নারী পাঁজরের হাড়ের মতো—বাঁকাভাবেই সুন্দর
নবীজীর অসিয়ত ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী সমাজ সম্পর্কে বিশেষ অসিয়ত করে গেছেন, যাতে তিনি পুরুষদেরকে নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও সহনশীলতার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সাথে লেন-দেন করা বিষয়ে বলেছেন - "আমি তোমাদের যে অসিয়ত করি তা তোমরা কবুল করো,আর তা হলো তোমরা নারীদের কল্যাকামী হও। নারীরা জ্ঞানে দুর্বল, দীনের বিষয়ে দুর্বল, চিন্তায় দূর্বল এবং যাবতীয় সব বিষয়ে তারা দুর্বল। কারণ, তাদেরকে পাঁজরের হাঁড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তা এভাবে যে -আল্লাহ আদম আলাইহিস সালামকে পিতা মাতা ছাড়া মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি কুন বলেছেন আর হয়ে গেছেন। আর আল্লাহ যখন তার থেকে এ সৃষ্টিকে বিস্তৃত করতে চাইলেন, তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করলেন। তিনি তাকে তার পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর বাঁকা হাড়ের অবস্থা হলো যদি তুমি তা থেকে বাঁকা অবস্থায় রেখে উপকার লাভ করতে চাও করতে পারবে, আর যদি তাকে তুমি সোজা করতে যাও তা ভেঙ্গে যাবে। এ সব নারীরাও তাই। বাঁকা অবস্থায় যদি মানুষ তাদের উপভোগ করতে চায়, উপভোগ করবে; যা সহজ হয় তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। আর যদি সোজা করতে চায়, তবে তা সোজা হবে না এবং তা সম্ভব নয়। সে যদিও দীনের বিষয়ে সোজা হবে, তবে সে তার স্বভাবে চাহিদা বিষয়ে সোজা হবে না। সে প্রতিটি বিষয়ে কখনো তার স্বামী ইচ্ছা অনুযায়ী হবে না। বরং তার থেকে অনিয়ম, ও ত্রুটি হবেই। তাতে যে ত্রুটি রয়েছে তুমি তা নিয়েই তার সাথে থাকবে। তুমি যদি তাকে ঠিক করতে যাও, তাকে তুমি ভেঙ্গে ফেলবে। আর তার ভেঙ্গে ফেলা হলো তাকে তালাক দেওয়া। এর অর্থ হলো, যদি তোমার চাওয়া অনুযায়ী তাকে সংশোধন করার ইচ্ছা করো, তা সম্ভব হবে না। তখন তুমি তার কাছ থেকে কষ্ট পাবে এবং তাকে তালাক দেবে। " -(বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় অনেক আলেম বলেছেন, এখানে 'বাঁকা হাড়' বলতে নারীর স্বভাবগত ভিন্নতা, কোমলতা ও সংবেদনশীলতা বোঝানো হয়েছে। পুরুষের উচিত ধৈর্য, সহনশীলতা ও ভালোবাসা দিয়ে নারীদের সঙ্গে আচরণ করা।
কুরআনের নির্দেশনা -
নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কুরআনেও গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
"তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সুমধুর আচরণ করো।"
— (সূরা আন্-নিসা: ১৯)
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন স্বামীগণ স্ত্রীদের সাথে সম্মান ও সদ্ভাবে জীবনযাপন করে। এটি শুধু আবেগ বা ভালোবাসার কথা নয়, বরং সামাজিক ন্যায় ও মানবাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি -
ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়ের মর্যাদা সমানভাবে নিশ্চিত করেছে, তবে তাদের স্বভাবগত পার্থক্যকে স্বীকার করেছে। নবীজীর অসিয়তের মূল শিক্ষা হলো—নারীর ভিন্নতাকে বুঝে, সহনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনা করা। প্রতিটি নারীর মধ্যে কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকবেই, তবে তা সহ্য করাই প্রকৃত সদ্ব্যবহার।
ইসলামের এই শিক্ষা শুধু পারিবারিক শান্তি নয়, সমাজে সাম্য ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। বর্তমান সমাজে যেখানে পারিবারিক কলহ ও বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাচ্ছে, সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই অসিয়ত আমাদের জন্য পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। আমাদের উচিত তাঁর এই শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা এবং পারস্পরিক সহানুভূতির মাধ্যমে একটি আদর্শ পরিবার গঠন করা।