বিকাশ, নগদ ও রকেটে দৈনিক লেনদেন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

বিকাশ, নগদ ও রকেটে দৈনিক লেনদেন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মুঠোফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, আর্থিক লেনদেনেরও একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে এমএফএস-এর মাধ্যমে এক মাসে মোট ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা দৈনিক গড়ে ৫ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকার সমান।

এসব লেনদেনের মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজেরাই সহজে টাকা জমা, উত্তোলন, স্থানান্তর, কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, টিকিট ক্রয় এবং সরকারি ভাতা ও বৃত্তি গ্রহণ করতে পারছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়িক লেনদেন, প্রবাসী আয় গ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রেও এমএফএস প্ল্যাটফর্মগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে এমএফএস-এর মাধ্যমে টাকা জমা হয়েছে ৪৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা এবং উত্তোলন হয়েছে ৫৫ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া গ্রাহকদের মধ্যে টাকা স্থানান্তর হয়েছে ৪৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা, কেনাকাটায় ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা এবং সরকারি ভাতা বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা। মুঠোফোন রিচার্জ ও পরিষেবা বিল পরিশোধের পরিমাণও যথাক্রমে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ও ২ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা।  

এমএফএস-এর মাধ্যমে লেনদেনের এই বিশাল প্রবাহ শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীলই করছে না, বরং অবৈধ অর্থায়ন ও ঘুষের মতো অপরাধ কমাতেও ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা। কারণ, এসব লেনদেনের প্রতিটি তথ্য রেকর্ড করা থাকে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।  

বর্তমানে দেশে এমএফএস-এর নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৯৯ জন, যার মধ্যে সক্রিয় হিসাবধারী ৮ কোটি ৮৫ লাখ। এ ছাড়া সারা দেশে এমএফএস সেবা প্রদানকারী এজেন্টের সংখ্যা ১৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৭৯টি।  

এমএফএস খাতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বিকাশ। প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি, এবং প্রতিদিন এ প্ল্যাটফর্মে গড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, "দেশের মানুষের মধ্যে মুঠোফোনে লেনদেনের অভ্যস্ততা ও আস্থা বাড়ছে। প্রবাসী আয় গ্রহণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লেনদেনেও আমরা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখছি।"  

এমএফএস খাতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নগদ। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন ইতিমধ্যে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নগদ শুধু টাকা পাঠানো ও গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, মুঠোফোন রিচার্জ, টাকা জমানো এবং ঋণ গ্রহণের মতো নানা ধরনের সেবাও প্রদান করছে। বিশেষ করে উৎসব ও পার্বণে এ সেবার ব্যবহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।  

এমএফএস-এর মাধ্যমে এখন শুধু সাধারণ গ্রাহকই নয়, বড় করপোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, শিল্পমালিক এবং সরকারি সংস্থাগুলোও সুবিধা পাচ্ছে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রির টাকা এমএফএস-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করছে, যা কালেকশন সেবা নামে পরিচিত। এ ছাড়া শ্রমিকদের বেতন প্রদান, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় এবং বিদেশি সংস্থার তহবিল বিতরণের ক্ষেত্রেও এমএফএস প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।  

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ও ডাক বিভাগের সেবা নগদসহ মোট ১৩টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এমক্যাশ, মাইক্যাশ ও ট্যাপ।  

দেশে মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে, যা পরে রকেট নামে পরিচিতি পায়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ এমএফএস সেবা চালু করে।  

এমএফএস-এর এই ব্যাপক প্রসার শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীলই করছে না, বরং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমএফএস-এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো গেলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।


সম্পর্কিত নিউজ