হতাশাগ্রস্ত স্বামীকে আশার আলো দেখানোর সম্পূর্ণ কৌশল
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
-
পরিবারের ভিত্তি প্রায়শই স্বামীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। সামাজিক দায়িত্ব, অর্থনৈতিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের প্রতিযোগিতা, আত্মসম্মান রক্ষা এবং পরিবারকে টিকিয়ে রাখার লড়াই এই সমস্ত চাপ পুরুষদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে। দীর্ঘ সময়ের এই চাপ নিঃসন্দেহে হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু এই সময়ে পাশে থাকা স্ত্রীই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে বড় সমর্থন। তাঁর যত্ন, বোঝাপড়া এবং কার্যকর আচরণ স্বামীকে আবার নতুন করে স্থির হতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণা দেখিয়েছে, দাম্পত্যে শক্তিশালী মানসিক সমর্থন এবং পরিবারিক সাপোর্ট পেলেই পুরুষরা দ্রুত হতাশা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন।
পুরুষরা সাধারণত নিজের অনুভূতি প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। বিশেষ করে যদি পরিবেশটা নিরাপদ বা বিচারের ঝুঁকি মুক্ত না হয়। তাই প্রতিটি স্ত্রীর উচিত নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল শোনার পরিবেশ তৈরি করা।
কৌশলসমূহ:
⇨সব কথা বিচারহীনভাবে শুধু শুনে যাওয়া। মন্তব্য বা সমালোচনা এড়িয়ে চলা।
⇨ কথোপকথন শুরু করার জন্য প্রেরণা দেওয়া, যেমন, “আমি চাই তুমি তোমার অনুভূতি শেয়ার করো।”
⇨ ছোট ছোট মানবিক আশ্বাস দেওয়া। যেমন, “তুমি পারবে, আমি তোমার পাশে আছি।”
এই ধরনের নিরাপদ পরিবেশ স্বামীর মস্তিষ্কে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে, ফলে মানসিক চাপ হালকা হয়।
দাম্পত্যে মানসিক নিরাপত্তা যত বেশি, হতাশা কাটানোর গতি হয় ততই দ্রুত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, পরিবারের সমর্থন পুরুষের হতাশার মাত্রা প্রায় ৪০% পর্যন্ত কমাতে পারে। তাই স্ত্রীর উচিত স্বামীর প্রতি আস্থা দেখানো। স্বামীর ব্যর্থতা নিয়ে ঠাট্টা বা নিন্দা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় বা চাপ না দেখানো। এ ধরনের ছোট ছোট মানসিক সমর্থন স্বামীকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করে, তার মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জেগে ওঠে ।
হতাশার সময় বড় লক্ষ্য খুব ভীতিকর হতে পারে। গবেষণা দেখিয়েছে, ছোট লক্ষ্য অর্জন করলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা আনন্দ, প্রেরণা ও মনোযোগ বাড়ায়।তাই উচিত-
⇨ বড় কাজকে ছোট ছোট টাস্কে ভাগ করা। উদাহরণ: “আজ শুধু এই কাজটা করো।”
⇨ দিনের শেষে সকল বড় বড় অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া।
⇨ ছোট সাফল্যগুলোও চিহ্নিত করে প্রশংসা করা।
এটি স্বামীর মনে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে, এবং হতাশা কমিয়ে দেয়।
পুরুষরা বাহ্যিক প্রশংসায় নারীদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, স্বীকৃতি বা প্রশংসা স্বামীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর। যেমন,“তুমি অনেক চেষ্টা করছ।” “তোমার জন্যই আমাদের পরিবার টিকে আছে।” এছাড়া সাফল্যের ছোট মুহূর্তগুলোকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করা। এটি স্বামীকে মানসিকভাবে শক্ত করে, হতাশা কাটাতে সাহায্য করে।
হতাশা শারীরিক ক্লান্তি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ৩০ মিনিট হাঁটা মুড এবং মনোযোগ উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্ত্রী স্বামীর এ বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখা উচিত। তার পছন্দের এবং পুষ্টিকর খাবার প্রস্তুত করা। স্বামীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং উৎসাহ দেওয়া। দুজনে একসাথে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করা । শারীরিক যত্ন সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
দৈনন্দিন রুটিন মানুষকে একঘেয়ে এবং ক্লান্ত করে তোলে। এর ফলে হতাশাও বেড়ে যায়। হতাশা এবং একঘেয়েমী ভাব থেকে পরিত্রাণের জন্য ছোট ভ্রমণ বা আউটিং, রাতে এক কাপ চা নিয়ে গল্প করা, পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়া, প্রিয় সিনেমা বা বই উপভোগ ইত্যাদি করা যায়। এটি স্বামীর মস্তিষ্কে পজিটিভ হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক চাপ কমাতেও সহায়ক।
কখনো কখনো হতাশা চিকিৎসা ছাড়া কাটানো কঠিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, সঠিক সময়ে মেডিকেল সাপোর্ট নিলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮০% পর্যন্ত। যদি হতাশা অতিরিক্ত মনে হয় এবং কোনোভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না হয় তবে স্বামীকে ধীরে ধীরে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে এবং মেডিকেল সাহায্য নেওয়ার ভয় কমিয়ে, সমর্থন জানাতে হবে। এতে স্বামী সাহায্য নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে ।
পুরুষরা জীবনের সবচেয়ে বেশি ভয় পান ব্যর্থতার অনুভূতির কাছে। স্ত্রীর প্রদত্ত সম্মান এবং আস্থা তার ভেতরের সাহসকে পুনরুজ্জীবিত করে। তার মূল্য, চেষ্টা এবং ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্মান দেখানো তাই প্রতিটি স্ত্রীর কর্তব্য।
হতাশা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং মানুষের জীবনের একটি মানসিক ক্লান্তি। স্বামী যখন সেই ক্লান্তির কাছে হার মানতে শুরু করেন, তখন স্ত্রীর সমর্থনই সবচেয়ে বড় শক্তি। স্ত্রীর কাছেই, স্ত্রীর আচরণেই হতাশাগ্রস্ত স্বামী খুঁজে পান জীবনের নতুন আশা। পারস্পরিক সমর্থনের ওপরই গড়ে ওঠে দাম্পত্যের ভিত্তি। আর একজন স্ত্রীর সচেতনতা এবং প্রণোদনা পরিবারের ভরসা ও স্থিতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।