শীত মানেই পাটিসাপটা! তুলতুলে নরম আর সুস্বাদু রেসিপি শিখে নিন একদম সহজভাবে

শীত মানেই পাটিসাপটা! তুলতুলে নরম আর সুস্বাদু রেসিপি শিখে নিন একদম সহজভাবে
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শীত এলেই বাংলার ঘরবাড়িতে একটা আলাদা নীরবতা নামে। ভোরের কুয়াশা, খেজুরের রসের মিষ্টি গন্ধ মিলিয়ে সময়টা যেন নিজেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। ঠিক এই ঋতুতেই জন্ম হয় এমন কিছু খাবার, যেগুলো শুধু ক্ষুধা মেটায় না, স্মৃতি আর সংস্কৃতিকেও জাগিয়ে তোলে। পাটিসাপটা তেমনই এক শীতকালীন ডেজার্ট। এই পিঠার প্রতিটি ভাঁজে লুকিয়ে আছে বাংলার ইতিহাস, কৃষিজ জীবন আর মানুষের আবেগ। শীতের অবসর সময়েই এর প্রকৃত জন্ম। যখন মাঠের কাজ কমে, সংসারের ব্যস্ততা কিছুটা শিথিল হয়, তখনই নারীরা রান্নাঘরের কোণে বসে পাটিসাপটার ব্যাটার বানান, নারকেল কোড়ান, গুড় গলান। এই প্রক্রিয়াটাই পাটিসাপটার আত্মা।

শীত মানেই নতুন ধান ঘরে ওঠার সময়। সেই নতুন চাল থেকেই তৈরি হয় চালের গুঁড়ো, যা পাটিসাপটার খোলসের মূল উপাদান। একই সময়ে পাওয়া যায় টাটকা নারকেল আর খেজুরের গুড়, যেগুলো অন্য ঋতুতে সহজে মেলে না। এই কারণেই পাটিসাপটা কখনোই সারা বছরের খাবার হয়ে ওঠেনি। এটি প্রকৃতির সময়সূচি মেনে চলে। শীত গেলে পাটিসাপটাও বিদায় নেয়। এই অস্থায়িত্বই একে আরও আকাঙ্ক্ষিত করে তোলে। মানুষ জানে এখনই না খেলে আবার এক বছর অপেক্ষা। যদিও  এখন অনেকেই মাঝে মাঝে এই শখের পিঠাটি তৈরি করে থাকেন।

একসময় পাটিসাপটা ছিল গ্রামবাংলার ঘরোয়া খাবার। শীতের সকালে বা বিকেলে পরিবারের জন্য বানানো হতো। অতিথি এলে পাটিসাপটা পরিবেশন মানে ছিল বিশেষ সম্মান। জমিদারবাড়ি কিংবা সচ্ছল পরিবারগুলোতে পাটিসাপটা হয়ে ওঠেছিল শীতকালীন আপ্যায়নের কেন্দ্রবিন্দু। পাতলা, নিখুঁতভাবে ভাঁজ করা পিঠাটির ভেতরে গুড়-নারকেলের মোলায়েম পুরের সমন্বয় একে রাজকীয় তকমা দেয়। 

প্রস্তুত প্রণালী:

ঝুনো নারকেল কুরো, গুড় বা চিনি অথবা ক্ষীর পাক করে পুর বানিয়ে নিতে হবে। ময়দাতে দুধ, পানি এবং একটু মিহি চালগুঁড়ো মিশিয়ে মন্ড পাকিয়ে গোল গোল খামির বা ব্যাটার করে নিতে হবে। এবার খামির বা ব্যাটারগুলোকে ছোটো ছোটো গোল আকারে বেলে, পরিমানমতো পুর ভিতরে দিয়ে পাটির মত পাট করে নিতে হবে। এরপর একে ঘিয়ে ভেজে নিয়ে চিনির রসে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখতে হবে। রস থেকে তোলবার পর পাটিসাপটা পরিবেশন করা যাবে।অনেকে চিনির রসে ডুবিনো ছাড়াই পরিবেশন করে থাকেন বা খেয়ে থাকেন।

উপকরণ:

পিঠের খোলসের জন্য

⇨ আতপ চালের গুঁড়ো – ১ কাপ

⇨ ময়দা – ২ টেবিল চামচ (খোলস নরম রাখার জন্য)

⇨ তরল দুধ – ১ থেকে ১¼ কাপ (ঘনত্ব অনুযায়ী)

⇨ লবণ – এক চিমটি

⇨ তেল বা ঘি – তাওয়া মাখানোর জন্য অল্প

পুরের জন্য:

⇨ টাটকা কোরা নারকেল – ১½ কাপ

⇨ খেজুরের গুড় – ¾ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কমবেশি করা যায়)

⇨ এলাচ গুঁড়ো – ½ চা চামচ

⇨ তেজপাতা – ১টি (ঐচ্ছিক, সুগন্ধের জন্য)

পুর তৈরীর পদ্ধতি : 

পাটিসাপটার মূল স্বাদ লুকিয়ে  থাকে এর পুরের মধ্যে। পুর ভালো না হলে পাটিসাপটা কখনোই রাজকীয় হয় না। চুলায় একটি প্যান বসিয়ে তাতে কোরা নারকেল দিন। আঁচ মাঝারি থেকে কম থাকতে হবে। নারকেল একটু নেড়ে নিন, যাতে এর কাঁচা গন্ধ কেটে যায়। এবার খেজুরের গুড় যোগ করুন। গুড় গলতে শুরু করলে নারকেল ও গুড় একসঙ্গে মিশে যাবে। এই পর্যায়ে গুড় দ্রুত গলাতে আঁচ বাড়ালে পুর পুড়ে যেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে নাড়তে থাকতে হবে। যখন মিশ্রণ আঠালো হয়ে প্যানের গা ছাড়তে শুরু করবে, তখন এলাচ গুঁড়ো ও তেজপাতা দিন। পুর না বেশি শক্ত, না বেশি ঢিলা হতে হবে। চামচ তুলে দেখলে যদি মিশ্রণটা দলা বেঁধে নামে, বুঝতে হবে পুর প্রস্তুত। সেসময় চুলা বন্ধ করে তেজপাতা তুলে ফেলুন। পুর ঠান্ডা হতে দিন।

ব্যাটার তৈরি:

একটি বড় বাটিতে চালের গুঁড়ো ও ময়দা নিন। এক চিমটি লবণ যোগ করুন। এবার অল্প অল্প করে দুধ ঢেলে মেশাতে থাকুন। ব্যাটারের ঘনত্ব হবে পাতলা কিন্তু জলজ নয়। অনেকটা পাতলা প্যানকেক ব্যাটারের মতো। ব্যাটার কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে দিন, এতে চালের গুঁড়ো ভালোভাবে ভিজে যাবে এবং পিঠে আরও মসৃণ হবে।

পাটিসাপটা বানানো:

এখন শুরু হবে আসল কাজ। একটি ননস্টিক বা লোহার তাওয়া মাঝারি আঁচে গরম করুন। খুব বেশি গরম হলে পিঠে ছোপ ছোপ হবে। তাওয়া গরম হলে হালকা করে তেল বা ঘি মেখে নিন। অতিরিক্ত তেল হলে পিঠে সুন্দর হবে না। তারপর ব্যাটার তাওয়ার মাঝখানে ঢালুন। দ্রুত তাওয়া ঘুরিয়ে ব্যাটার চারদিকে ছড়িয়ে দিন। ঢাকনা দেওয়ার দরকার নেই। পিঠের উপরিভাগ শুকিয়ে এলে এবং নিচের দিক হালকা রঙ ধরলে বুঝবেন পিঠে তৈরি। আর উল্টাতে হবে না।

পুর দেওয়া ও ভাঁজ:

পিঠের এক পাশ বরাবর ২–৩ টেবিল চামচ পুর দিন। এবার সাবধানে পিঠে গুটিয়ে নিন,তারপর রোলের মতো  করে ভাজ করে নিন। এই সময় হাতের চাপ খুব বেশি হলে পিঠে ছিঁড়ে যেতে পারে। আবার ঢিলা হলে আকৃতি সুন্দর হবে না। নিখুঁত ভাঁজই পাটিসাপটার সৌন্দর্য। তারপর এক এক করে সব পাটিসাপটা তৈরি করুন।

পরিবেশন:

পাটিসাপটা সাধারণত গরম গরমই সবচেয়ে ভালো লাগে। তবে চাইলে হালকা গরম দুধ বা নলেন গুড়ের পাতলা রসের সঙ্গে পরিবেশন করা যায়। অনেক বাড়িতে শীতের সন্ধ্যায় পাটিসাপটার সঙ্গে গরম দুধ দেওয়া হয়। এটি পুরোনো অভ্যাস।


 টিপস:

◑ খেজুরের গুড় না পেলে আখের গুড় ব্যবহার করা যায়, তবে স্বাদে পার্থক্য থাকবে।

◑ ব্যাটার বানানোর সময় একদম শেষ মুহূর্তে দুধ যোগ করলে ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

◑ পিঠে বেশি শক্ত লাগলে পরের ব্যাটারে সামান্য দুধ যোগ করুন।

◑ পুর যদি বেশি শক্ত হয়ে যায়, এক চামচ দুধ দিয়ে আবার হালকা গরম করে নিন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ