বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক শোকবার্তায় তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বার্তায় জানানো হয়, ফজরের নামাজের ঠিক পরপরই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকাল ঘটে। দলটির পক্ষ থেকে তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়।

এর আগে সোমবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ। তিনি জানান, সংকট কতটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে তা সময়ই বলবে। সে সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসক দলের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হতে দেখা যায় পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে। এর আগে ও পরে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান তাঁর বড় বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, নাতনি জাইমা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কন্যা জাহিয়া রহমান।

সোমবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে হাসপাতালে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন তারেক রহমান। দেশে ফিরে সেদিনই তিনি অসুস্থ মাকে দেখতে হাসপাতালে যান এবং এরপর থেকে নিয়মিত তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছিলেন।

খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ১৯৮৪ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

তিনি তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বল্পমেয়াদে এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিকাশে তাঁর ভূমিকা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

২০০৭ সালের পর থেকে তিনি বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার মুখোমুখি হন। ২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি হন। পরবর্তীতে গুরুতর অসুস্থতার কারণে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।

দেশের রাজনীতিতে এক দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসানের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে জাতীয় অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।