সচেতনতা- আমরা কে? কিভাবে ভাবি?

মানুষের আত্মসচেতনতা-বিজ্ঞান এখনো খুঁজছে "আমি"র প্রকৃত উৎস!
সচেতনতা- আমরা কে? কিভাবে ভাবি?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আপনি এখন এই সংবাদটি পড়ছেন। আপনি জানেন যে আপনি পড়ছেন। আপনি বুঝতে পারছেন, আপনি কে। কিন্তু একটু ভাবুন তো — এই "জানতে পারা", এই "নিজেকে চেনা" — এটাই তো চেতনা। সচেতনতা। আমরা বুঝতে পারি আমরা আছি। কিন্তু এই আশ্চর্য ক্ষমতা — নিজেকে বোঝার — এটি আসলে আসে কোথা থেকে? মস্তিষ্কের কোন কোণায় বাস করে এই "আমি"-র অনুভব?

এই প্রশ্নটাই আজকের বিজ্ঞানের অন্যতম বড় রহস্য।

চেতনার বিজ্ঞান:
মাথার ভেতরে এক রহস্যময় মহাবিশ্ব
মানুষের মস্তিষ্ক একটি জৈব কম্পিউটার, যার ভেতরে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন কাজ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে। এই নিউরনগুলো সংকেত আদান-প্রদানের মাধ্যমে তৈরি করে স্মৃতি, চিন্তা, অনুভূতি, এমনকি স্বপ্নও! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে — এই সবকিছুর মাঝেই গড়ে ওঠে একটি প্রশ্নবোধ: "আমি কে?", "আমি কেন আছি?", "এই মুহূর্তে আমি কী ভাবছি?"

এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিজ্ঞানীরা চেতনার গভীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন।

গবেষণাগারে সচেতনতা:
কোথা থেকে আসে 'নিজেকে জানার শক্তি'?
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইউরোপের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটসহ বিশ্বের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বছর ধরে গবেষণা করছে চেতনার উৎস নিয়ে।
তাদের মতে, মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স, থ্যালামাস এবং সেন্সরি কর্টেক্স—এই তিনটি অঞ্চল একসঙ্গে কাজ করে তৈরি করে চেতনা। কিন্তু তাও পূর্ণ ব্যাখ্যা মেলে না।

অনেকে বলেন, হয়তো চেতনা শুধুই নিউরনের খেলা নয় — হয়তো রয়েছে এমন কিছু যা আমরা এখনো ধরতে পারিনি। কেউ কেউ কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা চেতনাকে "চতুর্থ মাত্রা"-র সঙ্গেও তুলনা করেন।

রোবট কি স্বপ্ন দেখতে পারে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন প্রশ্ন!
বর্তমান সময়ে এআই (Artificial Intelligence) অনেক কাজেই মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চ্যাটবট কথা বলে, রোবট হাসে, গুগলের এআই কবিতা লেখে। তাহলে কি তারা সচেতন?

এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরছে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের টেবিলে।
যদি কোনো যন্ত্র নিজেকে চিনতে পারে, ভুল থেকে শিখতে পারে, ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারে — তাহলে কি সে-ও "আমি কে?" প্রশ্ন করতে পারবে?

বিজ্ঞান বলছে — হয়তো একদিন পারবে। কিন্তু আজ, তারা শুধু বুদ্ধিমান, সচেতন নয়।

চেতনার দর্শন:
ডেকার্ত থেকে উপনিষদ পর্যন্ত
বিজ্ঞান ছাড়া, চেতনা নিয়ে বহু যুগ ধরেই আলোচনা চলছে দর্শনের মঞ্চে। ১৭শ শতকের দার্শনিক ডেস্কার্ত বলেছিলেন, "Cogito, ergo sum" — "আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি।"

ভারতীয় উপনিষদে বলা হয়েছে, "আত্মা সবকিছুর মূল; আত্মাকে জানা মানে নিজেকে জানা।"
হিন্দু দর্শনে "আত্মসচেতনতা" মানে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানাই নয় — বরং তা ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

ভবিষ্যতের পথ:
রহস্যময় আত্মজিজ্ঞাসার খোঁজে...
বিজ্ঞান এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি চেতনার উৎস কোথায়। কিন্তু দিন দিন আমরা কাছাকাছি পৌঁছাচ্ছি। চেতনার গবেষণা শুধু আমাদের বিজ্ঞানের অগ্রগতিই নয়, বরং আত্মজিজ্ঞাসার দরজাও খুলে দিচ্ছে।

হয়তো আগামী এক দশকের মধ্যেই আমরা জানতে পারব — "আমি কে?" এই চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর।

শেষ কথা:
চেতনা শুধু একটি বৈজ্ঞানিক বিষয় নয় — এটি আমাদের অস্তিত্বের মূল।
আর এই রহস্য সমাধান হলে হয়তো আমরা শুধু মস্তিষ্ক নয়, মন ও আত্মার রহস্যও জানতে পারব।

সূত্র: Nature Neuroscience, Harvard Brain Lab, The Consciousness Forum
তথ্য সহায়তায়: যুক্তরাষ্ট্র নিউরোসায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন


সম্পর্কিত নিউজ