রাবিতে প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ২ পদের বিপরীতে ৭ জনকে নিয়োগ

রাবিতে প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ২ পদের বিপরীতে ৭ জনকে নিয়োগ
  • Author, রাবি প্রতিনিধি
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ইতিহাস বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ২টি পদের বিপরীতে ৭ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ৮ অক্টোবর ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে নিয়োগ বোর্ডে অংশ নেওয়া একাধিক প্রার্থী উপাচার্য বরাবর কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতিহাস বিভাগে ২০১৩ সালে সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক পদে ৩টি এবং ২০১৮ সালে সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক পদে ৫টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে ইতিহাস বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি উপরোক্ত দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বহাল রেখে আরও ২টি প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদ বিজ্ঞাপনের জন্য সুপারিশ করে। একই বছরের প্ল্যানিং কমিটির সভায় উপরোক্ত বিজ্ঞপ্তিসহ ইতিহাস বিভাগে সর্বমোট (৩+৫+২)=১০টি পদে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া ২০২৫ সালের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সভাতেও অনুরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নতুন করে ২টি পদ বিজ্ঞাপনের কথা বলা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২টি পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে ১০টি পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং সেখান থেকেই ৭ জনকে নিয়োগ প্রদান করে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের বিজ্ঞপ্তির প্রার্থীদের লোক দেখানো পরীক্ষার মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা প্রশাসনের পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত ছিল। এসব বিজ্ঞপ্তির প্রার্থীরা বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগে ২০১৩ ও ২০১৮ সালের বিজ্ঞপ্তির একাধিক প্রার্থী জানান, ৩+৫=৮টি পদের বিপরীতে ২০১৩ সালের বিজ্ঞপ্তি থেকে মাত্র একজন এবং ২০১৮ সালের বিজ্ঞপ্তি থেকে মাত্র দুজনকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়। একই দিনে তারা ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত থেকে তারা জানতে পারেন যে ইতিহাস বিভাগে ৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের সবাই ২০২৫ সালে প্রকাশিত নতুন বিজ্ঞপ্তির আবেদনকারী।

অভিযোগকারীরা আরও বলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা-২০২৫ কার্যকরের আগে গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত প্ল্যানিং কমিটির সভায় পূর্ববর্তী দুটি বিজ্ঞপ্তি বহাল রেখে নতুন করে ২টি পদ বিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে নতুন নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫ এর আলোকে ১০টি পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেখান থেকেই ৭ জনকে নিয়োগ দেয়—তা বিস্ময় তৈরি করেছে।

লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি নিজ নিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করার সর্বোচ্চ ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। ইতিহাস বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের বিজ্ঞপ্তি বহাল রেখে এবং নতুন ২টি পদ যোগ করে মোট ১০জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়, যা পুরোনো নিয়োগ বিধির আলোকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা কার্যকর হয় ১৫ এপ্রিল ২০২৫ থেকে। নতুনভাবে প্ল্যানিং না করে পুরোনো বিজ্ঞপ্তিগুলোকে নতুন বিধিমালার আওতায় এনে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া আইনগত অসামঞ্জস্যতা তৈরি করেছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ শিক্ষক মতামত দেন যে, নতুন বিধি কার্যকরের পর নতুন করে প্ল্যানিং করা উচিত ছিল।

তারা আরও উল্লেখ করেন, তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সময়কাল ও আবেদনের যোগ্যতা ভিন্ন ছিল। বিজ্ঞপ্তির শর্ত ও সময়ের ব্যবধানকে গুরুত্ব দিয়ে এবং প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াই আইনসম্মত হতো।

এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেরেজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যারা ভালো নম্বর পেয়েছে, তাদেরই আমরা শিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করেছি। প্রার্থীদের বিভাগীয় ফলাফল, রিটেন পরীক্ষা ও ভাইভার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। আলাদা কোনো ক্রাইটেরিয়া ছিল না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, “যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা মেধাবী, তারাই মূল্যায়িত হয়েছেন।”

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ