বৈসাবিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের রঙিন বর্ষবরণ উদযাপন

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসাবি’ শুক্রবার (১০ এপ্রিল) রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় শুরু হয়েছে। এই উৎসবটি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কাছে ‘বৈসু’, মারমা সম্প্রদায়ের কাছে ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের কাছে ‘বিজু’ নামে পরিচিত। এই তিনটি উৎসবের নামের প্রথম অক্ষর নিয়েই বৈসাবি নামটির উৎপত্তি।
উৎসবটির আয়োজন ঘাগড়া এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় ঘাগড়া কলেজ মাঠে শুরু হয়। রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য লুৎফুন্নেসা বেগম সকালে ফিতা কেটে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাউখালী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আতিকুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বৈসাবি অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অর্জুন মনি চাকমা সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
দিনব্যাপী উৎসবের শুরুতে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় চাকমা গান ও নৃত্যের আয়োজন করা হয়। এরপর ঘাগড়া কলেজ মাঠ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য র্যালি। র্যালিটি রাঙামাটি প্রধান সড়ক ধরে ঘাগড়া বাজার ঘুরে পুনরায় কলেজ মাঠে শেষ হয়। র্যালির শেষে অতিথি ও দর্শকদের জন্য স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পাজন’ পরিবেশন করা হয়।
বিকেলে আয়োজন করা হয় চাকমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘ঘিলা খেলা’ এবং শিক্ষামূলক চাকমা নাটিকার। সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। এতে স্থানীয় শিল্পীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে তোলেন।
আয়োজন কমিটির সভাপতি অর্জুন মনি চাকমা বলেন, “বর্ষবরণ আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উৎসব। আমরা চাই সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে মিশে সম্প্রীতি রক্ষা করে বসবাস করে যেতে। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে সম্প্রীতির মিলবন্ধনের বিষয়ে অবহিত করতে চাই।”
চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় এই উৎসবটি তিন দিন ধরে পালন করেন। চৈত্রের শেষ দুই দিন এবং বৈশাখের প্রথম দিনে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। চৈত্রের শেষ দিনটি এই উৎসবের মূল আকর্ষণ। এই দিনে ঘরে ঘরে পাঁচ প্রকারের সবজি দিয়ে বিশেষ খাবার ‘পাজন’ রান্না করা হয়। তারা বিশ্বাস করেন, এই পাজনের দৈব গুণাবলি আগত বছরের অসুস্থতা ও দুর্ভাগ্য দূর করবে। এছাড়াও তরুণীরা পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেন।
এই উৎসব মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিশেষ ঝলক পাওয়া যায়। এই বৈসাবি উৎসব নতুন বছরের শুভারম্ভের পাশাপাশি সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা বয়ে নিয়ে আসে।