প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: দু’বারের বেশি নয়, সংবিধানের বাধ্যবাধকতা!

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: দু’বারের বেশি নয়, সংবিধানের বাধ্যবাধকতা!
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দু’বারের বেশি না রাখার প্রস্তাব করেছে। এছাড়াও, সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশও করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের নয় পৃষ্ঠার সুপারিশ জমা দেয়। এই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সংক্রান্ত সুপারিশ

১. মেয়াদ সীমাবদ্ধতা: সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দু’বারের মধ্যে সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. রাষ্ট্রপতি পদে অযোগ্যতা: দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৩. দ্বৈত দায়িত্ব বন্ধ: একই ব্যক্তি যেন দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা—এই তিন দায়িত্ব একসাথে না নিতে পারেন, তার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত সুপারিশ

১. যোগ্যতা: দলনিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও সুনামধন্য ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. নির্বাচকমণ্ডলী: জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংসদ সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সুপারিশ

১. সুবিধা পর্যালোচনা: সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি, আবাসিক প্লট, প্রটোকল ও ভাতা পর্যালোচনা এবং সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. আচরণ আইন: ‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের বাৎসরিক সম্পদের হিসাব প্রদান এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব ঘোষণা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৩. স্থানীয় সরকারে জড়িত থাকা বন্ধ: সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারণ এবং উচ্চ আদালতের রায় কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম সংক্রান্ত সুপারিশ

১. পর্যবেক্ষণ: নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সারাদিন ভোটকেন্দ্রে থাকার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে ভোটকক্ষে সার্বক্ষণিক থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না।
২. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক: আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সুস্পষ্ট করা এবং সরকারের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৩. সাংবাদিকদের সুবিধা: নির্বাচন কমিশনের বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিকদের সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ এবং দিনে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি সংক্রান্ত সুপারিশ

১. প্রচারণা: ব্যানার, তোরণ ও পোস্টারের পরিবর্তে লিফলেট, ভোটার-প্রার্থী মুখোমুখি অনুষ্ঠান, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন এবং সরকারি গণমাধ্যমে সম-সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ মেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার বিধান করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৩. রাজনৈতিক দলের আচরণবিধি: ১৯৯০ সালের তিনজোটের রূপরেখার মতো রাজনৈতিক দলের জন্য আচরণবিধি প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের এই প্রস্তাবনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


সম্পর্কিত নিউজ