল তারেক রহমানের দেড় দশকের বছরের নির্বাসিত জীবন?

কেমন ছিল তারেক রহমানের দেড় দশকের বছরের নির্বাসিত জীবন?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

২০০৮ সাল। ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত ছেলের জরাজীর্ণ শরীর দেখে খালেদা জিয়া বলেছিলেন-"তারেক আর রাজনীতি করবে না, সে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবে এবং দলের সাথেও থাকবেন না " সেই দিন অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো এখানেই শেষ তারেক রহমানের রাজনীতি । কিন্তু দেড় যুগ পর ইতিহাস ভিন্ন কথা বলছে। লন্ডন থেকেও দীর্ঘ ১৮ বছর দল পরিচালনা করে, সব প্রোপাগান্ডা মিথ্যা প্রমাণ করে তারেক রহমান ফিরছেন রাজকীয় বেশে। কেমন ছিল তার প্রবাস জীবনের এই দীর্ঘ সংগ্রাম?

ইতিহাসের পাতা ঘুরলে দেখা যায়, ২০০৭ সালের ৭ই মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর চলে রিমান্ডের নামে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন। আদালতের নির্দেশে চিকিৎসকরাও সেই নির্যাতনের সত্যতা পান। টানা ১৮ মাস কারাবাসের পর, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি পাড়ি জমান লন্ডনে। তখন থেকেই শুরু হয় এক অনিশ্চিত নির্বাসিত জীবনের।

বিদেশের মাটিতে এই জীবন ছিল কণ্টকাকীর্ণ । ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু কিংবা মা বেগম খালেদা জিয়ার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ—কোনো কিছুতেই তিনি থাকতে পারেননি পরিবারের পাশে। কিন্তু হাজার মাইল দূরে থেকলেও কোন কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। অর্ধশতাধিক মামলার চাপ, শারীরিক নির্যাতনের স্মৃতি কিংবা জীবননাশের আশঙ্কা  কিছুই তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করতে পারেনি। 

দেশের মিডিয়া যখন তার বক্তব্য প্রচারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞায় বন্দি, তখন তিনি বেছে নেন সোশ্যাল মিডিয়া। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন ‘অমনিপ্রেজেন্ট’ বা সর্বব্যাপী। গত ১৬ বছরে দলের অস্তিত্ব রক্ষায় তিনি ছিলেন তাঁর মা বেগম জিয়ার মতোই আপোষহীন। লন্ডনে অবস্থান করেও আধুনিক প্রযুক্তি, ভিডিও কনফারেন্সিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন তারেক রহমান। সরাসরি দেশের গণমাধ্যমে উপস্থিতি সীমিত থাকলেও তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য পৌঁছে গেছে দেশজুড়ে।  


বিগত দেড় দশকে দেশে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছে, তার বিপরীতে তারেক রহমান বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা তুলে ধরেছেন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তিনি সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা উপস্থাপন করেন। এর আগেই ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি রূপকল্প দেন তিনি।

জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির পরিবর্তে অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র গঠনের বার্তা দিয়ে আসছেন তারেক রহমান। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি রাজনৈতিক নৈতিকতার বিষয়ে কঠোর অবস্থানও তুলে ধরেছেন।

সহস্রাধিক শহীদের আত্মত্যাগে সংঘটিত জুলাই বিপ্লবের কৃতিত্ব   রাজপথে জীবন দেওয়া ছাত্র-জনতার প্রতিই উৎসর্গ করেছেন। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার যেন ব্যর্থ না হয়-সে আহ্বান জানিয়ে তিনি সব রাজনৈতিক শক্তিকে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ রাজনীতিতে তারেক রহমান একটি কেন্দ্রীয় ও প্রভাবশালী চরিত্র।  প্রচণ্ড অপপ্রচার আর শারীরিক-মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার চেষ্টা-কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। বরং তিনি ফিরে এসেছেন আরও পরিপক্ক ও দূরদর্শী নেতা হিসেবে। তারেক রহমানের এই ‘প্রজ্ঞাময় প্রত্যাবর্তন’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। এখন দেখার বিষয়, তার এই প্রত্যাবর্তন আগামীর বাংলাদেশকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যায়।
 

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ