বছরজুড়ে খবরের শিরোনামে ইবি, আলোচিত ও সমালোচিত যত ঘটনা

বছরজুড়ে খবরের শিরোনামে ইবি, আলোচিত ও সমালোচিত যত ঘটনা
  • Author, ইবি প্রতিনিধি
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

দেখতে দেখতে ২০২৫ সাল সমাপ্তির দ্বারগোড়ায়।এবারেও বছরজুড়ে বিভিন্ন ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় খবরের শিরোনাম হয়েছে বহুবার। শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ্'র মৃত্যু, ইকসু গঠন, জুলাই অভ্যুত্থান বিরোধী শিক্ষক কর্মকর্তার বহিষ্কার ও ছাত্রলীগ নেতাদের সনদ বাতিল, স্থাপনার নাম পরিবর্তনসহ অসংখ্য ঘটনায় আলোচিত ছিল এই ক্যাম্পাস।

২০২৫ সালে বছরজুড়ে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো তুলে ধরছেন জাগরণ নিউজ এর ইবি প্রতিনিধি সামিউল ইসলাম।

সাজিদ আবদুল্লাহ্ মৃত্যু, ক্যাম্পাসে অস্থিরতা :
 
গত ১৭ জুলাই শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৯ জুলাই সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। ৩ আগস্ট ফরেনসিক রিপোর্ট প্রকাশিত হলে জানা যায়, মৃত্যুর কারণ শ্বাসরোধজনিত শ্বাসকষ্ট যা মৃত্যুর আগে ঘটেছে এবং এটি হত্যাজনিত। ৪ আগস্ট সাজির হত্যার প্রতিবাদে আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এদিন ইবি-সহ ঢাবি ও রাবিতেও সাজিদ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। 

এরপর বিভিন্ন সময় সাজিদের খুনীদের সনাক্ত ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে প্রতীকী লাশ নিয়ে কর্মসূচি পালন করে তারা।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই হত্যা মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এখনো সিআইডি’র তদন্তাধীন রয়েছে সাজিদ হত্যার বিষয়টি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু):

বিভিন্ন সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা৷ মানববন্ধন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। এ বছরের আগস্ট মাসে ইকসু গঠন নিয়ে সরব হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ২২ এবং ২৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, ক্রাশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে টিএসসিসি করিডোরে পরামর্শ সবার আয়োজন করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে ইকসু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে  “মুভমেন্ট ফর ইকসু” প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়। ২৫ আগস্ট ইকসু'র সম্ভাব্য রোডম্যাপ প্রকাশ নিয়ে উপাচার্যের সাথে আলোচনা সভা করে প্ল্যাটফর্মটি। ২৭ আগস্ট ইকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর গঠনতন্ত্র প্রকাশের দাবিতে দফাই দফায় মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। 

৩০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১ তম সিন্ডিকেট সভায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র পাস হয়। সিন্ডিকেটে গৃহীত হবার পরে খসড়াটি বিশ্ববিদ্যালয় মনজুরি কমিশনে পাঠানো হয়। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে অর্ডিন্যান্স আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানা যায়। অর্ডিন্যান্স পাশের ১৫ দিনের মধ্যে  ইকসু বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেন উপাচার্য। 

যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগে ইবি শিক্ষক হাফিজ'কে অপসারণ:

শিক্ষার্থীদের সাথে ও অসদাচরণ, যৌন হয়রানি, হেনস্তা, সমকামিতাসহ না না অভিযোগে এ বছর চাকরি থেকে অপসারণ করা হয় ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. হাফিজুল ইসলামকে।
 
২০২৪ সালের সাত অক্টোবর শিক্ষক হাফিজের বিরুদ্ধে ২৭ দফা অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সে সময় শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। ২৬৬ তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক হাফিজকে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। 

ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের বিভাগের শিক্ষার্থীরা উক্ত সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার দাবি তুললে ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ২৬৭ তম সিন্ডিকেটের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী তদন্তের আলোকে তাকে ৩১ মে থেকে চাকরি হতে অপসারণ করা হয়।  

জুলাই বিরোধী শিক্ষক কর্মকর্তা বহিষ্কার ও শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল:

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিরোধী ভূমিকা পালনের কারণে ১৯ শিক্ষক, ১১ কর্মকর্তা ও ৩৩ শিক্ষার্থীর (ছাত্রলীগ নেতা) সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জুলাই অব্যদান বিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে ১৫ মার্চ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৩০ অক্টোবর ২৭১ তম সিন্ডিকেট সভায় চিহ্নিতদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর দফায় দফায় নোটিশ পাঠিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ১৬ নভেম্বর ৭ শিক্ষককে এবং ৪ ডিসেম্বর ৯ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

ফ্যাসিবাদ সংশ্লিষ্ট স্থাপনার নাম পরিবর্তন:

জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামের সকল স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবি ওঠে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নাম পরিবর্তনে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেয় ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পরবর্তীতে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৬৭ তম সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

সিদ্ধান্তে “দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল” নাম পরিবর্তন করে “জুলাই ৩৬ হল”, “শেখ রাসেল হল” পরিবর্তন করে “শহীদ আনাস হল”, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল” থেকে “শাহ আজিজুর রহমান হল”, “বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল” থেকে “উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল” এবং “ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন” থেকে “ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন” নামকরণ করা হয়।



ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা :

সাজিদ আবদুল্লাহ'র হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত এর জোর দাবি ওঠে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন দাবিতে দফায় দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত আলোর জন্য লাইট লাগানো হয় এবং নিরাপত্তা কর্মীদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। 

বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে শিক্ষার্থী রাশেদের মর্মান্তিক মৃত্যু:
 
ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে আসার পথে ১৬ জুন কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে প্রাণ হারান আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম।আসার সময় তিনি বাসের ইঞ্জিন কাভারে বসেছিলেন। বিত্তিপাড়া এলাকায় বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে। ইঞ্জিন কাভারে বসার কারণে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস থেকে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়াও নানা ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বছরজুড়ে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা শিক্ষাঙ্গনের নানামুখী পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জগুলোক সামনে এনে দিয়েছে।
 

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ