আধুনিক জীবনের এক নীরব সংকট

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত হলেও, তাদের মাঝেই দিনে দিনে বাড়ছে এক উদ্বেগজনক অদৃশ্য মানসিক সমস্যা — স্মৃতিভ্রান্তি বা মনে না থাকার প্রবণতা। চিকিৎসকদের মতে, এটি এখন আর কেবল বয়সজনিত বিষয় নয়; বরং তরুণরাও এতে আক্রান্ত হচ্ছেন নিয়মিতভাবে।
বস্তুত, স্মৃতিভ্রান্তির পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, অনিয়মিত ঘুম এবং প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে ভুল স্মৃতি বা 'স্মৃতিভ্রম'-এর।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সামিনা হক বলেন, "আমরা এখন এমন অনেক তরুণ রোগী পাচ্ছি, যারা সামান্য কথাও মনে রাখতে পারছে না। পরীক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের সময় তারা খেই হারিয়ে ফেলছে। এটি নিছক ভুলে যাওয়া নয়, এটি একটি গভীর মানসিক ক্লান্তির প্রকাশ।"
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছুটা স্মৃতি দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক হলেও, অল্প বয়সে এমন সমস্যা বাড়ছে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেও। মোবাইল ও ইন্টারনেট নির্ভরতায় মানুষ তথ্য মনে রাখার পরিবর্তে নির্ভর করছে ডিজিটাল ডিভাইসের উপর।
স্মৃতিভ্রম কি?
স্মৃতিভ্রম হলো এমন এক মানসিক অবস্থা যেখানে মানুষ কোনো ঘটনাকে ভুলভাবে মনে রাখে, বা এমন কিছু বিশ্বাস করে যা আদৌ ঘটেনি। এটি নানা কারণে হতে পারে — যেমন ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত চাপ, মাদক সেবন কিংবা ট্রমা।
প্রতিকার কী?
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, "স্মৃতিভ্রান্তি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করলে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় পরিণত হতে পারে। চাপ, উদ্বেগ ও ঘুমের ঘাটতির কারণে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যার ফলে মানুষ সাম্প্রতিক তথ্য মনে রাখতে ব্যর্থ হয়।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনই হতে পারে স্মৃতিভ্রান্তির হাত থেকে মুক্তির উপায়:
১। পর্যাপ্ত ঘুম: দিনে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্কের জন্য জরুরি।
২। মানসিক প্রশান্তি: নিয়মিত মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম মানসিক চাপ হ্রাসে সহায়ক।
৩। সন্তুলিত খাদ্য: বাদাম, মাছ, শাকসবজি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
৪। সামাজিকতা ও বই পড়া: মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বজায় রাখতে নিয়মিত আলোচনায় অংশগ্রহণ ও বই পড়া অত্যন্ত উপকারী।
৫। ডিজিটাল ডিটক্স: দিনে কিছু সময় মোবাইল ও স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে বলেন, "স্মৃতিভ্রান্তিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। নিয়মিত ভুলে যাওয়া যদি দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।"
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সচেতন থাকুন, স্মৃতি হারানোর আগেই এগিয়ে যান।