বারান্দায়ই টমেটোর বাম্পার ফলন! একটি গাছেই ধরবে ডজন ডজন টমেটো, জানুন সঠিক নিয়ম
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
-
শহুরে জীবনে জমির অভাব এখন আর সবজি চাষের পথে বাধা নয়। টবে খুব সহজেই চাষ করা যায় সব রকমের সবজি, এমনকি টমেটোও। টবে টমেটো চাষ ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ এটি যেমন সহজ, তেমনি আবার ফলনও সন্তোষজনক। টমেটো সারা বিশ্বেই সবজী এবং সালাদ হিসাবে সমাদৃত। আমাদের দেশে এটি জনপ্রিয় একটি শীতকালীন সবজী। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় সারাবছরই টমেটো চাষ করা হচ্ছে। অল্প পরিশ্রমে বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বা আঙ্গিনায় এর চাষ করা যেতে পারে ।
টমেটো এমন একটি সবজি, যার শিকড় গভীরে যায় না। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা ও পুষ্টি পেলে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। টবের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটি, পানি ও সার ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর ফলে রোগবালাই কম হয়, ফলন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকে এবং কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই ভালো উৎপাদনও সম্ভব হয়। এছাড়া টবে চাষ করলে আলো ও অবস্থান প্রয়োজন অনুযায়ী বদলানো যায়, খোলা জমির ক্ষেত্রে যা সম্ভব নয়। এটি বিশেষ করে শহরের বারান্দা, ছাদ বা জানালার পাশে চাষের জন্য উপযোগী ।
তবে সব যাতে টমেটো টবে চাষের জন্য সমান উপযোগী হয়না। টবে চাষের ক্ষেত্রে সাধারণত কম উচ্চতার এবং দ্রুত ফলনশীল জাত বেশি কার্যকর। এগুলো তুলনামূলকভাবে কম জায়গায় ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে। টবে চাষের জন্য উপযোগী জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো-
⇨ গাছ বেশি লম্বা হয় না।
⇨ শাখা-প্রশাখা নিয়ন্ত্রিত।
⇨ তুলনামূলকভাবে কম সময়েই ফুল ও ফল ধরে।
সঠিক জাত নির্বাচন না করলে গাছ অতিরিক্ত লম্বা হয়ে পড়ে। ফলে টবে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় এবং ফলনও কমে যায়।
টব নির্বাচন:
এক্ষেত্রে শুধু আকার নয়, গঠন, উপাদান এবং আকারও গুরুত্বপূর্ণ। খুব ছোট টবে গাছের শিকড় পর্যাপ্ত জায়গা পায় না, এতে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। সাধারণভাবে টমেটোর জন্য মাঝারি থেকে বড় আকারের টব সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তবে টবের নিচে অবশ্যই পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র থাকতে হবে। পানি জমে থাকলে শিকড়ে পচে যেতে পারে। মাটির টব বাতাস চলাচলে সহায়ক হলেও দ্রুত শুকিয়ে যায়, আর প্লাস্টিক বা সিরামিক টব তুলনামূলকভাবে আর্দ্রতা ধরে রাখে। আবহাওয়া ও পরিচর্যার সুযোগ অনুযায়ী টব নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
মাটি প্রস্তুত:
মাটি হতে হবে ঝরঝরে, হতে হবে পানি ধারণক্ষম এবং পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। শুধু বাগানের মাটি ব্যবহার করলে টবে চাষে সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ তা শক্ত হয়ে যায়। উপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য-
⇨ সহজে পানি বেরিয়ে যায়।
⇨ বাতাস চলাচল করতে পারে।
⇨ জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ।
সাধারণত দোআঁশ মাটি, পচা জৈব সার ও সামান্য বালির সমন্বয়ে তৈরি মাটি টমেটোর জন্য ভালো ফল দেয়। এতে শিকড় সহজে ছড়াতে পারে এবং পুষ্টি গ্রহণে সুবিধা হয়।
চারা রোপণ:
চারা রোপণের সময় গাছের বয়স গুরুত্বপূর্ণ। খুব ছোট চারা সহজে মানিয়ে নিতে পারে না, আবার বেশি বড় চারা রোপণ করলে শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থ্বকে যায়। চারা রোপণের সময়-
⇨ মাটি হালকা আর্দ্র রাখা উচিত।
⇨ চারার গোড়া খুব গভীরে পুঁতে দেওয়া যাবে না।
⇨ রোপণের পর হালকা পানি দেওয়া প্রয়োজন।
টমেটো গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো কাণ্ডের অংশ মাটির নিচে গেলে সেখান থেকেও শিকড় গজাতে পারে। তাই চারা একটু গভীরে রোপণ করলে গাছ আরও শক্তিশালী হয়।
টমেটো একটি সূর্যালোকপ্রিয় উদ্ভিদ। প্রতিদিন অন্তত কয়েক ঘণ্টা সরাসরি সূর্যের আলো না পেলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়, ফুল ঝরে পড়ে এবং ফলনও কমে যায়। বারান্দা বা ছাদে টব রাখার সময় এমন জায়গা নির্বাচন করা জরুরি, যেখানে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায়। আলো কম হলে গাছ লম্বা হলেও ফল ধরে কম।
টবে টমেটো চাষে পানি দেওয়া সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়গুলোর একটি। অতিরিক্ত পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে, আবার কম পানি দিলে গাছ শুকিয়ে যায়। পানি দেওয়ার সময় লক্ষ রাখতে হবে-
⇨ মাটির উপরিভাগ শুকনো হলে পানি দেওয়া।
⇨ একবারে অল্প অল্প করে নয়, বরং পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়া।
⇨ টবে পানি জমে আছে কি না, তা নিয়মিত দেখা
পানি দেওয়ার নিয়মিততা গাছের বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলের স্বাদ ও গঠনেও প্রভাব ফেলে।
টমেটো গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নিয়মিত পুষ্টি চায়। টবে থাকা মাটির পুষ্টি সীমিত, তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর অতিরিক্ত পুষ্টি সরবরাহ জরুরি। শুরুতে গাছের পাতা ও কাণ্ড বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বেশি দরকার হয়। ফুল ও ফল ধরার সময় প্রয়োজন হয় ভিন্ন ধরনের পুষ্টির ভারসাম্য। সঠিক সময়ে সঠিক পুষ্টি না পেলে ফুল ঝরে যাওয়া বা ফল ছোট হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
টমেটো গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়ে। টবে চাষের ক্ষেত্রে গাছকে সোজা রাখতে খুঁটি বা কাঠির সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় ডাল ছাঁটাই করলে গাছের শক্তি মূল ফলনের দিকে বেশি যায়। এতে বাতাস চলাচল ভালো হয় এবং রোগবালাইয়ের ঝুঁকিও কমে।
রোগবালাই ও প্রতিরোধ:
টবে চাষে রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম। তবে অতিরিক্ত আর্দ্রতা, আলো কম পাওয়া বা অপরিষ্কার পরিবেশে ছত্রাক ও পোকামাকড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণই এখানে সবচেয়ে বড় প্রতিকার। পাতায় দাগ, গাছের রঙ পরিবর্তন বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ফল সংগ্রহ:
চারা রোপণের কয়েক সপ্তাহ পর গাছে ফুল আসে, তারপর ধীরে ধীরে ফল তৈরি হয়। ফল পুরোপুরি রঙিন ও শক্ত হলে সংগ্রহ করাই সবচেয়ে ভালো। সময়মতো ফল সংগ্রহ করলে গাছ নতুন করে আরও ফল ধরতে উৎসাহ পায়। এতে মোট ফলনও বাড়ে।
টবে টমেটো চাষ কোনো জটিল কাজ নয়, তবে এটি নিয়ম ও ধৈর্যের পরীক্ষা। সঠিক টব, উপযুক্ত মাটি, পর্যাপ্ত আলো, নিয়ন্ত্রিত পানি ও পুষ্টি - পাঁচটি বিষয় ঠিকভাবে মেনে চললে অল্প জায়গাতেই সম্ভব সফল টমেটো চাষ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।