বিসিএস সংস্কারে চাকরিপ্রার্থীদের সুপারিশ: পিএসসির নতুন দিশা!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিসিএসের দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে শিক্ষার্থীরা এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বিসিএস প্রক্রিয়া শেষ করার প্রস্তাব করেছেন। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, নভেম্বরে বিসিএস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ডিসেম্বরে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ, ফেব্রুয়ারিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, মে-জুন মাসে লিখিত পরীক্ষা, সেপ্টেম্বরে মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে চূড়ান্ত নিয়োগের মাধ্যমে এক বছরে বিসিএস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। চাকরিপ্রার্থীরা এই রূপরেখা উপস্থাপন করে বিসিএস প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিসিএসের জটিলতা, ক্যাডার-নন ক্যাডার নিয়োগে সমস্যা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা এবং এর সমাধানের সুপারিশ নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এই বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। গত বৃহস্পতিবার পিএসসি চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের একটি খোলামেলা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় উঠে আসা সমস্যাগুলো নিয়ে পিএসসি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
পিএসসির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, "চাকরিপ্রার্থীরা পিএসসিতে কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হন, তা নিয়ে সরাসরি আলোচনার কোনো ব্যবস্থা আগে ছিল না। এবার আমরা সেই আয়োজন করেছি। তাদের কথা ও সমস্যাগুলো শুনেছি এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যৌক্তিক দাবিগুলো আলোচনা করে সমাধান করা হবে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় আলোচনা ছিল।"
বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপ—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষার্থীরা। 'কেমন বিপিএসসি দেখতে চাই এবং কী কী সংস্কার প্রয়োজন' শীর্ষক 'অংশীজনের ভাবনা' অনুষ্ঠানে তারা এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিএসসির প্রধান কার্যালয়ে দিনব্যাপী এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সংস্কার প্রস্তাব:
প্রার্থীরা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের মতে, বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি বিসিএসে কতজন প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি পাস করানো হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে কাট মার্কস উল্লেখ করে প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর খুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো যেতে পারে। এছাড়া, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শেষে প্রশ্নের একটি খসড়া উত্তরপত্র পিএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করে সাত দিনের সময় দেওয়া যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে কোনো প্রশ্নের উত্তর ভুল হলে পরীক্ষার্থী রেফারেন্সসহ পিএসসিকে ই-মেইল করতে পারবেন। এরপর পিএসসি একটি চূড়ান্ত উত্তরপত্র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ওএমআর চেকিং শুরু করতে পারে। প্রশ্নপত্রের ওপর রাফ করার অনুমতি দেওয়া এবং পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের দিয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
মৌখিক পরীক্ষায় সংস্কার প্রস্তাব:
মৌখিক পরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে প্রার্থীরা বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের মতে, প্রতিটি ভাইভা বোর্ডে একজন করে মনোবিজ্ঞানী রাখা উচিত। ভাইভার দিন সকালে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে বোর্ড বণ্টন করা যেতে পারে। ভাইভা বোর্ডের সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রতিটি বোর্ডের মূল্যায়ন পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক ও একক করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রতিটি পরীক্ষার্থীর জন্য সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ, দুই শিফটে ভাইভা নেওয়া বা লাঞ্চের পর ভাইভা অনুষ্ঠিত হলে রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে। ঢাকার বাইরের কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের সর্বদা শেষে ভাইভা নেওয়ার প্রথা বন্ধ করা, আলাদা বিল্ডিং বা ফ্লোরে ভাইভার ব্যবস্থা করা এবং সেখানে নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহারের প্রস্তাবও উল্লেখযোগ্য।
লিখিত পরীক্ষায় সংস্কার প্রস্তাব:
লিখিত পরীক্ষায়ও বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মতে, লিখিত টেকনিক্যাল পরীক্ষার আগে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের গ্যাপ দেওয়া উচিত। লিখিত পরীক্ষার আগে কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ রাখা এবং পাস নম্বর ৪৫০ এর পরিবর্তে কত গুণ পরীক্ষার্থীকে পাস করানো হবে, তা আগেই ঘোষণা করা দরকার। বাংলা পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১০০ নম্বরের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে মুখস্থ রচনার চেয়ে বিশ্লেষণধর্মী ও সৃজনশীল লেখার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের পিএসসিতে বসে খাতা যাচাই করার প্রস্তাবও উল্লেখযোগ্য।
বিসিএসের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে প্রস্তাব:
বিসিএসের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করার প্রস্তাব দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের মতে, নভেম্বরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ডিসেম্বরে আবেদন শেষ, ফেব্রুয়ারিতে প্রিলিমিনারি, মে-জুনে লিখিত, সেপ্টেম্বরে ভাইভা এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে নিয়োগের মাধ্যমে এক বছরে বিসিএস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রস্তাব:
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, পরীক্ষাকেন্দ্রে নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার, একটি ডেডিকেটেড সেল গঠন এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কঠোর নজরদারির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো পিএসসির কাছে উত্থাপন করা হয়েছে এবং পিএসসি ইতিমধ্যে এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে। চাকরিপ্রার্থীদের আশা, এই সংস্কারগুলোর বাস্তবায়ন হলে বিসিএস প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও ন্যায্য হবে।