বিএনপির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যুক্ত হন। পরের বছর মার্চে তিনি বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি তাঁকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই বছরের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ এই সময়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত জীবনে কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি।

১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিশ্বের প্রভাবশালী নারীদের তালিকায় তিনি ২৯তম অবস্থানে ছিলেন।

তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় আসে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে। ওই সময় দুটি মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ছয় মাস অন্তর সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান। সেখানে ১১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পরও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় তাকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে খালেদা জিয়া একজন ব্যতিক্রমী ও প্রভাবশালী নেতা। তিনি বলেন, এরশাদ ও শেখ হাসিনার মতো দুই স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে আন্দোলন করেছেন খালেদা জিয়া। একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে উঠে এসে তিনি সফল রাষ্ট্রনায়ক ও রাজপথের প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হন। তাঁর নেতৃত্বগুণ এমন উচ্চতায় পৌঁছেছিল যে দক্ষিণ এশিয়া ও উন্নয়নশীল বিশ্বে এমন নেতৃত্ব খুবই বিরল।