হাদি হত্যাকাণ্ডে পালানোর পথ খুলে দেন যুবলীগ নেতা তাইজুল
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
-
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ ওসমান বিন হাদি হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাঁর সহযোগী আলমগীর শেখকে ভারতে পালাতে সহায়তাকারী দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার হওয়া আমিনুল ইসলাম একজন যুবলীগ নেতার ভগ্নিপতি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে হাদি হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শহীদ ওসমান হাদির হত্যায় সরাসরি জড়িতদের পাশাপাশি নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট বাহিনী। এরই মধ্যে শুটার ফয়সাল এবং মোটরসাইকেলচালক আলমগীরকে সীমান্ত পার করানোর পুরো প্রক্রিয়ার তথ্য উঠে এসেছে।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, পালানোর ব্যবস্থাপনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী। তাকে সহায়তা করেন তার ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল মিরপুর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি ভারতে চলে যান।
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। আর তাঁর সহযোগী আলমগীর আদাবর থানা যুবলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।
যেভাবে সীমান্ত পার হয়
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর রাতেই ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। এ জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল।
তদন্তে জানা যায়, হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে মানুষ পারাপারে যুক্ত কয়েকজন দালাল সক্রিয় রয়েছে। তাদের একজন ফিলিপ স্নাল, যিনি সীমান্তসংলগ্ন ভুটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সূত্র জানায়, হাদিকে গুলি করার কিছু সময় পর সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল ভারত থেকে ফোন করে তার ভগ্নিপতি আমিনুলকে জানান, তিনি ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তখন আমিনুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই রাতেই দুই ব্যক্তিকে সীমান্ত পার করানোর ব্যবস্থা করা হয়। আমিনুল ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তাইজুলের বার্তা পৌঁছে দেন এবং পরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তদন্ত অনুযায়ী, তাইজুলের নির্দেশে আমিনুল তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিপকে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান। এদিকে ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক যানবাহন বদলে হালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছান। পরে ফিলিপ তাদের অবৈধভাবে সীমান্ত পার করে দেন।
ঘটনার পর প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা পুলিশ ফয়সাল ও আলমগীরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তী অভিযানে ফিলিপের দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, সীমান্ত পার করানোর পর টেলিভিশনের সংবাদ দেখে তারা বুঝতে পারে, ওই দুজন ঢাকায় বড় ধরনের অপরাধ ঘটিয়ে পালিয়েছে। পরে ফিলিপকে সতর্ক করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঘটনার দিন কার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হয়েছে-তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে মিরপুরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এরপর তাকে আটক করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ফয়সাল ও আলমগীরকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে আমিনুল ইসলামকে বুধবার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আদালতসূত্র জানায়, আমিনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণে ঘটনার দিন ফিলিপ ও তাইজুলের সঙ্গে আমিনুলের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তিনি চোরাই মোবাইল ফোন কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত বলেও তথ্য মিলেছে।
এ বিষয়ে আমিনুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বলেন, তাঁর স্বামী আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ছয় মাস আগে চাকরি ছেড়ে মোবাইল ফোনের ব্যবসা শুরু করেন। কী কারণে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
উল্লেখ্য, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে আসছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছুক্ষণ পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা অবস্থায় তাকে গুলি করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। গত রোববার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের কাছাকাছি তাকে দাফন করা হয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।