ঈদুল ফিতরে মুসলিমদের জন্য বিশেষ আমল

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে আনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে ঈদ শুধু আনন্দ-উৎসবের জন্যই নয়, বরং এটি ইবাদতের মাধ্যমেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি বিশেষ সুযোগ।
ঈদের দিন কী কী করা উচিত এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরা হলো—
ঈদের রাতে ইবাদতের গুরুত্ব
ইসলামে ঈদের রাতকে বিশেষভাবে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই তারাবির নামাজ না থাকলেও এই রাতে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ও দোয়া করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে, তার অন্তর সেই দিনও জীবিত থাকবে, যেদিন অন্যদের অন্তর মরে যাবে।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)
ঈদের সকালে করণীয়
ঈদের দিন নামাজ আদায়ের পূর্বে বিশেষ কিছু সুন্নত আমল রয়েছে, যেমন—
-
পবিত্রতা রক্ষা করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা
-
সুগন্ধি ব্যবহার করা
-
মিষ্টিজাতীয় কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া
-
ঈদগাহে যাওয়ার সময় ‘তাকবিরে তাশরিক’ পাঠ করা
রাসুল (সা.) প্রতি ঈদের দিন নামাজের আগে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করতেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ১১০৬)
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। সাহাবিরা একে অপরকে বলতেন, “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”, যার অর্থ— আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের নেক আমল কবুল করুন। (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ১৭৫৮৯)
ঈদের দিনে যে বিষয়গুলো পরিহার করা উচিত
অন্য ধর্মের সংস্কৃতির অনুসরণ থেকে বিরত থাকা
ইসলামে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুসরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯৮৯)
উপযুক্ত পোশাক পরিধান করা
নারী ও পুরুষের পোশাকের পার্থক্য রক্ষা করা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেছেন, “মহিলার পোশাক পরিধানকারী পুরুষ এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীর ওপর অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৯৮)
অশ্লীলতা ও অনৈতিক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলা
ঈদের দিন আনন্দের নামে অনৈতিকতা, অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে কোরআনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “এক শ্রেণির লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার জন্য অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ
ঈদের দিন রোজা রাখা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেছেন, “ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা পালন করা নিষিদ্ধ।” (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)
ঈদুল ফিতর শুধু আনন্দের দিন নয়, বরং এটি শোকরিয়া আদায়েরও দিন। এদিন ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত এবং অনৈতিক ও বিদআতি কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামী বিধান মেনে ঈদ উদযাপনই প্রকৃত আনন্দ ও বরকতের উৎস।