স্পেনে আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ঊর্ধ্বমুখী

স্পেনে আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ঊর্ধ্বমুখী
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

স্পেনে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ার জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতা ও স্বীকৃতির নিম্ন হারকে "অমানবিক ও কঠোর" বলে অভিহ্য করেছেন অভিবাসন অধিকারকর্মীরা। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে স্পেনে এক লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৬টি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে— যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে আবেদন বৃদ্ধির বিপরীতে অনুমোদনের হার মাত্র ১৮.৫ শতাংশ, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড় ৪২ শতাংশের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

সেনেগালের কাসামান্স অঞ্চল থেকে আসা ওসমান তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, "ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর পর আমাকে মূল ভূখণ্ডে আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু মাদ্রিদে গিয়ে আবার তেনেরিফেই আবেদন করার নির্দেশ পাই।" এমন বিভ্রান্তিকর প্রক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন হাজারো আশ্রয়প্রার্থী।

আরেক সেনেগালিজ নাগরিক আবদুল্লাহ ২০২৪ সালের আগস্টে মাদ্রিদের কাছে একটি অভিবাসন কেন্দ্রে পৌঁছালেও ছয় মাস পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আবেদন জমা দিতে সক্ষম হন। "প্রতিদিনই নতুন মানুষ আসছেন, কিন্তু প্রক্রিয়া এত ধীর যে কেউই সময়মতো সেবা পাচ্ছেন না," যোগ করেন তিনি।

২০২৩ সালে স্পেনে আশ্রয় অনুমোদনের হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ১৮.৫ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে এই হার দেশভেদে ভিন্ন— মালি, ভেনেজুয়েলা, সোমালিয়া ও সুদানের নাগরিকদের ৯০ শতাংশের বেশি আবেদন গৃহীত হলেও কলম্বিয়া, পেরু বা সেনেগালের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই হার নগণ্য।

"স্পেন মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নাগরিকদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ব্যক্তিগত নিপীড়ন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খুব কমই বিবেচনা করা হয়," বলেন মাদ্রিদভিত্তিক আইনজীবী আনা আলানিওন।

কমপ্লুতেন্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এলিসা ব্রেয়া ব্যাখ্যা করেন, "স্পেনের ইতিহাসে কখনোই শরণার্থী গ্রহণে উদার নীতি ছিল না। ফ্রাঙ্কো শাসনের অবসানের পর ৯০-এর দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পর বাধ্যতামূলকভাবে আশ্রয় আইন চালু করা হয়। বর্তমানে সরকার শ্রম অভিবাসনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।"

আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য 'আরাইগো' নামে একটি বিশেষ রেসিডেন্স পারমিট চালু রয়েছে, যার আওতায় স্পেনে দুই থেকে তিন বছর অনিয়মিতভাবে বসবাসের প্রমাণ দিতে হয়। ২০২৫ সালের ২০ মে থেকে চালু হতে যাচ্ছে 'আরাইগো দে লা সেগুন্ডা ওপোরতুনিদাদ'— যা আশ্রয় প্রত্যাখ্যাতদের জন্য একটি নতুন পথ খুলে দিতে পারে।

তবে অধিকারকর্মী মরিসিও ভালিয়েন্তে সতর্ক করেন, "আশ্রয় প্রক্রিয়ায় কাটানো সময় 'আরাইগো'র সময়ের সাথে যুক্ত হয় না। ফলে অনেকেই আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।"

মালির ফোফানার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নাগরিকরা তুলনামূলকভাবে দ্রুত সুরক্ষা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, "আমি ২০২৩ সালে রিফিউজি স্ট্যাটাস পেয়েছি। এখন আমার জীবন স্থিতিশীল। স্পেন আমার নতুন ঘর।"

স্পেনের আশ্রয় ব্যবস্থা জটিলতা ও স্বচ্ছতার অভাবের কারণে সমালোচনার মুখে। যদিও নতুন নীতিমালা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে, তবুও অধিকারকর্মীরা দাবি করছেন— প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও বৈষম্য দূর করা না হলে হাজারো আশ্রয়প্রার্থী অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে থাকবেন।


সম্পর্কিত নিউজ