নিয়ন্ত্রক সংস্থা অভিযোগ করেছে, অ্যাপলের অ্যাপ ট্র্যাকিং ট্রান্সপারেন্সি (ATT) ফিচারটি ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং তা ‘অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক’। এছাড়াও, এটি তৃতীয় পক্ষের প্রকাশকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অ্যাপলকে জরিমানার পাশাপাশি সাত দিনের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।

এটিটি ফিচারটি ২০২১ সালে চালু হয়েছিল, যা ব্যবহারকারীদের অন্যান্য অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ট্র্যাকিং করার জন্য সম্মতি নিতে বাধ্য করে। ব্যবহারকারীরা যদি অনুমতি না দেন, তাহলে ওই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না। এটি লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, অ্যাপল এই ফিচারটি ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব বিজ্ঞাপন পরিষেবাকে প্রতিযোগীদের তুলনায় এগিয়ে রাখছে। ফ্রান্সের প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষের মতে, এটিটি ফিচারটি তৃতীয় পক্ষের অ্যাপগুলোর জন্য অতিরিক্ত সম্মতি জানানোর বাধ্যতামূলক করে তুলেছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে।

তদন্তে আরো উঠে এসেছে, অ্যাপলের সিস্টেম ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন ট্র্যাকিং থেকে বের হওয়ার জন্য দুইবার সম্মতি দিতে বাধ্য করে। এতে ফিচারটির নিরপেক্ষতা ব্যাহত হচ্ছে এবং অ্যাপ প্রকাশক ও বিজ্ঞাপন পরিষেবা প্রদানকারীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট প্রকাশকরা এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, কারণ তারা বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞাপন খাতের প্রতিক্রিয়া
বিজ্ঞাপন খাতের বিভিন্ন সংগঠন যেমন অ্যালায়েন্স ডিজিটাল, ইন্টারনেট অ্যাডভার্টাইজিং সিন্ডিকেট ও মিডিয়া কনসাল্টিং অ্যান্ড বাইয়িং কম্পানিজ ইউনিয়ন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “এটি অনলাইন মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন খাতে সক্রিয় ৯ হাজার কম্পানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।”

ফ্রান্সের প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষের প্রধান বেনোয়া কোয়েরে বলেন, “১৫০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা আমাদের কাছে যুক্তিসংগত ও উপযুক্ত মনে হয়েছে। অ্যাপলের রাজস্ব বিবেচনায় নিলে এই পরিমাণ অর্থ তুলনামূলকভাবে কম।”

অ্যাপলের প্রতিক্রিয়া
অ্যাপল এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা আজকের সিদ্ধান্তে হতাশ, তবে ফ্রান্সের প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ এটিটিতে কোনো নির্দিষ্ট পরিবর্তন আনতে বলেনি।” তারা আরো বলেছে, এটিটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ দেয় এবং এটি একটি সহজবোধ্য ও স্বচ্ছ পদ্ধতি। অ্যাপল জানিয়েছে, এটি বিশ্বব্যাপী ভোক্তা, গোপনীয়তা সংরক্ষণকর্মী ও ডেটা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে।”

এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকদের কোনো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ধরনের জরিমানার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

জার্মানি, ইতালি, রুমানিয়া ও পোল্যান্ডের কর্তৃপক্ষও ATT-সংক্রান্ত তদন্ত শুরু করেছে, যেটিকে অ্যাপল গোপনীয়তা সুরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে প্রচার করে থাকে। এই ঘটনা বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকদের সম্পর্কের আরেকটি কঠিন মুহূর্ত চিহ্নিত করছে।