ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইকান বাকর: ধোঁয়াটে গ্রিলড ফিশের ঘরোয়া রেসিপি!

ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইকান বাকর: ধোঁয়াটে গ্রিলড ফিশের ঘরোয়া রেসিপি!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মাছ ভাজা, ঝোল বা গ্রিল আমাদের সকলেরই পরিচিত। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলঘেঁষা অঞ্চলে মাছ রান্নার এমন এক পদ্ধতি রয়েছে, যেখানে আগুন, ধোঁয়া আর মশলার অন্যরকম এক ভারসাম্যে তৈরি হয় স্বাদের স্তর। নাম তার ইকান বাকর। বাইরে থেকে দেখলে এটি গ্রিলড মাছ মনে হয়।

ইকান বাকর কী? 
ইকান বাকার হল একটি ইন্দোনেশিয়ান এবং মালয় খাবার। এটি কাঠকয়লা দিয়ে ভাজা মাছ বা অন্যান্য ধরণের সামুদ্রিক খাবার দিয়ে তৈরি করা হয়। ইকান বাকারের আক্ষরিক অর্থ  ইন্দোনেশিয়ান-মালয় ভাষায় "গ্রিল করা মাছ"। ‘ইকান’ অর্থ মাছ, আর ‘বাকর’ অর্থ আগুনে পোড়ানো বা গ্রিল করা। তবে ইকান বাকর মানে শুধু আগুনে মাছ সেঁকা নয়। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে মাছ আগে মশলা ও প্রাকৃতিক উপাদানে মেরিনেট করা হয়, তারপর খোলা আগুন বা চারকোলের ওপর ধীরে ধীরে গ্রিল করা হয়। এই ধীর রান্নার সময় মাছের ভেতরের রস বজায় থাকে, আর বাইরের অংশে তৈরি হয় ধোঁয়াটে, হালকা পোড়া এক স্বাদ। এর স্বাদ সাধারণ ভাজা বা ওভেন-বেকড মাছ থেকে একেবারেই ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কারণ, এতে প্রায়শই বুম্বু , কেকাপ মানি এবং কলা পাতা দিয়ে ঢেকে কাঠকয়লার আগুনে রান্না করা হয়।

ইকান বাকরের ভিন্ন স্বাদের পেছনে তিনটি মূল উপাদান কাজ করে-

☞ মেরিনেশন : মশলা শুধু উপরের স্তরে নয়, ধীরে ধীরে মাছের ভেতরে ঢুকে পড়ে।

☞ খোলা আগুন : সরাসরি তাপ ও ধোঁয়া মাছের প্রোটিনের গঠন বদলে দেয়।

☞ ধীর তাপ প্রয়োগ : বেশি আঁচ নয়, বরং নিয়ন্ত্রিত তাপে রান্না।

এই তিনের সমন্বয়ে তৈরি হয় এমন একটি স্বাদ, যেখানে ঝাল, নোনতা, মিষ্টি আর ধোঁয়ার ভারসাম্য থাকে। TasteAtlas, ২০২৪ সালে ইকান বাকারকে বিশ্বের সেরা সামুদ্রিক খাবারের মধ্যে একটি হিসেবে স্থান দিয়েছে।
আগুনে গ্রিল করার সময় মাছের প্রোটিন ধীরে ধীরে শক্ত হয়, কিন্তু দ্রুত শুকিয়ে যায় না। তাপের কারণে মাছের ভেতরের প্রাকৃতিক চর্বি গলে মাংসের ভেতরেই ছড়িয়ে পড়ে, ফলে টেক্সচার থাকে নরম।মেরিনেশনের মশলা ও লবণ মাছের কোষের ভেতরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই কারণেই ইকান বাকর বাইরের দিকে হালকা পোড়া হলেও ভেতরে বেশ রসালো থাকে।

কোন মাছ ইকান বাকরের জন্য উপযোগী?

ইকান বাকরের জন্য সাধারণত মাঝারি বা বড় আকারের, মাংস শক্ত কিন্তু শুকনো নয়, অতিরিক্ত কাঁটাযুক্ত নয় এমন মাছ বেছে নেওয়া হয়। এই ধরনের মাছ আগুনে গ্রিল করার সময় ভেঙে পড়ে না এবং স্বাদও ধরে রাখতে পারে।

ইকান বাকরের মেরিনেশন: 

ইকান বাকরের আসল রহস্য লুকিয়ে আছে এর মেরিনেশনে। এখানে, মশলা খুবই সঠিক অনুপাতে ব্যবহার করা হয়। মেরিনেশনে সাধারণত থাকে—

⇨ মরিচের পেস্ট।

⇨ রসুন।

⇨ আদা বা অনুরূপ সুগন্ধি উপাদান।

⇨ লবণ।

⇨ সামান্য তেল।

⇨ কখনো টক স্বাদের উপাদান।

এই মিশ্রণ মাছের গায়ে ভালোভাবে মেখে কিছু সময় রেখে দেওয়া হয়, যাতে স্বাদ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।

ঘরে বানানোর উপযোগী ইকান বাকর রেসিপি:

উপকরণ:

⇨ মাঝারি আকারের গোটা মাছ – ১টি

⇨ লাল মরিচ বাটা – ২ চা চামচ

⇨ রসুন বাটা – ১ চা চামচ

⇨ আদা বাটা – ১ চা চামচ

⇨ লবণ – স্বাদমতো

⇨ তেল – ২ টেবিল চামচ

⇨ লেবুর রস – ১ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রণালী:

☞ প্রথমেই মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। গায়ে হালকা করে চিরে দিন, যাতে মশলা ভেতরে ঢুকতে পারে।


☞ মেরিনেশনের জন্য সব মশলা একসঙ্গে মিশিয়ে মাছের গায়ে ভালোভাবে মেখে, অন্তত ৩০–৪৫ মিনিট রেখে দিন।
☞  গ্রিলের জন্য,
চারকোল বা গ্রিল প্যান মাঝারি আঁচে গরম করুন। অতিরিক্ত তাপ নয়, ইকান বাকরে ধৈর্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
☞ মাছ গ্রিলে দিয়ে ধীরে ধীরে উল্টে-পাল্টে রান্না করুন। প্রতিটি পাশ সোনালি ও হালকা পোড়া হলে নামিয়ে নিন।
☞ নামানোর আগে সামান্য লেবুর রস ছিটিয়ে দিলে স্বাদ আরও তীব্র হয়।

পরিবেশন:

ইকান বাকর সাধারণত গরম গরম পরিবেশন করা হয়। সাথে সাধারণ ভাত, হালকা সালাদ, ঝাল বা টক সস থাকতে পারে। তবে ইকান বাকরের নিজস্ব ধোঁয়াটে স্বাদ এতটাই পরিপূর্ণ লাগে যে অন্য কিছু না থাকলেও চলে।
আজকাল অনেকেই গ্রিল প্যান বা ওভেন ব্যবহার করে ইকান বাকর তৈরি করছেন। এতে যদিও খোলা আগুনের স্বাদ পুরোপুরি পাওয়া যায় না, তবুও সঠিক মেরিনেশন আর তাপ নিয়ন্ত্রণে ভালোই  স্বাদ  পাওয়া সম্ভব।

ইকান বাকর ভাজা মাছের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে তেল কম লাগে। অতিরিক্ত চর্বি যোগ হয় না।প্রোটিনের গুণগত মান বজায় থাকে। আগুনে গ্রিল করা হলেও সঠিক তাপে রান্না করলে এটি পুষ্টিকর ও হালকা খাবার হিসেবে ধরা যায়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ